ইনসাইড আর্টিকেল

বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে আমাদের যত ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2019


Thumbnail

৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তা আজ আর কারো অজানা নয়। এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য যে কেবল একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা, তাই নয়। বাংলাদেশকে আবার আরেকটা পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র ছিল সেটাও আজ স্পষ্ট।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করেছিলো আবার। যদিও ১৯৯৬ থেকে ২০০১- এই ৫ বছর এবং ২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত টানা ১০বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতার অনেক অপূর্ণ স্বপ্নই পূরণ করেছে। বাংলাদেশকে উল্টোযাত্রা থেকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। এরপরেও জাতির পিতার অনেকগুলো স্বপ্নই এখনো অধরা রয়ে গেছে। যে স্বপ্নের পথে বাংলাদেশ এখন আর হাঁটতে পারছে না। জাতির পিতার কিছু কিছু লক্ষ্য আর স্বপ্ন এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সেই স্বপ্নগুলো অদূর ভবিষ্যতেও পূরণ করা সম্ভব হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এরকম কিছু অপূর্ণতা নিয়েই আমাদের এই প্রতিবেদন-

১. সেক্যুলার রাষ্ট্র

জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল বাংলাদেশ হবে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার- এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই বঙ্গুবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি মুক্তির সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল। জাতির পিতার একাধিক বক্তব্যেই তিনি বলে গেছেন- এই দেশ সবার, বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি। এরকম একটি দর্শনই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তিমূল। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশকে ক্রমশ একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র তৈরির চক্রান্ত হয়েছিল। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আবার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এসে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রবর্তন করেছিলেন। যেগুলো সেক্যুলার রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই স্বাধীনতার এত বছর পরেও জাতির পিতার নীতি এবং তার দেখানো পথে আমরা এগোতে পারিনি।

২. বৈষম্যহীন সমাজ

জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা তৈরি করা। বৈষম্য ঘোচানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু ৭৫ এর জানুয়ারি মাসে বাকশাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। একটি সমাজতান্ত্রিক নীতি এবং আদর্শের ভিত্তিতে তিনি একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অবয়ব গড়েছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে, দেশের বিপুল উন্নতি হচ্ছে- এর সবই সত্যি। কিন্তু উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য বাড়ছে। যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সেই বৈষম্যহীন সমাজ এখন যেন এক অলীক স্বপ্নমাত্র। বরং বাংলাদেশে বৈষম্য বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক বেশি।

৩. পরমতসহিষ্ণুতা

জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শে যে রাজনৈতিক দলগুলো থাকবে তারা পরস্পর পরস্পরকে সমালোচনা করবে, জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন নীতি আর আদর্শ নিয়ে জনগণের সামনে যাবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক আদর্শ চর্চা হবে না। কিন্তু জাতির পিতার মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনীতি আজ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, আরেকটি হলো স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি। আমাদের রাজনীতিতে এই দুই ধারাই চলছে।

বিএনপি জামাতসহ যেই দলগুলো রয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করা এবং বাংলাদেশকে আবার একটি পাকিস্তানি ধারার রাষ্ট্রতে প্রতিস্থাপন করা। আজকে বাংলাদেশে জাতির পিতার যে স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতেই সবগুলো দল থাকবে, মৌলিক প্রশ্নে কোনো দ্বিমত থাকবে না- সেই স্বপ্ন অধরাই রয়েছে গেছে।

৪. দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ

জাতির পিতা স্বপ্ন ছিল একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন করা। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর তিনি বার বার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত সোচ্চার ‍ছিলেন, বার বার তিনি দুর্নীতিবাজদের নির্মূল করার জন্য জনমত গঠনের তাগিদ দিয়েছিলেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর দুর্নীতির যে বৃক্ষরোপন করা হয়েছে, তা এখন মহীরূহ হয়েছে। কোনো সরকার চাইলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারবে না। বরং দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

৫. সমাজতান্ত্রিক আদর্শ

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের যে ৪টি মূল স্তম্ভ ছিল তার মধ্যে একটি ছিল সমাজতন্ত্র। ৭২ এর সংবিধানে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সমাজতন্ত্র যুক্ত ছিল যেটা জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে উপড়ে ফেলেন। বাংলাদেশকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় রূপান্তর করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার এখন টানা ১০ বছরের বেশি ক্ষমতায়, এর আগেও ৫ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা। এরপরেও ধর্মবাদী অর্থনীতি থেকে দেশকে সমাজবাদী তো নয়ই, একটি কল্যাণকামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকেও নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয়নি। তার কারণ হলো উগ্র পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতির কারণে এখন বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক নীতি এবং আদর্শগুলো পরিত্যাক্ত হয়েছে।

এছাড়াও আরও কিছু স্বপ্ন রয়েছে যেগুলো হয়ত আর কোনোদিনই পূরণ হবে না। যে স্বপ্নগুলো অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সত্যিকারের সেক্যুলার, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন এবং সাম্যের দেশ হতে পারতো। বাংলাদেশ হয়ত আরও অনেক উন্নতি করবে, উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। কিন্তু জাতির পিতার এই স্বপ্নগুলো কোনোদিন পূরণ হবে কিনা তা অনিশ্চিত। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭