ইনসাইড আর্টিকেল

নিষিদ্ধ রবীন্দ্রনাথকে মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/08/2019


Thumbnail

২৩ জুন, ১৯৬৭। রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তান সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন বললেন, ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ নয়’। রবীন্দ্রচর্চার ওপর সেসময়ই যে প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এমনটা নয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে রবীন্দ্রচর্চায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছিলো। যেসব অনুষ্ঠানে রবি ঠাকুরের গান-কবিতা থাকতো, সেখানে পাক দোসররা ভাঙচুর চালাতো। পাক শাসকদের মনে হয়েছিল, পাকিস্তানে আর যা-ই থাক রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই তারা একের পর এক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছিল বাঙালির ওপর। কিন্তু শোভন ও সুন্দর শিল্পকলার পূজারি বাঙালি জাতি কখনই এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নেয়নি। সবসময়ই তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। কখনও সামনে থেকে দৃঢ়চিত্তে, কখনওবা পর্দার আড়ালে থেকে এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রবীন্দ্র গবেষক সনজীদা খাতুনের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

সনজীদা খাতুন এক স্মৃতিচারণায় বলেছিলেন ‘পঞ্চাশ দশকে একবার কার্জন হলে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। আমাকে গান গাইতে বলা হয়েছিল। কী গান গাইবো, তা নিয়ে আমি ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম। এমন সময় দেখা গেল সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি লোক দিয়ে আমাকে বলে পাঠালেন আমি যেন ‘সোনার বাংলা` গানটা গাই। আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। এত লম্বা একটা গান। তখন তো আর এটা জাতীয় সংগীত নয়। পুরো গানটা আমি কেমন করে শোনাবো? আমি তখন চেষ্টা করে গীতবিতান সংগ্রহ করে সে গান গেয়েছিলাম কোনমতে। তিনি এইভাবে গান শুনতে চাওয়ার একটা কারণ ছিল। তিনি যে অনুষ্ঠান করছিলেন, সেখানে পাকিস্তানিরাও ছিল। তিনি তাদেরকে দেখাতে চেষ্টা করছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি` কথাটা আমরা কত সুন্দর করে উচ্চারণ করি। গানটার ভিতরে যে অনুভূতি সেটা তিনি তাদের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করেছিলেন।’ এটা ছোট একটা ঘটনা মাত্র। ঠিক এভাবেই নিষিদ্ধ রবীন্দ্রনাথকে মুক্ত করতে সবসময়ই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন জাতির পিতা। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করার মধ্য দিয়ে জাতির পিতার সেই প্রচেষ্টা পূর্ণতা পেয়েছিল।

বাঙালি জাতির মুক্তির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন রবি ঠাকুর। জাতির পিতা একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে আমি ভালোবাসি তার মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমের জন্য। সঞ্চয়িতা সঙ্গে থাকলে আমি আর কিছুই চাই না। নাটক নয়, উপন্যাস নয়, কবিগুরুর গান ও কবিতাই আমার বেশি প্রিয়। সব মিলিয়ে এগারো বছর কাটিয়েছি জেলে। আমার সব সময়ের সঙ্গী ছিল এই সঞ্চয়িতা। কবিতার পর কবিতা পড়তাম আর মুখস্থ করতাম। এখনও ভুলে যাইনি। এই প্রথম মিয়ানওয়ালি জেলের ন’মাস (স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানে কারাবন্দি থাকা অবস্থায়) সঞ্চয়িতা সঙ্গে ছিল না। বড় কষ্ট পেয়েছি।’

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭