নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 21/08/2019
গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে আছে কাশ্মির। উপত্যাকাজুড়ে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট, দোকান পাট বা অফিস আদালত সর্বত্রই সেনাসদস্যদের টহল। কিন্তু এত পাহারার মধ্যেও কাশ্মিরের একটি এলাকায় এখনও প্রবেশ করতে পারেনি সেনারা। কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটির নাম সুরা। লাখ লাখ সেনাবেষ্টিত উপত্যকার অভ্যন্তরে এটি এখনও এক মুক্তাঞ্চল হয়ে আছে। এলাকার সব প্রবেশপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন সেখানকার তরুণরা। ইট-কাঠ-পাথরকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা পালা করে ২৪ ঘণ্টা সেখানে পাহারারত রয়েছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ হাজার মানুষের এই এলাকাটিই এখন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সুরার নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা মরিয়া, তবে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুরার তরুণরা অবস্থান করছেন রাজপথে। ১২টির মতো প্রবেশপথের প্রত্যেকটিতেই ইটের ব্যারিকেড, মেটাল শিট, ট্রাংক কিংবা কাঠের পাটাতন দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে তারা। এই দেয়ালের পেছনেও দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার স্থানীয় তরুণরা। অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে পাথর। তাদের লক্ষ্য একটাই, কিভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে আধাসামরিক পুলিশকে ঠেকিয়ে রাখা যায়।
এজাজ নামে ২৫ বছর বয়সী এক কাশ্মিরি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাই ভেতরে ভেতরে আমরা বিস্ফোরিত হচ্ছি। তার মতো অনেকেই সাক্ষাৎকার দিলেও নাম প্রকাশে রাজি হয়নি। তাদের আশঙ্কা এতে করে গ্রেপ্তার হতে হবে তাদের। তারা বলছেন, ‘বিশ্ব যদি আমাদের কথা না শোনে তবে আমাদের কী করা উচিত? আমরা কি অস্ত্র হাতে তুলে নেব।’ এজাজ বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা প্রহরায় আছি।
সুরার বাসিন্দারা জানান, যখনই কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদে গিয়ে সতর্কবাণী বাজান। লাউডস্পিকারে গান বাজাতে থাকেন। ‘অবৈধ দখলদারিত্বে’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেই গানে।
এর আগে ৯ আগস্ট জুমার নামাজের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি এই সুরাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। আশপাশের বাসিন্দারা এসেও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে অন্তত ১০ হাজার মানুষের। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান বাসিন্দারা। একটা সময় ছররা ও টিয়ার গ্যাসও ছুঁড়ে পুলিশ।
ভারত সরকার প্রথমে এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানায়, সুরায় ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি। পরে বিবিসি ও আল-জাজিরায় প্রকাশিত ফুটেজে বিক্ষোভের চিত্র হাজির হলে সরকার জানায়, এক হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো।
সুরায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তবে কাশ্মির ইস্যুতে সরকারবিরোধী প্রতিরোধে তারাই এখন মূলকেন্দ্র। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য তা এখন ‘নো গো জোন’। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলই এখন নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য বড় চালেঞ্জ।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭