ইনসাইড আর্টিকেল

বিশ্বের বহু দেশে কারাগারে ঈদ করছেন বিরোধী দলীয় নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/08/2019


Thumbnail

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতার এবারের ঈদ কাটবে জেলে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযুক্ত হলেন পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ নেতা মারিয়াম নাওয়াজ। গত ৮ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার লাহোরের কোর্ট লাখপাত জেলে বন্দী তাঁর বাবা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরীফের সাথে সাক্ষাৎ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তাকে বন্দী করা হয়। পাকিস্তানের দূর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো আদালতে  নাওয়াজ শরিফের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান চৌধুরী চিনি কল সংক্রন্ত দূর্নীতি ও অর্থ পাচার মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে মারিয়াম নাওয়াজ ও তার চাচাত ভাই ইউসুফ আব্বাসকে আটক করা হয়। শুক্রবার ২১ আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাই ঈদে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে পাকিস্তানের বিরোধী দলের মূল নেতা নাওয়াজ শরীফ ও তার কন্যা বর্তমানে বিরোধী দলীয় নেতা মারিয়াম নাওয়াজকে।

ফেব্রুয়ারী ২০১৮ কারাগারে আছেন বাংলাদেশের সরকার বিরোধী জাতিয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতা বেগম খালেদা জিয়া। জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট সংক্রান্ত দূর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদন্ড হওয়ায় তিনি জেলে বন্দী হন। আদালতের আদেশে স্বেচ্ছায় কারাবন্দি হন খালেদার দীর্ঘ দিনের গৃহবন্দী ফাতেমা। তাই ফাতেমাকে  নিয়ে জেলেই  কাটাবে খালেদার ঈদ। তবে অসুস্থার কারনে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় হাসপাতালের বিশেষ কক্ষে থাকবেন। এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, যা জেল হিসাবে গন্য। গত রমজান মাসে তাকে নিম্নমানের ইফতার পরিবেশনের অভিযোগ উঠলেও সরকার তা অস্বীকার করে। ঈদে সকল বন্দীর মত তাঁকেও উন্নত মানের খাবার দেয়া হবে।

৩ এপ্রিল ২০০৯ থেকে ১০মে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ৯ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাজিব রাজ্জাক। মালয়েশিয়ার কিংবদন্তী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথীর মোহাম্মদকে গুরু মানতেন নাজিব রাজ্জাক। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাঁর প্রতি বিরাগভাজন হন মাহাথীর। ফলে এককালে মাহাথীরের বিরাগভাজন ও কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে জোটবন্ধ হয়ে নির্বাচন করেন মাহাথীর মোহাম্মদ। ৯মে ২০১৮ তারিখের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথীর। এরপর নাজিব রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একে কে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের ও বিচার শুরু হওয়ায় কার্যত বন্দী হয়ে পড়েন ধনাঢ্য নাজিব রাজ্জাক। ব্যক্তিগত একাউন্টে অস্বাভাবিক তহবিল, সরকারী বন্ড ও ফাণ্ডের টাকা ব্যক্তিগত একাউন্টে রাখা এবং নিজ বাসস্থানে মূল্যবান অলংকার ও ধন সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করায় নাজিবের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দিতে থাকে। ধারণা করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চিত প্রমাণিত অপরাধের দায়ে বিভিন্ন মামলায় ১০০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে নাজিব রাজ্জাকের। এসব চলমান মামলায় বন্দী, রিমান্ড, নজর বন্দী, বেইল ইত্যাদির মধ্যদিয়ে দিন কাটলেও সার্বিক বিচারে বলা যায় এক ধরণের বদনী অবস্থায় ঈদ কাটাবেন নাজিব রাজ্জাক।

এবছর ২০ ফেব্রুয়ারি অর্থ পাচারের মামলায় আটক হন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের নেতা ইয়ামেন আবদুল গাইয়ুম। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ’র কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে পরাজিত হন আবদুল্লাহ ইয়ামেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে মালদ্বীপের সরকারী প্রতিষ্ঠান মালদ্বীপ মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশনস করপোরেশনের ১৩০০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ফলে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের আদেশে মাফুসী জেলে পাঠান হয় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা আবদুল্লাহ ইয়ামেনকে।

মিশরের বিভিন্ন কারাগারে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার রাজবন্দী রয়েছেন যারা এক কালের সেনাবাহিনী প্রধান এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ক্ষমতা গ্রহনের পর বন্দী হন। এদেরই একজন মিশরের বিরোধী দল সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং সিভিল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের নেতা জাইয়াদ এলিলামি। ২০১১ সালে মিশরের দীর্ঘদিনের শাসক হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ফাতেহ। এরপর অনেক নাটকীয়তার পর ২০১৪ সালের ২৬ ও ২৮ মে তে বিতর্কিত নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ ভোটে নির্বাচিত হন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। তিনি নির্বাচিত হবার আগেই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ মোরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এরপর তাঁকে অপহরণ ওপরে বন্দি করা হয়। এবছর ১৭ জুন বিচার চলাকালে মৃত্যুবরণ করেন মোরসি, যা সন্দেহজনক বলে প্রচারিত।

২০১৫ সাল থেকে জেলে আছেন বাহরাইনের সরকার বিরোধী আল উইফাক আন্দোলনের নেতা শেখ আলী সালমান। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বাহরাইনের হাইকো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করা দেশ কাতারের সাথে গোপন সম্পর্ক রাখা, গুপ্তচরবৃত্তি এবং রাষ্ট্রদ্রোহতার অভিযোগে সালমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে।

রাজনীতি নিষিদ্ধ তথা রাজতন্ত্রের বহু আরব দেশ, যুদ্ধবিদ্ধস্ত মুসলিম দেশসহ উপসাগরীয় বহুদেশের কারাগারে রয়েছেন কয়েকশত বিরোধী নেতা।

লেখক- প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা ও গবেষক মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অবঃ) পিএইচডি। 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭