ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিপন্ন আমাজন, কানে তুলো বোলসোনারোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/08/2019


Thumbnail

আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমশ গ্রাস করছে পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনভূমিকে। পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেনের আমদানি হয় ওই বৃষ্টি-অরণ্য থেকে। অথচ দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো কানে তুলো গুজে বসে আছেন। পরিবেশ সংরক্ষনবাদী, বিজ্ঞানী বা গবেষকদের কথা তো তিনি কানে তুলছেনই না, উল্টো একের পর এক তোপ দেগে চলেছেন। কখনও বলছেন এনজিও কর্মীরা বনে আগুন লাগিয়েছে। কখনও বলছেন, গবেষকরা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। কখনও আবার বলছেন, সব ষড়যন্ত্রকারীদের দোষ।

আমাজনের বর্তমান চিত্র যে কারো রক্ত হিম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। যে দিকে তাকানো যায় শুধু কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া।ছাড় পায়নি২৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতব্রাজিলের সাও পাওলোর আকাশ।দুপুরের আকাশ যেন ‘রাতের চেয়েও অন্ধকার’। ব্রাজিলের রোরাইমা প্রদেশ থেকে পেরুর আকাশেও হানা দিয়েছে ধোঁয়া।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে আমাজনে ঘটতে থাকা ৯৫০৭টি নতুন দাবানলের চিত্র।আমাজনের আগুনের উপর নজর রাখছে নাসা। আগুনের তীব্রতার ছবিও পাঠাচ্ছে নাসার একাধিক স্যাটেলাইট।তবে আগুনের থেকেও বিজ্ঞানীদের বেশি ভাবাচ্ছে আগুন থেকে উৎপন্ন ধুম্রজাল। প্রায় ১৭০০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে কালো ধোঁয়া।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদের পাশে প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে উঠেছে সুবিশাল বৃষ্টি-অরণ্য (রেন ফরেস্ট) আমাজন। । নানা নাম না জানা উপজাতির বাসস্থান আমাজন জঙ্গলে রয়েছে ১৬ হাজার প্রজাতির গাছগাছালি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইনপে’-র সমীক্ষা বলছে এ বছর আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যে ৭২,৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৮৩% বেশি! এবং ২০১৩-র তুলনায় দ্বিগুণ! এই প্রকোপ আগের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বলে দাবি ব্রাজিলের ওই সংস্থার।

বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় ওই বৃষ্টি-অরণ্যে জুলাই-অগস্ট মাসে আমাজনের আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক হয়ে ওঠে। তবে স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা, প্রাকৃতিক ভাবে এই আগুন লাগেনি। তাহলে?

ব্রাজিলের ফেডেরাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, শুকনো বাতাসে দাবানল জ্বলে ওঠা অস্বাভাবিক কিছুনয়।তবে এ ক্ষেত্রে দাবানলের প্রকোপে আগুন লাগেনি বলেই মনে করছেন তাঁরা। ওই বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই চাষের জন্য জমি বা খামার তৈরি করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে জঙ্গলে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। সেখানেও এমনটাই হচ্ছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জলবায়ুবিজ্ঞানী কার্লোস নোব্রে বলেছেন, গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে জমি ব্যবহার করতে চাওয়া কৃষকেরা জায়গা পরিষ্কার করতে শুকনো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় বন দাহ্য হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই তাতে আগুন লাগে।যদিও সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের গবেষক নোব্রের মতে আমাজনে কর্মরত এনজিওগুলো কৃষিকাজে আগুন ব্যবহার করে না। তারা বরং লোকজনকে আগুন ব্যবহার না করতে উৎসাহিত করে।

খনিজ পদার্থের ভাণ্ডার আমাজন। খনিজ পদার্থ অন্বেষণের জন্য আমাজন অরণ্যে লাগাতার জঙ্গল সাফ করে খনন কাজ চালানো হয়। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মিনিটে একটি ফুটবল মাঠের মাপের জঙ্গল কাটা হয় এখানে।ফলে স্বল্প বৃষ্টিপাতও আমাজনে আগুন লাগার অন্য একটি কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীদের আর এক অংশ। কার্বন ছাকনি হিসেবে পরিচিত চিরসবুজের ওই জায়গা যে এই ঘটনার পর তাঁর কার্যক্ষমতা হারাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত প্রায় সমস্ত গবেষক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭