ইনসাইড আর্টিকেল

পথ দেখালেন আবেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/08/2019


Thumbnail

শেখ হাসিনা শুরুটা করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়ে দিলেন আর নয়। এবারের পর আর প্রধানমন্ত্রীত্ব নয়। এবার সেই পথে হাঁটলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। অর্ধ শতাব্দী ধরে নিজ হাতে তিল তিল করে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে আকস্মিকভাবে অবসর নিলেন তিনি। তিনি সংস্থাটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনের পথ থেকে সরে দাঁড়ালেন রীতিমতো অফিসে প্রগ্রাম করে। আমাদের দেশের জন্য অনন্য এক নজির স্থাপন করলেন স্যার আবেদ।

আমাদের দেশে এটা দেখেই অভ্যস্ত যে, কেউ একবার কোনো পদে বসলে সেটা আর ছাড়তে চান না তিনি। আর নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান হলে তো কথাই নেই। তিনিই হয়ে যান সেটার সর্বময় কর্তা। আজীবন তিনিই সেটার প্রধানের পদ আকড়ে ধরে থাকেন। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে নোংরা কাদা ছোড়াছুড়িও হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বেলায় আমরা এমনটাই হতে দেখেছি।

অনেক সময় আবার এমনও হয় যে, আনুষ্ঠানিকভাবে পদ ছাড়লেও কর্তৃত্ব ঠিকই নিজের হাতে রেখে দেন প্রতিষ্ঠাতারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেরকম আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি চেয়ারম্যানের পদ ছাড়লেও এখনও প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব তারই হাতে। মানবাধিকার কর্মী খুশি কবিরও বছরের পর বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব মুঠোবন্দি করে রেখেছেন। তাদের অবসর নেওয়ার বা নতুন নেতৃত্ব বের করে আনার কোনো প্রচেষ্টাই নেই। স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন।

ব্র্যাকে স্যার ফজলে হাসান আবেদের নিজের মেয়েসহ পরিবারের অনেকেই উচ্চপদে রয়েছেন। কিন্তু ফজলে হাসান আবেদ নিজের পরিবারের কাউকেই চেয়ারম্যানের পদে বসাননি। ব্র্যাকের নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন হোসেন জিল্লুর রহমান। আর ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপারসনের পদে এসেছেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক। এরা কেউই ফজলে হাসান আবেদের পরিবার ঘনিষ্ঠ কেউ নন। যোগ্যতার বিচাররেই তাদের ব্র্যাকের শীর্ষপদে নিয়ে আসা হয়েছে। ফজলে হাসান আবেদ চাইলেই পারতেন কোনো ‘পুতুল’ চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।

ফজলে হাসান আবেদ দেখালেন যে, শুধু পদ আকড়ে ধরলেই হয় না। একটা সময় পর নতুন নেতৃত্বের কাছে সেটা ছেড়েও দিতে হয়।

আমাদের দেশের কথিত সুশীল সমাজ গণতন্ত্রের কথা বলে গলা ফাটায়। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই গণতন্ত্র নেই। তারা নিজেরাই স্বৈরশাসকের মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সর্বেসর্বা হয়ে থাকেন। শারীরিক অসুস্থতা, দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা, কোনো কিছুই তাদের ক্ষমতা থেকে টলাতে পারে না। কিন্তু ফজলে হাসান দেখালেন কীভাবে বিদায় বলতে হয়। তিনি দেখালেন যেকোনো কিছুর যেমন শুরু আছে তেমনি শেষও আছে।

কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সেটার কর্তৃত্ব আজীবন নিজের হাতে রেখে দেওয়াটাই সফলতা নয়। বরং প্রতিষ্ঠাতার অবর্তমানে সেটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলবে কিনা এবং সঠিক নেতৃত্বের হাতে সেটা পড়বে কিনা এসব নিশ্চিত করতে পারলে সেটাই হলো প্রকৃত সফলতা। স্যার ফজলে হাসান আবেদ সেটাই করে দেখিয়েছেন। আমাদের দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ তার দেখানো পথ অনুসরণ করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭