ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ব্রেক্সিট: কী ঘটবে অক্টোবরের পর?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/08/2019


Thumbnail

পুরো যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন, কী হবে ৩১ অক্টোবরের পর? ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা শেষ হতে টেনেটুনে আর মাত্র ৩৫টা দিন বাকি। পুরনো ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের পরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যাবে যুক্তরাজ্য। কিন্তু এখনও ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে একমত হতে পারেনি ব্রিটিশ আইনপ্রনেতারা। নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গোঁ ধরেছেন, ব্রেক্সিট চুক্তির কয়েকটি শর্ত তাদের ইচ্ছামতো না বদলালে চুক্তি ছাড়াই কার্যকর হবে ব্রেক্সিট। কিন্তু চুক্তি ছাড়াই যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বের হয়ে যায়, তার ফলটা কী হবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেন যদি কোন চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চায় তবে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের সঙ্কটে পড়বে দেশটি। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক এক নথিতে দেখা গেছে, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়বে ব্রিটেনের অর্থনীতি। একইসঙ্গে ইউরোপেও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। 

সবার প্রথমেই যে সমস্যা তৈরি হবে সেটা হলো, খাদ্য সংকট। খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেসব লরি ব্রিটেনে ঢোকে, তার ৮৫ শতাংশ আসে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে ফ্রান্সের সীমান্ত কর্মকর্তারা প্রথমে বুঝে উঠতে পারবেন না, সেই সব লরির কাছ থেকে কীভাবে শুল্ক নিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে জমতে থাকবে লরির বহর। এর ফলে বিপুল খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সবকিছু স্বাভাবিক হতে তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যাবে।

এবার আসা যাক অর্থনীতির দিকে। ব্রিটেনের গোপন এক সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, ব্রিটেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি ভবিষ্যৎ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্রেক্সিট পরবর্তী ১৫ বছরে আট শতাংশ অবধি কমে যেতে পারে। ব্রিটেন যদি ইইউ-এর সদস্য না হয়েও ব্লকের সিঙ্গল মার্কেটে থাকতে পারে, সে পরিস্থিতিতেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ কমবে। অবশ্য বাণিজ্য চুক্তিতে পৌছালেই যে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির হার তরতর করে বাড়বে এমনটা নয়। অর্থনীতিবিদদের একটি দল বলছে, যুক্তরাজ্য যদি ইইউ-এর সঙ্গে একটি সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারে, কিন্তু ইইউ-এর একক বাজার ও শুল্ক সংঘের বাইরে থাকে, সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হ্রাস ঘটবে বর্তমানে যা ধরা হচ্ছে, তার চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি। আরেকটি সমীক্ষা একেবারে স্পষ্ট করেই বলছে যে, ব্রিটেনের অর্থনীতির প্রতিটি বিভাগের উপর চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্রেক্সিট চুক্তিতে থাকা আরেকটি বিষয় হলো, ব্যাক স্টপ। ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর ইইউভুক্ত স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্তে মানুষ ও পণ্যের বাধাহীন চলাচলের নিশ্চয়তাই হলো ব্যাক স্টপ। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা অন্য কোনো উপায়ে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিকল্প পাওয়া না গেলে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থাকবে এবং যুক্তরাজ্যকে শুল্ক ও বাণিজ্যসংক্রান্ত ইইউর কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তার অনুসারী ব্রেক্সিটপন্থীরা এই ব্যবস্থাকে যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্ববিরোধী বলে মনে করছেন। এই ব্যাকস্টপ বিষয়টি সংশোধন বা বাতিলের জন্যই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এ সপ্তাহে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর কাছে দেনদরবার করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো লাভই হয়নি। ম্যাখোঁ এবং মেরকেল দুজনই বরিসের আবদার নাকচ করে দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে যা ঘটছে তাতে এটা পরিষ্কার যে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দেশের মানুষকে ব্রেক্সিট নিয়ে যেসব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তা মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে। তিনিও হয়তো এখন হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছেন যে, মানুষকে স্বপ্ন দেখানোটা যত সহজ তার বাস্তবায়ন করাটা ঠিক ততটাই কঠিন।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭