ইনসাইড বাংলাদেশ

মেয়রের প্রশ্রয়ে অনুপ বিশ্বাসের বেপরোয়া মদব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/08/2019


Thumbnail

মাঝে মাঝে অভিযানে চুনোপুটিরা হয় গ্রেপ্তার, কিছুটা সাজা তাদেরই মেলে। কিন্তু চোলাইমদের যে অবৈধ ব্যবসা এখন বন্দর নগরী চট্টগ্রামজুড়ে ছেয়ে গেছে, তার মূল হোতার নাগাল কখনোই পাওয়া যায় না। তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। চট্টগ্রামের প্রভাবশালীরা তাকে ছায়া দিয়ে যান অর্থের বিনিময়ে। তিনি অনুপ বিশ্বাস- বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে সঙ্গে যারা উঠাবসা। কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও আওয়ামী লীগ। কখনও সংস্কৃতিসেবী, কখনও ক্রীড়া সংগঠক। দশকের পর দশক তার নেতৃত্বে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে চোলাই মদের ব্যবসা।

সোমবার (২৬ আগস্ট) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ফিশারিঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনুপ বিশ্বাসের মদের মহাল থেকে ৩০ হাজার লিটার মদ জব্দ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে আটক করা হয় ৪৫ জন মাদকসেবীকে। কিন্তু এ নিয়ে হয়নি কোনো মামলা।

জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৯ জনকে চারদিনের জেল ও ৪০০ টাকা জরিমানার সাজা দেওয়া হয়েছে। ছেড়ে দেওয়া ১৬ জনের মধ্যে পাঁচজন ছিল পথচারী। আর বাকি ১১ জনের অনুমতি ছিল মাদক সেবনের। মাদক সেবনের অনুমতি নেই এমন ২৯ ব্যক্তি সাজা পেলেও মদ বিক্রেতা অনুপ বিশ্বাস বরাবরের মতোই রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে! বৈধ লাইসেন্স নিয়ে অবৈধভাবে মদ বিক্রেতা অনুপ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মাশকুর রহমানও।

অনুপ বিশ্বাস চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার ফিশারিঘাট এলাকার ১২৮ নম্বর ইকবাল রোডের চারতলা একটি ভবনে মদের মহালের লাইসেন্স পান। এর আগে এ মহালটি ছিল ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায়। ২০০৫ সাল থেকেই মূলত মদের মহালের আড়ালে শুরু হয় চোলাই মদের ব্যবসা। শুরুতে ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে এলাকার প্রভাবশালী একশ্রেণীর যুবক ও মধ্যবয়স্ক শ্রেণীদের এক থেকে তিন লিটার পর্যন্ত মদ বিনামূল্যে দেওয়া হতো। বিনামূল্যে পাওয়া মদের কিছুটা নিজেরা সেবন করতো, বাকি মদ অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দিতো। এভাবে একসময় এই ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।

অবৈধ চোলাইমদের ব্যবসাকে নির্বিঘ্ন রাখতে অনুপ বিশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ রাখা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন উদার হাতে টাকা ছিটিয়ে। এভাবে তার চোলাইমদের অবৈধ ব্যবসা এখন নগরজুড়ে ছেয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে অনুপ বিশ্বাস জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। জাতীয় পার্টির সুবিধা নিয়ে দীর্ঘ সময় তিনি পাথরঘাটা ২ নম্বর পুলিশ বিটের কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে অনুপ বিশ্বাস জাতীয় পার্টির সখ্য ছেড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

জানা গেছে, অনুপ বিশ্বাস আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে জাতীয় পার্টি করলেও তখন থেকেই ভেতরে ভেতরে সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোটা অংকের অনুদান দিতেন। এই সময় থেকে মেয়রের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে অনুপের। সিটি মেয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় এ সময় অনুপ বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ) চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি ওই সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি।

অনুপ বিশ্বাস বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক হলেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো দলের ম্যানেজার হিসেবে অনুপ বিশ্বাস গেল বছর ৫ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল তিউনিশিয়া সফর করেন। সিজেকেএস-তায়কোয়ানডো লীগ এবং সিজেকেএস-সিডিএফ প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের স্পন্সরও অনুপ বিশ্বাস এন্ড ব্রাদার্স। গত বছর সিজেকেএস-তায়কোয়ানডো লীগের দুদিনব্যাপী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের পাশে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুপ বিশ্বাসকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার পাশাপাশি প্রশাসনের নীরবতায় অনুপ বিশ্বাস পুরো এলাকাকে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদকারীরা আছেন হুমকিতে। মদব্যবসা সচল রাখতে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় সুকৌশলে হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর হুমকিও দেন অনুপ বিশ্বাস ও তার সহযোগী সাগরের লালিত সিন্ডিকেট।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭