নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 04/08/2019
সামনে ঈদ। এর আগে আমাদের দেশের জনগণ তথা সরকার দুটি বড় সমস্যার মোকাবিলা করছে। কয়েকদিন আগে ছিল পাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া নিয়ে আদালতের আদেশ। আর দেশে এখন চলছে অনেকটা মহামারী আকারে ডেঙ্গুর আক্রমণ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এতোই ভয়াবহ যে বাংলাদেশ এর আগে কখনোই এমন অবস্থা মোকাবিলা করেনি, তাই অভিজ্ঞতাও নেই। ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মত দুর্যোগের মোকাবিলায় বাংলাদেশ যতটা দক্ষ সেই তুলনায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় ততোখানি অদক্ষ বা অনভিজ্ঞ। ডেঙ্গুতে বহু নিরীহ মানুষ মারা গেছেন, অনেক পরিবার তাঁদের ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনদের নিয়ে চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে ডেঙ্গুর উপস্থিতি লক্ষণীয়। গত বছর পাশের দেশ ভারতেই পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিলো। তারা তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে এবার তারা নিরাপদ আছে। কী কৌশলে, কোলকাতা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে বা নিরাপদ হয়েছে তার উপায় কেউ জানার চেষ্টা কী করেছেন! মনে হয় না। এই অবস্থার ফল কিন্তু খুব খারাপ। আমরা যারা ‘গরিব মরবে’ সেই আশায় ছিলাম, বা ভেজাল ওষুধ আমদানি করেছি, কিংবা ওষুধ প্রয়োগে গাফিলতি করেছি তাঁরাও কিন্তু ডেঙ্গুর হাত থেকে এখন রেহাই পাচ্ছি না। এমন প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাধারণ জ্বরকেও মানুষ ডেঙ্গুর আক্রমণ মনে করে হাসপাতালে যাচ্ছেন। ঠাঁই নাই অবস্থা হাসপাতালের। অসুস্থ প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বসে দেশের মানুষের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তা কতটুকু তামিল হচ্ছে! প্রশাসনের আমলা অংশের কর্তাদের গাফিলতিতে দেশে ডেংগু পরিস্থিতির যে অবস্থা দেশে সৃষ্টি হয়েছে তার সব দায় কি শুধু প্রধানমন্ত্রী আর তার জোটের/ দলের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের! নাকি প্রজাতন্ত্রেরে কর্মচারী কর্মকর্তাদেরও দায় আছে! বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ঘেঁটে দেখুন মন্ত্রণালয় আর অধিদপ্তরের ক্ষমতা কার হাতে!
কিছুদিন আগের বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশিমাত্রায় সিসা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অণুজীব রয়েছে ৯৬ শতাংশ দুধে। এদিকে প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে পাওয়া গেছে টেট্রাসাইক্লিন। একটি নমুনায় রয়েছে সিসা। এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে জনস্বার্থে আদালতের আদেশে লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে, জনস্বাস্থ্য ও হুমকির মুখে পড়েছে। ছোট্ট ছোট্ট শিশু আর বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষেরা পুষ্টিহীনতায় পড়েছেন।
২০০৫ সোনারগাঁ হোটেলে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনার হয়। সেখানে সম্ভাব্য এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (যা বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত) নিয়ে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তখন পশুসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন জনাব আব্দুল্লাহ আল নোমান। সেমিনারের ২ বা ৩ দিন পরে জাইকার চীফ একটা কন্টেইনার নিয়ে যায় পশুসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন জনাব আব্দুল্লাহ আল নোমান সাহেবের কাছে। যেয়ে জাইকার চীফ বলেন যে বিএলআরআই ও জাইকার যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে যে বাংলাদেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সুপ্ত অবস্থায় আছে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই এটা পোল্ট্রি সেক্টরে আঘাত হানবে চরমভাবে। তাই এই সেমিনারে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা যেন মেনে নিয়ে এখনি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তা না হলে এই সেক্টর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের মানুষ চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। মন্ত্রী অনুরোধ করেন যে, খবরটি যেন এখুনিই মিডিয়ায় না যায়। গেলে কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বহু খামারী পথে বসবে, বহু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। জাইকার চীফ কথা রেখেছিলেন, মিডিয়ায় সে খবর তখন যায়নি।
বাজারে পাস্তুরিত দুধের সংকটের বিষয়ে ৩০ জুলাই লন্ডন থেকে এক জরুরি টেলিকনফারেন্সে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না হঠাৎ করে একজন প্রফেসর সাহেব কী পরীক্ষা চালালেন, আর এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে আদালতে রিট হলো৷ একে একে সব কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ৷ এর ফলে দুধের ঘাটতিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ৷ আবার যারা খামার করছে তারাই বা কীভাবে জীবনযাপন করবে আর গরুকেই বা কী খাওয়াবে?” তিনি এই ঘটনার পিছনে কোন ষড়যন্ত্র আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। আসলে তিনি গরুর গরিব খামারীদের সচেতন করতে, মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য নয়। তিনি জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তাই এমন বক্তব্য দিয়ে গরুর গরিব খামারীদের একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে চেয়েছেন, ম্যাসেজ দিয়েছেন, গামের হাতুড়ে গরুর ডাক্তারদের, সতর্ক করেছেন ভেজাল দুধ উৎপাদনকারী আর বড় বড় কোম্পানির অসৎ পারচেজ অফিসারদের। শেখ হাসিনা জনগণের নেতার তাই তিনি জনস্বার্থ, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন।
যড়যন্ত্রের কথা বললে ২৬ শে এপ্রিল ১৯৮৬ সালে তৎকালীন রাশিয়ার চেরনোবিল পারমানবিক দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে। ডেনমার্কের তৈরি ডানো। ১ হাজার ৯৪৬ কিলোমিটার দূরত্বের যেটা পাড়ি দিতে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে বলে গুগল ম্যাপে দেখা যায়। ঐ বছর জুন-জুলাই মাসের দিকেই ডানোতে তেজস্ক্রিয় বা ক্ষতিকর উপাদান আছে বলে চট্টগ্রামের একজন অসৎ অধ্যাপকের বরাতে খবর প্রচার করে বাংলাদেশে গুড়াদুধের বাজার দখল করেছিলো রেড কাউ আর অন্য ব্র্যান্ডের গুড়া দুধের কোম্পানি। ডানোতে তেজস্ক্রিয় বা ক্ষতিকর উপাদান নেই এটা প্রমাণ করতে সময় লাগে প্রায় ৩ মাস। এর মধ্যেই ডানোর বাজার প্রায় শেষ হয়ে তাতে বড় অংশের ভাগ বসায় অন্যরা, যা ছিল পুরোপুরি ষড়যন্ত্র। আমি এটা বলতে চাই না যে বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত পাস্তুরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদান নেই। বরং আছে তা নিশ্চিত, কিন্তু একটা খাতকে, যেখানে কোটি মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে, সেটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা বা জনস্বাস্থ্যে রক্ষা করা, আর গরুর গরিব খামারীদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় একজন সরকার প্রধানের এটা করা বা বলা ছাড়া আর কী কোন বিকল্প আছে। এটাতেও সরকার ও গরীব শোষকরা প্রধানমন্ত্রীর দোষ ধরে যে সমালোচনা করেন। সমালোচকদের একটা গ্রামের ইউপি মেম্বার করে দিলেও তিনি যে সেই গ্রামের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বা জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে তা চালাতে পারবেন না, তাতে আমাদের মত অনেকেরই সন্দেহ নেই। ইংরেজিতে একটা কথা আছে , ‘ইজিয়ার সেইড দ্যান ডান’।
বাংলা ইনসাইডার
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭