ইনসাইড বাংলাদেশ

স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ ১৫ টুকরো, গ্রেপ্তার ঘাতক স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/08/2019


Thumbnail

হালুয়ায় ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্ত্রীকে অচেতন করে গলাটিপে হত্যার পর খণ্ড খণ্ড করেন স্বামী। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা করে ব্যাগে ও বস্তায় ভরেন ফেলে দেওয়ার জন্য। ব্যাগ ফেলে দিলেও বস্তা ফেলতে পারেননি। তার আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন খুনী মামুন (৩৫)। মামুনকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

ইলেক্টট্রিক মিস্ত্রী মামুন মিয়ার বাড়ি জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বড়ইবাড়ি গ্রামে। বুধবার দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস সবুর ও শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার সাভার থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে গত সোমবার শ্রীপুরের আসপাডা মোড় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে তার স্ত্রী সুমি আক্তারের (২৩) বস্তাবন্দি খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত সুমি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে। শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার সাবলাইম গ্রিনটেক নামে একটি পোশাক কারখানার সুইং অপারেটর ছিলেন। স্বামীর সঙ্গে শ্রীপুরের আসপাডা মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। মামুন ওই এলাকায় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন।

জানা গেছে, দেড় বছর আগে মামুন ও সুমির বিয়ে হয়। দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। সম্প্রতি নারীঘটিত ব্যাপারে স্বামীর প্রতি অবিশ্বাস দেখা দেয় সুমির। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। গত বৃহস্পতিবার এর জের ধরে স্ত্রীকে খুন করেন মামুন। পালিয়ে যাওয়ার সময় সুমির জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যান তিনি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিয়াকত আলী জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন নিজেই কথাগুলো বলেন। মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে সাভারে তার ফুফাতো ভাইয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় মামুন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীকে রুটি-হালুয়ার সঙ্গে ঘুমের ওষধ খাইয়ে দেন তিনি। সুমি ঘুমিয়ে গেলে তাকে গলাটিপে হত্যা করেন। পরে গোসলখানায় স্ত্রীর লাশ নিয়ে একটি চাকুর মাধ্যমে প্রথমে সুমির মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করেন।

পরে শরীরের অন্যান্য অংশের পাঁচ খণ্ড করেন মামুন। এরপর পলিথিনের বস্তায় সুমির খণ্ডিত দেহ ভরে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখেন। বিচ্ছিন্ন মাথা, হাত ও পা একটি ট্রাভেল ব্যাগে ভরে সে রাতেই কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকার বানার নদী ব্রিজের নিচে সেটি ফেলে দেন মামুন।

এরপর শ্বাশুড়ির মোবাইলে ফোন দিয়ে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়েছেন বলে জানান। এ সময় সুমি ঠিকমতো বাড়ি পৌঁছেছেন কী না তাও জানতে চান। কথা শেষ হওয়ার পর মোবাইল বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন তিনি।

নিহতের ছোট বোন বৃষ্টি জানান, গত শুক্রবার সুমির সঙ্গে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। সেদিন সকালে তিনি বোনকে কয়েকবার কল দিলেও তার মোবাইল বন্ধ ছিল। গত শনিবার বৃষ্টি ও তার স্বামী আসপাডা মোড় এলাকায় বোনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। কাউকে না পেয়ে ফেরত যাওয়ার সময় মামুনকে দেখতে পান তারা। তাকে নিয়ে ফের বোনের বাড়ি যাওয়া সময় কৌশলে পালিয়ে যান মামুন।

সেদিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান বৃষ্টি ও তার স্বামী। বাড়ি ফিরে বোনকে না পেয়ে আবারও তার সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করেন। মামুনকেও ফোন করেন। কিন্তু দুজনেরই মোবাইল নাম্বার বন্ধ ছিল। গত রোববার বাড়িতে অবস্থান করে সোমবার আবারও বোনের বাসায় যান বৃষ্টি ও তার স্বামী। ঘরে ঢোকার পর মেঝেতে রক্ত ও দুর্গন্ধ পান তারা। পরে ড্রেসিং টেবিল খুলে পলিথিনের বস্তায় জড়ানো অবস্থায় বোনের লাশের একাংশ পান। তারা খবর দিলে পুলিশ এসে তা উদ্ধার করে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষন দাস জানান, পলিথিনে থাকা মাংস খণ্ডে মানুষের চামড়া ও নারীর আলামত ছিল। তবে সেখানে মাথা, হাত ও পা ছিল না। গতকাল মঙ্গলবার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে সুমির বাবা নিজামউদ্দিন বাদি হয়ে মামুনসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লিয়াকত আলী জানান, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আদালত খোলা হলে তাকে তোলা হবে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএম



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭