কালার ইনসাইড

জহির রায়হান একজন রাজনীতিবিদও ছিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/08/2019


Thumbnail

জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এবং মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুনের আট সন্তানের পরিবারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার প্রকৃত নাম আবু আবদাল মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ এবং ডাকনাম জাফর। বাবার কলকাতার এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার কারণে তিনি পরিবার সহ কলকাতায় থাকতেন। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তারা সপরিবারে ঢাকায় ফিরে আসেন।

কলকাতায় ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ার সময় বড় ভাইয়ের প্রভাবে জহির রায়হান প্রথম রাজনৈতিক সংস্পর্শে আসেন। এসময় তিনি কলকাতায় রাস্তায় রাস্তায় ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকা বিক্রি করতেন কমিউনিস্ট পার্টির জন্য। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলমান সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় সমর্থক

ছোটবেলা থেকেই তিনি বাঙালি জাতির উপর চলা বর্বরতা দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন। তার লেখনী আর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এগুলো অনেক স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাজনীতির সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত না থাকলেও বাংলাদেশের সকল ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে  আন্দোলন করেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। এসময় তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে জেলে পুরে দেয়। এই জেলে বসেই তিনি ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ রচনা করেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। এসময় বহু পত্রিকায় তার আইয়ুব খান বিরোধী লেখা ছাপতে থাকে। তার তৈরীকৃত ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সরাসরি বাঙালিদের উপর পাকিস্তানি সৈন্যের বর্বরতার চিত্র ফুটিয়ে তোলে। বিখ্যাত ব্যক্তি হওয়ার কারণে ও নিজের  চলচ্চিত্র ও লেখার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি কলকাতায় চলে যান। তিনি সে সকল ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও দেশের স্বাধীনতা লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কলকাতায় থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচার অভিযান শুরু করেন। ভারত ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন। এসময় চরম অর্থকষ্টে থাকা সত্ত্বেও নিজের লেখা ও চলচ্চিত্র থেকে আয় করা টাকা মুক্তিযুদ্ধ ফান্ডে দান করেন। বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র তৈরির মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রচারণা চালান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি প্রোপ্যাগান্ডা অনেক অপপ্রচার শুরু করে। এসব দেখে ক্ষুদ্ধ হয়ে তিনি একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তার এই প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ পৃথিবীব্যাপী অনেক সাড়া ফেলে। এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিকতা সম্পর্কে বাইরের দেশগুলোতে ঘরে ঘরে মানুষ জানতে পারে। জহির রায়হান রাতারাতি দেশের বাইরে অনেক পরিচিতি পেয়ে যান। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা তখন তার সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করে।

কলকাতার একটি পত্রিকায় জহির রায়হান সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি জহির রায়হান। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নই। আমি কেবল  একজন লেখক এবং চলচ্চিত্রকার। কিন্তু আমি বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় দেখেছি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো আমি কিছু পাকিস্তানি মিলিটারিদের একটা অপারেশনের সময় একটা মুভি ক্যামেরা হাতে রাস্তায় চলতে দেখতাম। তারা মানুষ গুলি করে মারার পর সেই মুভি ক্যামেরা দিয়ে মৃত লাশগুলোর ভিডিও চিত্র নিতো। ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর সেগুলোর ভিডিও চিত্র নিতো। তারা কিছু বাঙালিকে একত্র করে একটা দোকান লুট করতে বাধ্য করে। নিজেদের মুভি ক্যামেরা দিয়ে তারা সেই লুট করার ভিডিও চিত্র ধারণ করে। এরপর আমি শুনেছি এবং পরে নিজে দেখেছি যে তারা এই ধারণকৃত অংশগুলো ইডিট করে। এই ইডিট করা ভিডিওগুলো প্রেসে ছেড়ে দিয়ে বলে যে, বাঙালিরা অবাঙালিদের হত্যা করা শুরু করেছে। এই অরাজক ও বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাদের (মিলিটারিদের)রাস্তায় নামতে হয়েছে। এটি ছিল পুরোপুরি একটা মিথ্যা বানোয়াট কথা।’


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭