ইনসাইড আর্টিকেল

ঢাকায় শোকের মিছিল, গন্তব্য ধানমন্ডি ৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2019


Thumbnail

গত রাত থেকেই প্রকৃতি গম্ভীর ভাব ধারণ করেছে, গুমট পরিবেশ সারা নগরী জুড়ে। যেন অশ্রু সজল নয়নে পিতার লাশের সামনে বুক চাপা কান্না নিয়ে বসে আছে কোন এক পিতৃহারা কন্যা। একটু পরে পরেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে আকাশ চিরে। মনে হয় মনের ইচ্ছেতে কেউ কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করছে। এভাবেই রাত পেরিয়ে ভোর আর ভোর গড়িয়ে সকাল। সকালের আলো চোখে লাগার আগেই কানে ভেসে আসে এক বিষাদ সুর। মনের অন্তস্থল থেকেই কারা জানি হৃদয় নিংড়ে দুঃখ বিলিয়ে দিচ্ছে নগরীর প্রত্যেকের মনে মনে। সুর্যের লাল আভা যখন মিলিয়ে যাচ্ছে তখন নগরের সড়কগুলোতে কালো পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরিহিতা আবালবৃদ্ধবনিতা নেমে এসেছে ঘুম ভাঙ্গা চোখে বিষাদ মাখা মুখমন্ডলে। সবাই ছুটছে এক দিকে, গন্তব্য একটাই ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার।

সকাল ছয়টা বাজতেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে একত্রিত হতে শুরু করে সমস্ত নগরী।

আজ ১৫ আগস্ট, আজকের এই দিনেই বাংলাদেশ হারিয়েছে তার স্বাধীকারের জনককে। পিতা হারানোর শোক পালন করতে এসেছে তার সন্তানেরা৷ আপামর জন সাধারণ থেকে শুরু করে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতীক সংগঠন, অঙ্গ সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন সকালের শুরুতেই জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। এর পরে সাধারণ জনগন ও অন্যান্য রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান বেলা ১২ টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানাতে আসে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে।

সকাল এগারোটায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন বাংলাদেশে ভিজুয়াল রেডিওর প্রথম ধারণা দানকারী আর কে ত্যাজ। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, আমার বেড়ে ওঠা দেশের বাহিরে কিন্তু সেখান থেকেও আমি এই স্ববাক কবি,রাজনিতির কবিকে(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ফীল করতাম। খুব কষ্ট হয় আমাদের জন্যে অকাতরে জীবন দিয়ে দেওয়া এই মানুষটার জন্যে। শুধু কষ্টই না লজ্জাও হয় এমন একটা মানুষের হত্যাকারী আবার আমরাই।

সাভার থেকে এসেছেন শেখ রাফায়েত৷ তিনি বলেন, গত রাতেই ঢাকায় এসেছি জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাবো বলে কিন্তু কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যে রাতে আমার নেতার বাড়ির আসে পাশে ঘিরতেই পারি নাই। কাছে ধারেই কোথাও থেকেছি খুব সকালে শ্রদ্ধা জানাবো তাই। নানা কারণে সকালে শ্রদ্ধা জানাতে পারি নাই। কষ্ট হয়েছে অনেক কিন্তু সেগুলো আমি গায়ে মাখি না৷ এখন যখন ফুল হাতে জাতির পিতার প্রতিকৃতির সামনে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমার হাত -পা অবস হয়ে গেছিলো। ওখান থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা ছিল না আমার। মনে হচ্ছে তাঁর প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলি "আমাদের ক্ষমা করুন, আমরা আপনার ব্যর্থ সন্তান।

প্রতিবার শোক দিবস এলেই চলাচলের রাস্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয় নিরাপত্তা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষের গন্তব্য সহজ করতে। এর কারনে জ্যামের সৃষ্টি হয়। এবার নগরীতে তেমন কোন জ্যামের প্রভাব পড়েনি। এর কারণ হিসেবে ধানমণ্ডি সাতাইশ নাম্বার সিগন্যালে দায়ীত্বর এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এবার ১২ টা বাজতেই আমরা রাস্তা খুলে দিয়েছি। রাস্তায় চলা যাত্রীদের উপর কোন জ্যামের প্রভাব পড়েনি। এর কারণ হিসেবে এই কর্মকর্তা আরো একটা বিষয় বলেন, ঈদের ছুটির কারণে এখনো কর্মমূখী মানুষ ঢাকায় ফিরেনি তাই মানুষ কম, জ্যামও কম।

এদিকে সারা নগরী ঘুরে দেখা যায়, নগরের প্রত্যেকটি প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে মাইক লাগানো। সেখান থেকে ভেসে আসছে " যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই......"। প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাট এবং বাড়িতে কালো পতাকার সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে এক ছোট্ট শিশুকে ফুল বিক্রি করতে দেখা যায়। এগিয়ে গিয়ে তার কাছে ফুলের দাম জিজ্ঞেস করেন এক পথচারী। পথচারী একটি বেলী ফুলের মালার দাম জানতে চাইলে,উত্তর দেয় পশিচ টাকা। পালটা প্রশ্ন,দাম এত বেশি কেন? তখন হাস্যজ্জ্বল মুখে উত্তর দেয় ফুল বিক্রেতা শিশু। যদি বঙ্গবন্ধুর লাইগা লন, তাইলে এক টাকাও লমু না। আইজকা মেলা ফুল বেচছি, সবাই বেশি বেশি টাকা দিয়া ফুল কিনছে। আপনে নিবেন? প্রতিউত্তরে আরো একটা মুচকি হাসি পেলো সে।

এছাড়াও ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে শোক দিবস পালন করছে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭