ইনসাইড গ্রাউন্ড

হাশিম আমলা- ক্রিকেটের এক নিপাট ভদ্রলোক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/08/2019


Thumbnail

ক্রিকেটকে বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। আর হাশিম আমলা হচ্ছেন সেই খেলার একজন উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বছরের পর বছর উইলো হাতে ক্রিকেটবিশ্ব শাসন করেও যে পার করেছেন সাধাসিধে এক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ১৫ বছরের দীর্ঘ সময় ২২ গজে থেকেও যাকে ছুঁতে পারেনি কোন বিতর্ক, কোন অক্রিকেটীয় সমালোচনা। ক্রিকেটের এই নিপাট ভদ্রলোক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন এক অনবদ্য ক্রিকেট সফরের শেষে। 

টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো ২০০৪ সালে, ভারতের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনের ঘুর্ণি পিচে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সমালোচিত হয়েছিলেন দুর্বল টেকনিকের কারণে। জাতীয় দলে তখন স্মিথ, ডিপেনার, গিবস, ক্যালিসদের ভিড়ে টপ অর্ডারে জায়গা পাওয়া ভার; নিল ম্যাকেঞ্জিও তখন সুযোগ পেয়ে ডাবল সেঞ্চুরী হাঁকান।

জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়ে ফিরে গিয়েছিলেন কাওয়াজুলু নাটালের দলে; তার আতুঁড়ঘরে। টেকনিক শুধরে দলে ফিরলেন যখন, ক্রিকেটবিশ্ব এক অন্য হাশিম আমলাকে পেল। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের বাধ্য ছাত্র তিনি, গ্রামার মেনে এতটা পারফেক্ট শট এই পাওয়ার ক্রিকেটের যুগে আমলা ছাড়া কে-ই বা করতেন?

প্রথার বাইরে কোন শট খেলতেন না, অথচ উইলোর ছোঁয়ায় বল মাঠের সব কোণেই পৌঁছে যেতো অদ্ভুত সাবলীলতায়। ক্রিস গেইলের মতো গায়ের জোর ছিল না, ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্ষিপ্রতা ছিল না, ছিল না কোহলীর খুনে আগ্রাসনও; অথচ আমলা যতোক্ষন ক্রিজে থাকতেন, রানের চাকা বনবন করে ঘুরতে থাকতো। বলটা লাল হোক কিংবা সাদা, বোলার স্টার্ক হোন কিংবা হেরাথ; মাঠটা দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া-কিংবা ভারত- যেখানেই হোক না কেন, আমলার ব্যাটের সাথে রানের স্পিডোমিটার ওপরেই উঠতেই থাকতো।

আমলার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সাথে বাংলাদেশের নামও জড়িয়ে আছে। ৯ মার্চ ২০০৮, চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষেই রঙিন জার্সিতে অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আগমনটা একটু দেরীতে, আর তাই হয়তো এই ভার্সনের সব রেকর্ড নিজের নামে লিখিয়ে নিতেই মাঠে নামতেন তিনি।

ধারাবাহিকতা কি, সেটির সংজ্ঞা বোঝাতে কেউ হাশিম আমলাকে দেখিয়ে দিতে পারেন। ওয়ানডেতে দ্রুততম সময়ে দুই, তিন, চার, পাঁচ এবং ছয়, সাত এবং আট হাজার রান সংগ্রহের রেকর্ডগুলো তার নামের পাশে, পেছনে ফেলেছেন ক্যারিবিয়ান গ্রেট স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস এবং সমসাময়িক বিরাট কোহলিকে। একমাত্র আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরী করেছেন, প্রথম আফ্রিকান অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরী হাঁকিয়েছেন শ্রীলংকার বিপক্ষে।

দ্রুততম রান সংগ্রহের কথা তো বলা হলোই, সবচেয়ে কম ইনিংসে ১০, ১৫, ২০ এবং ২৫তম সেঞ্চুরীর রেকর্ড আমলার দখলে। বিদায় যখন বলছেন, তখন নামের পাশে ওয়ানডে সেঞ্চুরীর সংখ্যা ২৭টি; মাত্র ১৭৮ ইনিংসে। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে করেছেন সেঞ্চুরী।

নামের পাশে বিতর্ক নেই, কাউকে অসম্মান করে কিছু বলেছেন বলে দাবী করেনি কেউ আজ পর্যন্ত; ক্রিকেটারদের মোক্ষম অস্ত্র স্লেজিং শব্দটা তো আমলার অভিধানেই নেই। দারুণ একটা শট খেলেই বোলারের দিকে তেড়ে যাননা, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেননা প্রতিপক্ষকে। তাঁর মধ্যে যেটা আছে সেটা পরিপূর্ণ বিনয়, প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা। ২০০৬ এর পর ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে ছাড়া বড় আকারের রানখরায় ভোগেননি কখনও। শেষটা ভালো হলো না, এই আক্ষেপটা নিশ্চয়ই বাকি জীবনটা একটু হলেও পোড়াবে তাকে। 

ওয়ানডেতে প্রায় পঞ্চাশ গড়ে আট হাজারের বেশী রান, টেস্টে সেটা নয় হাজারের বেশি। গড় ৪৬; সেঞ্চুরী ২৮, হাফসেঞ্চুরী করে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন ৪১ বার। ইনি হাশিম আমলা, যাঁকে ডিন জোন্স মজা করে টেরোরিস্ট ডেকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন। ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে মদ স্পর্শ করতেন না, জার্সিতে নেশাজাতীয় পানীয় প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো ব্যবহার নিয়েও আপত্তি করেছিলেন। যার ব্যাটটা তুলি হয়ে সবুজ মাঠের বুকে মায়াবী আলপনা আঁকতো, আর কলম হয়ে রেকর্ডের পাতায় রেখে যাতো তার কীর্তিগুলোর স্বাক্ষর।

বাংলা ইনসাইডার/এসএম



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭