ইনসাইড বাংলাদেশ

কোরবানির চামড়া নিয়ে ছিনিমিনি কেন!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/08/2019


Thumbnail

একটু আগে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, কোরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ঐ সিদ্ধান্তে অনড় থাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করলে দেশীয় শিল্পের স্বার্থে ঐ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।

সচিব মহোদয় যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হলে আমরা হয়তো রপ্তানি করতে দিবো না। অন্যথায় কেস টু কেস ভিত্তিতে ওয়েট ব্লু (কাঁচা চামড়ার পশম ও ঝিল্লি ছাড়ানোর পর যে অংশ থাকে) রপ্তানির সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাঁচা চামড়ার বাজারে ভারসাম্য আনতে ও সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষা করতে চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত হবে না। কেননা ট্যানারি মালিকদের হিসাবেই এখনো অর্ধেক চামড়া অবিক্রীত রয়ে গেছে। ফলে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন।

এদিকে আজ থেকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনতে শুরু করছেন ট্যানারি মালিকরা। রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেওয়ায় অতীতের মতো যেনতেন মূল্যে চামড়া কেনার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকরা চামড়া রপ্তানির বিপক্ষে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ট্রেজারার মিজানুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে লাভবান হবে আড়তদাররা। তারা কিনেছে নামমাত্র দামে। এখন বিক্রি করবে অনেক বেশি দামে। ইতিমধ্যে তারা শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। বলেছে, শতভাগ নগদ টাকা ছাড়া কোন চামড়া বিক্রি করবে না। রপ্তানির সিদ্ধান্তে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পাবে। গতবারের অর্ধেক চামড়া অবিক্রীত থাকা সত্ত্বেও এবার বাড়তি চামড়া রপ্তানিতে আপত্তি কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবিক্রীত থাকা চামড়ার একটি অংশের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের ঠুঁটো জগন্নাথ বা রিপোর্টিং অফিসারের মন্ত্রী মহোদয়ের মুখ দিয়ে আবার আবোল তাবোল বাক্য বেরুচ্ছে। পুরাতন ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময়ও তাঁর মুখে বেফাঁস কথা এসেছে। একজন সিনিয়র উকিল ও রাজনীতিবিদের এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে, মন্ত্রী মহোদয় নীল কণ্ঠ হয়ে চামড়া কেলেঙ্কারির সমস্ত দায়ভার নিজ কাঁধে নিতে চান। কিন্তু কেন? তাতে কী তাঁর নিজের লাভ না দলের লাভ না সরকারের লাভ না জনগণের লাভ! লাভ একটা থাকতেই হবে, তা না হলে কাজ হবে কেন? সরকারী দলের কর্মী সমর্থকদের সবাই প্রশ্ন করছেন-  

  সরকার বেঁধে দেওয়া মূল্য অগ্রাহ্য করে বা আদেশ অমান্য করে যারা ‘ছিনতাইকারী হয়ে’ এতিমের হক কোরবানির প্রায় ৫ শ’ কোটি টাকার চামড়া বিনা পয়সায় ছিনিয়ে নিলো তাদের কি বিচার হবে?

  চামড়া রপ্তানি করতে না দিলে ট্যানারি মালিকদের হাতে আবার চামড়ার আড়তদার নামক ‘গরীবের হক কোরবানির চামড়া ছিনতাইকারীরা’ আবার ব্র্যাকেট বন্দি বা জিম্মি হবে টাকা পাওনায়, তাঁর কি হবে?

  যারা চামড়ার আড়তদারদের চামাড়া সরবরাহের জন্য পাওনা ন্যায্য টাকা বাকী রেখে এতিমের হক মারার সুযোগ করে দিলো তাঁদের কী বিচার হবে?   

  দেশের মানুষের আর্থিক উন্নতির কারণে গত ৪/৫ বছর ধরে বেশি পশু কোরবানি হচ্ছে। এটা কোন হঠাৎ হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটা কয়েক বছরের ষড়যন্ত্রের সফল বাস্তবায়ন। যার নমুনা কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছিলো। যে পরিমাণ কোরবানির চামড়া উৎপাদিত হচ্ছে, তা হজম মানে ব্যবহার করার ক্ষমতা কি আমাদের দেশের সাকুল্য ট্যানারি মালিকদের আছে? 

  গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজার নিয়ে সমস্যা। তাহলে কোরবানির আগে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হল না, এর জন্য দায়ী কে বা কারা? তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হবে তা কি দেশের মানুষ জানতে পারবেন?

  সচিব মহোদয় যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ তিনি পরিষ্কার করে কোন কথা বলেন না কেন! কেন মন্ত্রীকে দিয়ে কথা বলিয়ে এটাকে প্রশাসনের রাজনৈতিক অংশের ব্যর্থতা বলে চালানো চেষ্টা হয়। এর দায়ভার কেন সরকার বা সরকারী দল নেবে? 

  কয়েক শ’ কোটি টাকার চামড়া কেলেঙ্কারি করে যারা সরকারী দল তথা রাজনীতিবিদগণের কোটি কোটি টাকার ইমেজ নষ্ট করলেন তাঁদের কী হবে?  

  বাংলাদেশে চামড়া শিল্প লাভজনকভাবে চলে না, অন্য দিকে পাশের দেশ ভারত, যেখানে গরু জবেহ নিষিদ্ধ প্রায় দেই দেশে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ট্যানারি শিল্প (হাব) এত দ্রুত উন্নতি লাভ করছে বা বেড়ে উঠছে, এর মাজেজা কী?     

এমন শত প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষের মনে তার জবাব কে দেবেন? দায়িত্ব কি শুধু একা প্রধানমন্ত্রীর না আরও কারো আছে? কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের পরে আবার চামড়া রপ্তানিতে দোদুল্যমানতার পিছনে কারো সম্ভাব্য আর্থিক লাভ জড়িত আছে কি? নাকি ব্যালান্স করার জন্য করা? এসবের মীমাংসা জরুরী।     

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭