ইনসাইড আর্টিকেল

প্রমথ চৌধুরী: আধুনিক সাহিত্যে অনন্য ‘বীরবল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/08/2019


Thumbnail

বাংলা সাহিত্যে একজন অনন্য সাধারণ সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী। ‘বীরবল’ ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে তিনি বাংলা ভাষারীতিতে বিশেষ পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর মাধ্যমেই প্রথম বিদেশী সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটে। তাঁর রচনায় মেলে চিরায়ত বাঙালির স্বরূপের সন্ধান। আজ তাঁর তার ১৫১ তম জন্মদিন পালিত হবে।

ইংরেজি ১৮৬৮ সালের এই দিনে তিনি যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দুর্গাদাস চৌধুরী ছিলেন পাবনার চাটমোহরের হরিপুর গ্রামের জমিদার বংশের সন্তান। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে তার শৈশব ও কৈশোর কাটলেও তিনি মাঝে মাঝে আসতেন পৈতৃক নিবাস হরিপুরে। বাংলা সাহিত্যেও খ্যাতিমান এ সাহিত্যিকের পৈত্রিক ভিটা পাবনার হরিপুরে।

সময়ের প্ররিক্রমায় এ লেখকের পৈত্রিক নিবাস বেদখল হয়ে যায়। স্বনামধন্য এই লেখকের স্মৃতি চিহ্ন যখন মুছে যাচ্ছিল এমন সময় ২০১৪ সালে চাটমোহরের সচেতন মহল প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ গড়ে তোলেন। তিন বছর আন্দোলনের পর এ সাহিত্যিকের তিন একর পৈত্রিক ভিটা অবৈধ দখল মুক্ত করে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পাঠাগার গড়ে তোলা হয়।

বাংলার বীরবল প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এনট্রান্স, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফ এ, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ (অনার্স) দর্শন ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে কলিকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা, আইন কলেজে ও ইংরেজী সাহিত্যে অধ্যাপনা ও ঠাকুর এস্টেটের ব্যবস্থাপক পদে কাজ করেন তিনি। এরই মাঝে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন তিনি। সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরী চলিত ভাষাকে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। তার সমসাময়িক সময়ে তার মত প্রখর রুচিশীল লেখক খুব একটা ছিল না।

১৮৯০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ সম্পন্ন করে পরবর্তীকালে বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পড়ে আসেন। কলকাতায় ফিরে হাইকোর্টে যোগদান করলেও শিল্পমনা প্রমথ এই ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে পারেননি। তাঁর বাবার সংগ্রহে ছিল প্রচুর বই। শৈশব থেকেই দেশী–বিদেশী বিখ্যাত সব লেখকদের লেখার সাথে পরিচয় ঘটেছিল তাঁর।

পারিবারিক মননশীল আবহাওয়া, রাজবাড়ির ঐশ্বর্য, ধনী ও বিলাসী লোকদের সাথে নিত্য মেলামেশা, আত্মীয়তার সুত্রে ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ-সব মিলিয়ে প্রমথ চৌধুরী হয়ে উঠেছিলেন রসিক সাহিত্যপ্রেমী। তিনি প্রধানত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর রচনা চিন্তার অভিনবত্ব, ভাষার কারুকাজ, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, নির্ভার অথচ অভিনব গদ্যশৈলী এবং পরিহাসপ্রিয়তার বৈশিষ্ট্যে অনন্য। বিশেষ করে, প্রবন্ধগুলো কূপমণ্ডূকতা, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিজ্ঞানমনস্কতা, মানবতা আর যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় সফল।

তাঁর রচনার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ: ‘সনেট পঞ্চাশৎ’, ‘পদচারণা’; গল্পসংগ্রহ: ‘চার ইয়ারী কথা’, ‘গল্প সংকলন’, ‘নীললোহিত’; প্রবন্ধ: ‘তেল–নুন–লাকড়ি’, ‘বীরবলের হালখাতা’, ‘প্রাচীন সাহিত্যে হিন্দু মুসলমান’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘বীরবলের টিপ্পনী’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ‘সবুজপত্র’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। কবিতা, গল্প আর প্রবন্ধের সম্মিলনে পত্রিকাটিতে ছিল নতুনত্বের ছোঁয়া।

তিনি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কন্যা ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৪৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর প্রমথ চৌধুরী প্রয়াত হন। কিন্তু কৌতুকরসে সমৃদ্ধ হাসিখুশি রচনা আর ব্যক্তিত্বে তিনি আজও জীবন্ত হয়ে আছেন।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭