ইনসাইড আর্টিকেল

বিশ্ব মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2019


Thumbnail

১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশকেই নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছিল।

১৫ আগস্টের পরদিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের নয়াদিল্লি প্রতিনিধির লেখা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘একটি সেনা সমর্থিত সরকার মধ্যরাতে পরিচালিত এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছে। মনে করা হচ্ছে সরকারটি ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষের।’

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে বামপন্থি রাষ্ট্রপতি হিসেবে তুলে ধরা হয়। সরাসরিই লেখা হয়, ‘ক্ষমতাচ্যুতির ওই বিদ্রোহ প্রায় স্বৈর-ক্ষমতার পর্যায়ে চলে যাওয়া এবং দারিদ্রপীড়িত দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক বামপন্থি রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রেসিডেন্টের আসনে বসা খন্দকার মোশতাক আহমেদ সেনা বিদ্রোহের ১৮ ঘণ্টা পর সম্প্রচার করা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, মুজিবই বাংলাদেশের দারিদ্র্যের জন্য দায়ী। ‘তার শাসনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং এক হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা ছিল’ মোশতাকের এ উক্তি ওয়াশিংটন পোস্ট ছাপিয়েছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে মন্তব্য হিসেবে পত্রিকাটি বলেছিল, বঙ্গবন্ধুর এ মৃত্যু তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির প্রতি একটা ব্যক্তিগত আঘাতও বটে, যিনি প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রবিষয়ক নীতিমালায় সমর্থন দিতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা ও বিদ্রোহ নিয়ে বিস্তারিত লিখলেও তৎকালীন সোভিয়েত পত্রিকা ইজভেস্তিয়া ভেতরের পাতায় এ ঘটনার একটা ছোটখাটো খবর ছেপেছিল। সেখানে কারও উক্তিও ছিল না। তবে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রিকা প্রাভদা লিখেছিল, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার ‘প্রতিকূল শক্তিরা’ হয়তো দেশটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকান্ডের ঠিক এক সপ্তাহ পর নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশে হওয়া সেনা বিদ্রোহের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন আজ (২২ আগস্ট) ইঙ্গিত দিয়েছে যে, শেখ মুজিবুর রহমানের উৎখাত হয়তো দেশটিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দূরে সরিয়ে চীনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫-এ ঢাকার ডেটলাইন দিয়ে ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার এক সপ্তাহ পর চীনও তার স্বীকৃতি দিয়েছে। এটাও বলা হয়, ভারতও মোশতাক সরকারের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম বার্ষিকীতে সানডে টাইমসের অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লন্ডনের আইটিভির ‘ওয়ার্ল্ড ইন অ্যাকশন’ অনুষ্ঠানের জন্য বঙ্গবন্ধুর দুই স্বঘোষিত হত্যাকারী লে. কর্নেল ফারুক ও লে. কর্নেল রশিদের সাক্ষাৎকার নেন। দুই আগস্ট প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানে হত্যাকারীরা বর্ণনা করেন কীভাবে তারা ১৯৭৫-এর ২০ মার্চ তৎকালীন ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কীভাবে দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা তাকে বলেছিলেন। সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ও মার্টিন উলাকট ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বর্ণনা ছিল সবচেয়ে বিস্তারিত বর্ণনার একটি। ওই দিন কী হয়েছিল এবং তার পেছনে কী কী কাজ করেছে তার অনেক কিছুই বেরিয়ে এসেছিল তাদের লেখনিতে। ওই প্রতিবেদন ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান ২৮ আগস্ট, ১৯৭৫ তাদের লিড নিউজ হিসেবে প্রকাশ করেছিল।

বঙ্গবন্ধু-১৫ আগস্টের চার বছর পর ১৯৭৯-র ১৫ আগস্ট লিফশুলজ শেখ মুজিবুর রহমানের উৎখাতের সে সেনা অভ্যুত্থানের পেছনের চক্রান্ত নিয়ে আরেকটি লেখা লিখেন। সেটাও গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে লিফশুলজ লিখেছিলেন, ‘ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসে কর্মরত মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিস্তারিত জানা বাঙালি কিছু সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য ঘটানো সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে জানত। এমনকি মার্কিন দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে বিদ্রোহ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছেন।’

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭