নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 11/08/2019
একসময় তারা দাপুটে মন্ত্রী ছিলেন। সরকারের নীতি নির্ধারকও ছিলেন। কিন্তু গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তারা। এখন তারা নিখোঁজ সংবাদে পরিণত হয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীরাও জানেন না যে, তারা কোথায় কী করছেন। দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও তাদের অনুপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। যখন ডেঙ্গু মোকাবেলায় সারাদেশে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তখনও তারা নিখোঁজ। এই সমস্ত কয়েকজন সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন।
মোফাজ্জেল হায়দার চৌধুরী মায়া
মোফাজ্জেল হায়দার চৌধুরী মায়া আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী ছিলেন। এবার নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ার আগেও তিনি একজন দাপুটে এবং প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ঢাকা মহানগরের আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা বলা হতো মায়াকে। কিন্তু সেই মায়াই গত নির্বাচনে চাঁদপুর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর তাকে দু একটি কর্মসূচিতে নামমাত্র দেখা গেলেও এখন তিনি একেবারেই নিখোঁজ। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে থাকছেন। দলের কোনো কর্মসূচিতে কোনো কর্মকাণ্ডে তাকয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সারা ঢাকায় যখন বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, তখন মায়ার অনুপস্থিতি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। মায়া এখন রাজণীতি করছেন কী করছেন না, সে প্রশ্নও অনেকে করেছেন। তবে মায়া এখনও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
রেজাউল করিম হীরা
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল জয় নিয়ে সরকার গঠন করে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় একটা চমক এনেছিলেন। সেই চমক হিসেবে তিনি জামালপুর থেকে নির্বাচিত রেজাউল করিম হীরাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। পাঁচবারের এমপি রাহাউল করিম হীরা ছিলেন জামালপুরের অপরিহার্য একজন এমপি। কিন্তু গত নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এরপর দলের কর্মকাণ্ড থেকে তিনি নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়েছেন। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডেই তার উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। রেজাউল করিম হীরার এই নিরুদ্দেশ যাত্রা কেন সে নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
তারানা হালিম
তারানা হালিম দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সাংস্কৃতিক জগতে যে গুঁটিকয়েক ব্যক্তি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতেন বা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতেন, তাদের মধ্যে তারানা হালিম ছিলেন অন্যতম। গত মেয়াদে তারানা হালিমকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিনি প্রথমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, পরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি না পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন, না পেয়েছেন মন্ত্রিত্ব। মন্ত্রী এবং এমপি না হওয়ার পর থেকেই তারানা হালিম যেন নিখোঁজ সংবাদ। তাকে দলের কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না। যদিও তাকে জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর উদযাপন কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটির বৈঠকগুলোতেও তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকছেন বলে জানা গেছে। তার এই অনুপস্থিতি অভিমান নাকি দূরে সরে যাওয়া সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নি।
আব্দুল মান্নান খান
ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার পক্ষে সোচ্চার হওয়া আবদুল মান্নান খান ২০০৯ সালে পুরষ্কৃত হন। তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে মনোনয়ন পান। তারপর তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ২০১৪ তে তিনি মন্ত্রিত্ব তো দূরের কথা, মনোনয়নও পাননি। বরং তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের জন্য দুর্নীতির অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হন। তারপরও তাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। কিন্তু প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পরও দলীয় কর্মকাণ্ডে তিনি নেই বললেই চলে। একমকাত্র প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ছাড়া তাকে দেখা যায় না। তার উপস্থিতিও চোখে পড়ে না। আবদুল মান্নান খান কি রাজনীতি থেকে নিজেকে ক্রমশ গুঁটিয়ে ফেলছেন?
এ কে এম শাহজাহান কামাল
গত মেয়াদে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় একটা বড় চমক ছিলেন একেএম শাহজাহান কামাল। বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেছিলেন যে, বিমানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি প্রয়োজনে তিনি বুকের রক্ত ঝরিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি বুকের রক্তও দেননি, বিমানের শৃঙ্খলাও ফেরেনি। এই মেয়াদে তিনি না পেয়েছেন মনোয়ন, না পেয়েছেন মন্ত্রিত্ব। এরপরেই তিনি গুঁটিয়ে নিয়েছেন। তাকে কোনো রাজণিতিক কর্মকাণ্ডে আর দেখা যায় না। নীরবে নিভৃতেই নিখোঁজ হয়ে গেছেন শাহজাহান কামাল।
এরকম আরও অনেক নেতা আছেন আওয়ামী লীগে, যারা মন্ত্রিত্ব এবং সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে দলের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুঁটিয়ে নিয়েছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগ লাভবান হয়েছে নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭