ইনসাইড থট

ফেরিঘাটে ছাত্র মৃত্যু ও জজ মিয়া নাটক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/07/2019


Thumbnail

লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর প্রাণ, সম্ভ্রম আর অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাওয়া আমাদের এই স্বাধীন দেশের আছে একটা সংবিধান, যাতে বলা আছে এই দেশটা কার আর কীভাবে চলবে এই দেশ। আমাদের দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(১) স্পষ্ট করে বলছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক এর জনগণ। কিন্তু আরও একটি কথা আমরা জানি যে সরকারী দপ্তরের কর্মীরা বলেন যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, নির্দিষ্ট কোন সরকারের না। সাধারণত ৫ বছর পরে পরে সরকার বদল হলেও সরকারী কর্মীরা বদল হয় না, কারণ তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, অবসরের বয়স সীমা পর্যন্ত তারা কাজ করতে পারেন রাষ্ট্রপতির সন্তুস্টিক্রমে।

আমাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ করা কর্মীদের বেতন ভাতা আমরা দিই কারণ আমরা ঐসকল প্রতিষ্ঠানের মালিক। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে মালিক তাঁর অধীনের কর্মরত কর্মীদের বেতন দেবেন, এটা তাঁর দায়। তাই মর্যাদার দিক বিবেচনায় মালিক- কর্মীর ক্ষেত্রে মালিকের প্রাধান্য থাকে।

আমাদের সংবিধানে আছে বাংলাদেশের জনগণ (ধনী গরিব নির্বিশেষে) প্রজাতন্ত্রের মালিক, মানে বাংলাদেশের মালিক। তাহলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী/কর্মকর্তাগণ এর নিয়োগকর্তা বা মালিক হচ্ছে দেশের জনগণ। তাদের দেয় পরোক্ষ আর প্রত্যক্ষ ট্যাক্সের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী/কর্মকর্তাগণ বেতন ভাতা ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হয় একটা বিশেষ ব্যবস্থায়। বাংলাদেশের সংবিধানের আলকেই এটা করা হয়।

সম্প্রতি প্রজাতন্ত্রের ভিআইপি মর্যাদার এক কর্তা ব্যক্তির জন্য ফেরি প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করার ফলে ফেরিঘাটে আহত ছাত্র মারা যাওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়ায় এইসব বিচার বিশ্লেষণ আসছে। অনেকেই এখন বলছেন, “ভিআইপি হিসেবে তাদের বিশেষ সুবিধা নেওয়া অসাংবিধানিক, সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং একই সাথে অনৈতিক ও অমানবিক, পরিষ্কারভাবেই ক্ষমতার অব্যবহারের দৃষ্টান্ত। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে”। উনারা রাজনৈতিক এমন কোন ব্যক্তি নন যে তাঁদের জীবনের হুমকি আছে। যদি জীবনের হুমকি থাকতো তাহলেও এমন করাটা গ্রহণযোগ্য হতে পারতো। কিন্তু আসলে তিনি বা তাঁরা ক্ষমতা দেখিয়েছে। ফলে তিনি তাঁর “অন্নদাতা মুনিবকে হত্যা করেছেন বা মুনিবের মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছেন তাঁর নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য, এটা খুব অন্যায় ই নয়, অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে”।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি এমন ভাইরাল হয়েছে যে, সরকার তড়িঘড়ি করে একটা তদন্ত কমিটি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তদন্ত কমিটি গঠন নিয়েও হচ্ছে সমালোচনা। বলা হচ্ছে ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, যা আই ওয়াশ মাত্র। কমিটির রিপোর্টে ‘জজ মিয়াঁ’দের বলি দেওয়া হবে, যা হবে আরেকটি জঘন্য অপরাধ। কারণ যার আদেশে ফেরি থামান হয়েছে তাকেই রাখা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে। এর চেয়ে যার কারণে এই ঘটনা তিনি মুখ খুললে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেই হতো সুষ্ঠু সমাধান। তৈরি হতো একটা নতুন মানবিক সংস্কৃতি ।

আমরা প্রায়ই দেখি উন্নত দেশে রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মচারী- কর্মকর্তাগণ কোন ভুল করলে জনগণের কাছে ক্ষমা চান। তাই তারা মানবিকতার ষ্ট্যাণ্ডার্ডে অনেক এগিয়ে। কিন্তু অন্য দিকে আমরা এখনো প্রিভিলেজ নিচ্ছি, যার শুরু ব্রিটিশ উপনিবেশের আমলে অর্থাৎ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। এখন সময় এসেছে প্রিভিলেজ কমিয়ে শূন্যে আসার, অপরাধের ক্ষমা না চাইলেও প্রিভিলেজ কমিয়ে কমিয়ে বাদ দিতেই হবে।

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এগুচ্ছে দ্রুত গতিতে। আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। কিন্তু নিজেদের মানবিক গুণাবলির উন্নয়নের কি কিছু হচ্ছে? মানবিক বা আত্মিক উন্নয়ন না হলে, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে বিচার করতে গেলে শত শত জজ মিয়ার জন্ম হবে। উন্নয়নের সুফল জনগণ পাবে না। আমাদের মন থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রভু মানসিকতা দূর না করলে ‘কর্মীর হাতে মুনিবরা’ মারা যেতেই থাকবে, নীতি নিত্যই। সোশ্যাল মিডিয়ার রিপোর্ট বা সিটিজেন জার্নালিজমের এই যুগে এক সময় তা জন বিস্ফোরণে রূপ নেবে না তা কে বলতে পারে! সিটিজেন জার্নালিজমের বদৌলতে এই বাংলায় হয়েছে গণ জাগরণ মঞ্চ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন, ইত্যাদি। আমাদের পাশের দেশেও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে অনেক আন্দোলনের উদাহরণ আছে। তাই সবাইকেই জণআকাংখ্য আমলে নিয়ে সাবধান আর সংযত হওয়ার কি কোন বিকল্প আছে?

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭