ইনসাইড পলিটিক্স

নবীন মন্ত্রীদের পাঁচ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/08/2019


Thumbnail

গতকাল শনিবার দিনভর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন মন্ত্রী এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। নতুন মন্ত্রীরা যখন নানাভাবে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন, সরকারের কাজে যখন সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ আসছে এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করছেন কিছু কিছু মানুষ তখন প্রধানমন্ত্রী নবীন মন্ত্রীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। নবীন মন্ত্রীদেরকে আরো সময় দিয়ে তাদেরকে কাজ শেখানোর দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদেরকে বলেছেন যে, মন্ত্রীদের সুযোগ দিতে হবে। চট করে তাদেরকে ব্যর্থ বলে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন যে, মন্ত্রীদেরকে কাজের কিছু কৌশল এবং দিকনির্দেশনা দিলে তারা নিশ্চয়ই ভালো করবেন। এটাই শেখ হাসিনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তিনি কখনো দুঃসময়ে কাউকে ছেড়ে যান না। বরং তাদেরকে সহযোগীতা দেন, তাদের সঠিক পথ দেখান এবং তারা যেন সফল হতে পারেন সেজন্য উৎসাহ এবং দিক নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে কথা বলে যেসব দিক নির্দেশনা পেয়েছেন তা থেকে খুঁজে বের করে নবীন মন্ত্রীদের জন্য পাঁচটি বিশেষ দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

সমস্যা এলেই ঘাবড়ালে চলবে না

প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নবীন মন্ত্রীদের বলেছেন যে, সমস্যা এলেই ঘাবড়ালে চলবে না। একটা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গেলে, নানারকম সমস্যা আসতেই পারে। যেমন- ডেঙ্গুর সমস্যা এসেছে, গুজব সন্ত্রাস তৈরি হয়েছে। সমস্যা দেখলে ঘামড়ালে চলবে না। বরং এসব সমস্যা সমাধানের উপায়ের জন্য চিন্তা করতে হবে। সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। এই সমস্যার গভীরে যেতে হবে। সমস্যা সমাধানের উপায়ের জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ে টিম ওয়ার্ক

নবীন মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় যে পরামর্শটি দিয়েছেন তা হলো, মন্ত্রণালয়ে টিম ওয়ার্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের জন্য মন্ত্রণালয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটা টিম ওয়ার্ক তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। যে টিম ওয়ার্কে উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন, মন্ত্রীরা থাকবেন। তারা সবাই মিলে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনার আওতায় একটা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করবেন। টিম ওয়ার্ক ছাড়া এককভাবে কেউ সফল হতে পারে না বলেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

সততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

মন্ত্রণলয়ের কাজে বিভিন্ন ফাইল এবং সিদ্ধান্ত নিষ্পত্তিতে সততার সঙ্গে কাজটি করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সততার মূল ভিত্তি হলো জনকল্যাণ। একটি সিদ্ধান্তে কতটুকু জনকল্যাণ হবে, জনগণ সেই সিদ্ধান্তে কতটুকু উপকৃত হবে এবং জনবান্ধব সিদ্ধান্ত হবে কিনা সে বিষয়গুলো বিবেচনা করে সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ফাইল পড়তে হবে

সাধারণত দেখা যায় যে, নবীন মন্ত্রীদের কাছে ফাইল নিয়ে আসা হলে সেই ফাইলে তারা শুধু সই করেন। তাদের একান্ত সচিব বা অন্য কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে ব্রিফ করেন। এটা পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই সমস্ত ফাইল পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়েন। ওই ফাইলে খুঁটিনাটি বানান ভুলগুলোও তার নজর এড়ায় না। প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীদেরও এই কাজটি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন যে, শুধু পিএস বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে শুনে নয়, প্রত্যেকটা ফাইল নিজেদেরকে পড়তে হবে। পুরো ফাইলটি পড়ার পরেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ

পঞ্চম যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা হলো, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। একজন মন্ত্রীর সব সিদ্ধান্ত সঠিক হবে এমন নয়। মানুষ মাত্রেই ভুল হবে। কাজেই সিদ্ধান্ত নিলে কিছু সিদ্ধান্ত ভুল হতেই পারে। কিন্তু যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সততা থাকে, তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও তা শুধরে ফেলা যাবে। তবে সিদ্ধান্তহীনতা সরকারকে অচল করে দেবে। সরকারের গতি নষ্ট করে দেবে। কাজেই প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, মন্ত্রণালয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত। কোনো ফাইল বা কোনো সিদ্ধান্ত আটকে পড়ে থাকা চলবে না। কতগুলো বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের  হাতে-কলমে বুঝিয়েছেন। যেমন মশার ওষুধ আনার বিষয়টি। এটি আগে থেকেই নেওয়া উচিত ছিল। সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সমস্যা হয়েছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সরকারের কাজে গতি আনবে বলে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই পরামর্শগুলো মন্ত্রীরা যদি পালন করেন তাহলে তারা বর্তমান ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। একই সঙ্গে তারা নিজেদের মন্ত্রণালয়ের যোগ্য মন্ত্রী হিসেবেও নিজেদের উপস্থাপন করতে পারবেন।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭