ইনসাইড থট

রক্ত চোষা জোঁকের একাল ও সেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/08/2019


Thumbnail

ঔপন্যাসিক ও কবি, উইলিয়াম গোল্ডিং একটা মজার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়, নারী বোকা বলেই নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ ভাবে। আসলে তারা সব সময়েই পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাবান। একজন নারীকে তুমি যা কিছু দেবে, সে তা অনেকগুণ বড় বানিয়ে ফেরত দেবে। তুমি যদি তাকে একটি শুক্রাণু দাও, সে তোমাকে একটি শিশু দেবে। তুমি যদি তাকে একটি ঘর দাও, সে ঘরকে তোমার জন্য বাড়ি বানিয়ে ফেলবে। তুমি যদি তাকে বাজার করে দাও, সে তোমাকে খাবার দেবে। তুমি যদি তাকে একটু হাসি দাও, সে তার পুরা হৃদয়টাই তোমাকে দিয়ে দেবে। একজন নারীকে যা’ই দেয়া হয়, সে তা বহুগুণে ফিরিয়ে দেয়। সুতরাং, যদি তুমি তাকে ইটকেলটি মারতে চাও, হাজারটা পাটকেল খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাও’। কী অসাধারণ এই কথামালা।  

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে ভিন্ন একটা কথা মনে পড়ে যায়। যেটা সর্বাংশে সত্যি না হলেও অনেকাংশেই সত্যি। একজন বলেছেন, ‘তুমি আমাকে সরকারী যে কোন উন্নয়ন দপ্তরের সামান্য একটা চাকরি দাও আমি তোমাকে কোটি কোটি টাকার মালিক বানিয়ে দেবো, তোমাকে রাজ প্রাসাদ বানিয়ে দেবো, তোমাকে আমেরিকা, ইউরোপের পাসপোর্ট দিয়ে দেবো। যা চাও তুমি তোমাকে তাই দিয়ে দেবো’!

পত্রিকায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন ক্রয়, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসা দেওয়া, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইকুইপমেন্ট ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যে কী সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে, হচ্ছে তা খবরের কাগজ দেখলেই আর দুদকের মামলা দেখলেই বুঝা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহায়ক কর্মী যদি কয়েক শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যায় ১০/১৫ বছরে তা হলে তাঁর সহযোগী বসেদের অনেকেই কম করে হলেও শত শত কোটি টাকার মালিক।

কিশোরগঞ্জ থেকে ফাইজুল হক গোলাপ। কিশোরগঞ্জে জমি অধিগ্রহণের প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম। ধরা পড়েছে ১৫ কোটি নিয়ে যা ধরা পড়েনি তাঁর পরিমাণ কত? কয়েকদিন আগে তাঁর বাসায় বস্তা বোঝায় টাকা পাওয়া যায়। এই যদি তাঁর অবস্থা হয় তাহলে তার অপকর্মের সহযোগী বসদের অবস্থা কী হতে পারে।

ইউটিউব বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানা যায় যে, সিলেট কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন)-এর ঢাকার বাসা থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সহজে এটি সম্পন্ন হয়নি। মহোদয়ের স্ত্রী নানা কৌশল খাটিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত পাশের ফ্ল্যাটের ছাদে ৫০ লাখ টাকার বস্তাও ছুঁড়ে মেরেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি বলেছেন এটা তাঁর অংশের টাকা, উপরের বড় সাহেবদের উনি আরও অনেক বেশি টাকা দিয়েছেন।

এমন কি দুদকের কর্মকর্তা, পুলিশের ডিআইজি ও বন বিভাগের কর্মচারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অনেক গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বলা বাহুল্য, এটি সমাজের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশের ছবি। সরকারী চাকরিজীবীদের ওপরের পর্যায়ে যারা রয়েছেন তাদের ভেতর কত ভাগ বড় ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, সেটি এক বিরাট প্রশ্ন। নগদ টাকার লেনদেন ছাড়াও যে বিচিত্র উপায়ে ও কৌশলে বিচিত্র লেনদেন হতে পারে সেটি ভুক্তভোগীরা বিলক্ষণ জানেন।

দুদকের একটি সূত্রে বলা হয়েছে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অংশ হিসেবে ভূমি, শিক্ষা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সড়ক বিভাগসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

২০০৭ -২০০৮ এর স্বঘোষিত দুর্নীতিবাজেরা এখনো বহাল তবীয়তে চাকরি করছেন, প্রোমোশন পেয়ে মিলিয়নিয়ার মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে উন্নত দেশে চলে যাচ্ছেন, যেমন গেছেন আমাদের বাংলার দুর্নীতির বরপুত্র লন্ডন রহমান সাহেব। সেখানে থাকছে বা আছেন বহাল তবীয়তে। বিদেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিয়ে চালাচ্ছে দেশ ও উন্নয়ন বিরোধী নানা অপপ্রচার। যাদের মূল লক্ষ্য সরকারের বা রাষ্ট্রের প্রশাসনের রাজনৈতিক অংশ।     

আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি বলে চিহ্নিত হয়েছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার আন্তরিকতার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ধারণা একদম পরিষ্কার। তিনি চার হাত পায়ে দুর্নীতি সরিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে করে যাচ্ছেন অহোরাত্র কঠোর পরিশ্রম। পাশাপাশি মুষ্টিমেয় কিছু সৎ আমলা আর কিছু সৎ রাজনীতিবিদ নিরন্তর লড়াই করছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা  আর দেশের মানুষের জীবন মানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের কারণে সমাজে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইন পোর্টালের কারণে আর কিছুই গোপন থাকছে না। কে কি করছেন, কার কতটুকু দায় তা তাঁরা জেনে যাচ্ছেন। মানুষ জেনে যাচ্ছে তাঁদের নাগরিক অধিকার আর নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে। তাই সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভের বারুদ জমা হচ্ছে প্রতিদিন। শুধু অপেক্ষা উপযুক্ত নেতা আর সময়ের। জনগণের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা দেখতে দেখতে মানুষ যে বিগড়ে যাবে না ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মত তা কে জানে! মানুষ জেনে যাচ্ছে যে ক্ষমতা অধিকাংশই ভোগ করছেন প্রশাসনের অসৎ আমলা ও তাঁদের সহযোগী অংশ। যা থেকে সচেতন নাগরিকদের নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়ে গণপিটুনির মত অস্ত্র সাধারণ মানুষ হাতে তুলে নিলে দেশে যে কোন মুহূর্তেই হতে পারে মহাবিস্ফোরণ!

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭