কালার ইনসাইড

‘একটা লম্বা বিরতিতে যাবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/08/2019


Thumbnail

ঈদ অনুষ্ঠানমালায় নাট্য নির্মাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। তার মধ্যে বেশকিছু কাজ আলোচিত হয়েছে। সময়ের জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ কথা বললেন ঈদের নাটক ও সামনের দিনের পরিকল্পনা নিয়ে।

অভিনয়শিল্পীরাও যেমন অনেক কাজ করলে সমালোচনায় পড়েন, এবার ঈদে আপনারও বেশকিছু নাটক-টেলিফিল্ম প্রচার হয়েছে। দর্শকের সমালোচনার মুখোমুখি কিংবা মান ঠিক রাখতে পেরেছেন?

মাবরুর রশীদ বান্নাহ: সমালোচনাটা হচ্ছে ব্যক্তিগত ব্যাপার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইচ্ছে করলেই বলা যায় এর মতো বিচ্ছিরি পরিচালক আর একটি নেই। কিন্তু যখন সেই পরিচালক সেটা জানতে চাইবেন যে বাজে বললেন কেন? তখন যদি কেউ তার যুক্তিসঙ্গত কারণ বলতে না পারেন। তাহলে তো ওই কথার কোন ভিত্তি থাকে না। আমার কথা হচ্ছে আমি যদি কোয়ালিটির সঙ্গে কোয়ানটিটি মিক্স করে করতে পারি, আমার কাজ যদি ভালো হয়, তাহলে তো আর কোন সমস্যা থাকেনা। আমি সেটাই জানতে চেয়েছি, এমনকি আমি এটাই বলবো আমার যদি কোন কাজ খারাপ হয়ে থাকে তাহলে বলুক সেটা, এই কাজটা খারাপ হয়েছে। আমি চেষ্টা করবো নিজেকে ওই জায়গা থেকে শুধরে নিতে, বা আমি পরবর্তীতে ঐটা করবো না। কারণ দর্শকের রিঅ্যাকশন আমি অনেক বেশি গুরুত্ব দেই। তাছাড়া আমি একশত নাটক একশত মানুষকে ভালো লাগাতে পারবো না, এটা সম্ভব না। কারো নাটক ১০০% ভালো লাগেনা। একজন অভিনেতা যেমন অনেকগুলো নাটকে একসাথে অভিনয় করে, তাকে এই প্রশ্নটা করা যেতে পারেনা আপনি কেন এতগুলো নাটকে অভিনয় করলেন। একজন ডিরেক্টরকে তাহলে এই প্রশ্নটা কেন করবে! আপনি এতগুলো নাটক কেন করলেন! আর একটা তথ্যগত ভুল সবাই করছেন। আমার আসলে ১৮টি নাটক রিলিজ হয়নি। এবার সব মিলিয়ে রিলিজ হয়েছে ১৪টি নাটক। একটা তথ্যগত ভুল চারদিকে দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যে ৫ টি নাটক করা ছিলো আগে, আর নতুন নাটক করেছি ৯ থেকে ১০টি। আমার সমালোচনা আর আলোচনা যেটাই বলেন, আমি সমালোচনার থেকে পজেটিভ রিভিউই বেশি পাচ্ছি। যদি আমি এমন দেখতাম ১০টি কমেন্টের মধ্যে ৮টি কমেন্ট খারাপ আসছে তাহলে আমি কনফার্ম থাকতাম। গড়পড়তায় আমাকে নিয়ে পজেটিভ কত পার্সেন্ট বলছে আর নেগেটিভ কত পার্সেন্ট বলছে? সাধারণ মানুষ কি বলছে আমার নাটক নিয়ে? বোদ্ধা শ্রেণীর দর্শক আমি খুব একটা গ্রাহ্য করিনা। কারণ তারা সার্বিক দিক বিবেচনা করে কথা বলেন না। সাধারণ মানুষ যদি দেখি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো বলছে তাহলে আমি মনে করি আমি ঠিক আছি। আর যদি দেখি সাধারণ দর্শক বলছে নেগেটিভ বেশি তাহলে আমি বলবো আমি ঠিক নাই , আমি ভুল করেছি। আমার রেসপন্স এখন পর্যন্ত অনেক ভালো। আলহামদুলিল্লাহ এবার ঈদটা আমার ভালো কেটেছে। আর একটি কারণে আমি বেশ খুশি যে, ইউটিউবের চেয়েও এবার দর্শক টিভিতে নাটক দেখে বেশি রেসপন্স করেছে। 

বেশি রেসপন্স পাচ্ছেন কোন নাটকগুলোতে?

আশ্রয়, ডেইট, মুগ্ধ ব্যাকরণ, এটাই ভালোবাসা, থার্ড জেন্ডার- র‌্যাংকিং করলে এগুলোকে টপে রাখা যায়। পাশাপাশি ‘আমি মিস্টার পরিস্কার’, ‘লেডি কিলার২’সহ অন্যান্য নাটকগুলো থেকেও প্রত্যাশিত রেসপন্স পাচ্ছি। মোট কথা হচ্ছে যে, ইয়ুথ নিয়ে যে কয়টা কাজ করেছি। যেমন থার্ড জেন্ডারটা নির্মাণ করলাম হিজরা শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে। নাটকটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ‘এক’ নাম্বারে চলে আসছিল। থার্ড জেন্ডারে শাওন আর ফারহানের মতো তরুনদের নিয়ে করা নাটকটি যে এত মানুষ দেখবে এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। অন্যান্য কাজগুলোর মধ্যে তাহসান ভাই ও মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে যে কাজগুলো করেছি এবার আমি, সেগুলো স্পেসিফিকেলি প্রত্যেকটা কাজের রেসপন্সই খুব ভালো।

তারপরও ‘আশ্রয়’ নাটকটি থেকে তো একটু বেশি রেসপন্স পাওয়া হচ্ছে?
 
এই কাজটা হলো এবার ঈদে আমার সবচেয়ে ‘ম্যাচিউরড’ কাজ। ‘আশ্রয়’ যিনি দেখেছেন, সেই আমাকে কাজটি নিয়ে জানাচ্ছেন কোন না কোনভাবে। কাজটা মানুষ পছন্দ করছে ভালোবাসছে, প্রচুর টেক্সট পাচ্ছি। এমন এমন মানুষ রেসপন্স করছেন যাদের কাছ থেকে সাধারণত আমি নাটকের রেসপন্স পাইনা। সেটা আমার কাছে উল্লেখযোগ্য বিষয়। নাটকের এই দর্শক শ্রেনীটা হয়তো আমার মিসিং ছিলো, ওই দর্শকগুলোও আমার এই নাটক নিয়ে পজেটিভ রেসপন্স করছে।

‘আশ্রয়’- টেলিফিল্মের আইডিয়াটা মাথায় আসলো কেন?

আইডিয়াটা খুব সিম্পল, যদি সন্তান এডপ্ট করা যায় তাহলে মা বাবা এডপ্ট করা যাবে না কেন! এই সমাজে তো অনেকেই অন্যের সন্তানকে এডপ্ট করে। তাহলে যেই সন্তানের বাবা-মা নেই। তারা তো চাইলে বাবা-মাও এডপ্ট করতে পারে। এই গল্প ভাবনাটা দিয়েছেন নাটকটা প্রডিউসার আকবার হায়দার মুন্না ভাই। এই লাইনটাই উনি আমাকে বলছেন, কেন হয় না? আমি আর সেতু আরিফ মিলে বাকিটা ঠিক করেছি। স্পেশালি প্রথম দৃশ্যটার স্ক্রিনপ্লে আমি তৈরী করার পরে সেতু আরিফকে দিই, তারপর সে পান্ডুলিপি তৈরী করে। একটা টিমওয়ার্ক ছিলো কাজটার মধ্যে। আশ্রয় নাটকে আটিস্টরা আমাকে যে পরিমানে সাহায্যে করেছে সেটা অবিশ্বাসযোগ্য। চারজন নাটকের সুপারস্টার এখানে কাজ করেছেন। মোশাররফ ভাই এবং মম বৃদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছে। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং ক্যারেকটার। আমার সব থেকে বড় অস্ত্রটা ছিলো এটার গল্পটা। সবচেয়ে বড় হাতিয়ার গল্পটা। এই অ্যাডভান্টেজ পয়েন্টা দিয়ে সবার কাছে বলতে সাহসটা পাই। গল্পটা প্রথমে শোনাই মোশাররফ ভাইকে, তারপর তাহসান ভাই, তারপর তিশা- মমকে। যাকে যখনি শুনিয়েছি, খুব পজেটিভ রেসপন্স দিয়ে সবাই রাজি হয়েছে। কেউ দুইবার চিন্তা করেনি কাজটি করার জন্য। মোশারফ ভাইকে বলেছি ৬০ বছরের বৃদ্ধের অভিনয় করতে হবে। সবাই আমার কথায় সাড়া দিয়েছে। অভিনেতা অভিনেত্রীরা কী পরিমান হেল্প করতে পারে তা আশ্রয় করার পরে বুঝতে পেড়েছি। আমি অনেক নাটক করেছি কিন্ত এতটা হেল্প কোন নাটকেই আর্টিস্টদের থেকে পাইনি।

এই ঈদের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নাটক বলেও শোনা যাচ্ছে…

এটার ক্রেডিট দিতে হয় আকবর হায়দার মুন্না ভাইকে। এই প্রোডাকশনটা অনেক ব্যয়বহুল। এটার বাজেট হাই ছিলো এটা সবাই বুঝেছে। এর চেয়ে বেশি বাজেটে এবার ঈদে কোন নাটক আছে কিনা জানি না। এখানে আর্টিস্টদের পারিশ্রমিকই একটা বড় অংক ছিল। মুন্না ভাইয়ের টার্গেট ছিলো একটা ভালো কাজ করতে চাই। টাকা কোন বিষয় না। এখানে যদি আমার ক্ষতি হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই। এটা ছিলো মূললক্ষ্য। তিনি টাকা পয়সার দিকে তাঁকায়নি। তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছে। কোথাও কোন কৃপণতা নেই, কোথাও কোন ছাড় নেই। যেখানে যেখানে টাকা দেওয়া প্রয়োজন মনে করেছে সেখানে সেখানে টাকা তিনি দিয়েছে। যে কারণে আমি অনেক ফ্লেক্সিবল ছিলাম। আমার বিষয়টি হয়েছে অন্যান্য নাটকে নানা দিক নিয়ে ভাবতে হয় এই নাটকে এতটা ভাবতে হয়নি। ডিরেকশন ছাড়া ভাবনার পুরো দায়িত্ব মুন্না ভাই নিয়ে নিয়েছেন। এটা আমার জন্য কাজের ক্ষেত্রে সহজ হয়ে গেছে। আমার শুধু ডিরেশনেই আমার কনস্রেনটেশন ছিল। অন্য কোন কাজে আমার কোন চিন্তা ছিলোনা। আমাদের দেশের ডিরেক্টটররা তো ম্যানেজারিও করে, খেয়েছে কিনা বসছে কিনা, আর্টিস্টকে চেয়ারটা দেওয়া হলো কিনা, টাকাটা দেওয়া হলো কিনা অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করে। সেই চিন্তাটা আমার এই প্রডাকশনে করতে হয়নি।

রোমান্টিক গল্পের নাটক থেকে কি দূরে সরে যাচ্ছেন?

রোমান্টিক কচলাইয়া, চিবাইয়া তিতা বানাইয়া ফেলছি সবাই। আমার কাছে মনে হয়েছে এই রোমান্টিক জনরা আমার জন্য স্টপ। আমি আপাতত এই রোমান্টিকে একদমই কমফোর্টেবল না। কারণ সবাই রোমান্টিক- কমেডি বানাচ্ছেন। সবার ইনটেনশন শুধু ভিউয়ের পেছনে ছোটা। আমরা যখন ‘আশ্রয়’ করি, আমাদের এতটুকু ইনটেনশন ছিল না যে এই নাটকটি অনেকবেশি ভিউ হবে। আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো একটা কাজ করতে চেয়েছি। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভিউ পর্নের। তাই আমি ভিউয়ের পিছনে ছুটি না। রোমান্টিক নাটকে এখন একই আর্টিস্ট একই চরিত্রে দশজন পরিচালকের সঙ্গে করছেন। এখন রোমান্টিক নাটকের নামগুলো ফেলে দিলে আলাদা করা কষ্টকর হবে।

ঈদের পরের ব্যস্ততা কি?

এখন আমি ফুল বিশ্রামে। গত দুই ঈদে অনেক কাজ করেছি। এখন লম্বা ব্রেক নিতে চাই। এখন একটু ভাবতে চাই, পড়াশুনা করতে চাই, সিনেমা দেখতে চাই। অনেকগুলো বই, সিনেমা জমে গেছে। আমি এজন্য একটা লম্বা বিরতিতে যাবো। আমার ইনটেনশন ছিল দুটি ঈদে অনেক কাজ করবো। সবচেয়ে বড় কথা একটু ব্রেক নিয়ে আমি আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। আমি নেক্সট ইয়ারে একই ধরনের কাজ আবার করতে চাই না। একদম নতুনভাবে আসতে চাই।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭