ইনসাইড থট

বিশ্ব নেতৃত্ব ও মানব জাতির ভবিষ্যৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/09/2019


Thumbnail

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটা দ্রুতই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। গত মাসে ইউরোপজুড়ে দাবদাহের তাণ্ডব চলেছে। প্যারিসে সর্বোচ্চ ৪৫.৯° সেলসিয়াস(১১৪.৬২° ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উন্নত দেশ, উন্নত ব্যাবস্থাপনা এবং সরকারের তৎপরতার কারণে গনমৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও কিছু মৃত্যু এড়ানো যায়নি। প্রতি বছরই তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙছে। ওই তাপমাত্রা আমাদের দেশে কয়েক দিন স্থায়ী হলে কী ঘটবে তা অনুমান করাও কঠিন। 

প্রায় বৃষ্টিহীন বর্ষার শেষে  এখন শরতের আকাশে বৃষ্টির মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিও হচ্ছে।  দিনের তাপমাত্রা ৩৩/৩৪° সেলসিয়াসের (৯১.৪/৯৩.২° ফারেনহাইট) মধ্যেই থাকছে। তথাপি ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। তাপমাত্রা অপেক্ষা আবহাওয়ায় আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি বিধায় এই অসহনীয় অবস্থা। ঋতু প্রকৃতিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। আবহাওয়া ক্রমাগত রুক্ষ হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা ক্রম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ফলে বরফ আচ্ছাদিত আন্টার্টিকার বরফ গলে সাগরে মিশছে। এই অঞ্চলের হিমালয় পৃষ্ঠের স্তরে স্তরে সঞ্চিত বরফ বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশছে,  গলে গলে নিম্নাধারে সঞ্চিত হচ্ছে আর পশ্চিম বঙ্গের অজস্র সেচ প্রকল্পে নিঃশেষিত হচ্ছে। বাড়ছে সাগরের নদীর জল। ডুবছে নিম্নাঞ্চল। উদ্বাস্তু হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা শহর তলিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও একটি বৃহদাংশ তলিয়ে যাবে। পরিনতি অচিন্তনীয়। কিন্তু এতসব হচ্ছে কেন? তাপমাত্রাইবা বাড়ছে কেন?

সূর্য থেকে যে তাপ পৃথিবী পৃষ্ঠে আসে তা বিকীর্ণ হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের গ্ৰিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষিত হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠে আসে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া। শিল্প কারখানা, ডিজেল পেট্রোল চালিত গাড়ি, যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লা ইত্যাদি থেকে নিঃসৃত তাপ গ্যাস কার্বন বায়ুমণ্ডলে মিশে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যে  শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায় বেশি। অথচ স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত দেশসমূহ ক্ষতির মুখাপেক্ষী হচ্ছে বেশি। 

বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপজ্জনক পরিনতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের সতর্কতা এবং তাদের দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে জাতিসংঘের সংপৃক্ততায়  ২০১২ সালে উন্নত অনুন্নত দেশসমূহের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়।  যা ইতিবাচকভাবে ২০১৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়। এটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৬ নামে পরিচিত। এই চুক্তির মূল বিষয়টি হচ্ছে গ্যাস, বিশেষত, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা যা ভূপৃষ্ঠে  তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী। এতদোদ্দেশ্যে  চুক্তিবদ্ধ ধনী দরিদ্র সকল দেশের জন্য অবশ্য করণীয় কিছু দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক ফ্রান্স ২০২২ সালের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার (পাথুরে কয়লা) ব্যাবহার বন্ধ করাসহ পর্যায়ক্রমে সকল পদক্ষেপ নিচ্ছে। নরওয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিজেল পেট্রোল চালিত গাড়ির উৎপাদন বিপণন বন্ধ করছে যা নেদারল্যান্ডস করছে ২০৩০ সালের মধ্যে। বিভিন্ন দেশ চুক্তির আওতায় যার যার মতো করে ব্য্যবস্থা নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা ও হঠকারী সিদ্ধান্তে অন্যসব নেতৃস্থানীয় দেশের নেতারাও ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত হয়েছেন। মি. ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি সম্ভবত হোয়াইট আমেরিকান ও ইহুদি স্বার্থের বাইরে আর কিছু ভাবতে সক্ষম নন। 

আরো  একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের ২৫% বনভূমি অপরিহার্য।  অর্থাৎ পৃথিবীর মোট স্থলভাগের এক চতুর্থাংশ বনভূমি অপরিহার্য। পৃথিবীতে দেশ ভিত্তিক ২৫% বনভূমি না থাকলেও দক্ষিন আমেরিকার আমাজন বনভূমির(Rain Forest) হাজার হাজার কোটি গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের কারণে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে। বিশ্বের এই বৃহত্তম বনভূমির বেশির ভাগ ব্রাজিলে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারী ওই দেশে ক্ষমতায় আসেন জেইর বলসোনারো। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার দল এবং সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় প্রতি মিনিটে একটি খেলার মাঠের সমপরিমাণ বনের গাছপালা কেটে উজাড় করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, বাসস্থান নির্মাণ এবং গবাদি পশুর চারণভূমি তৈরি করা। এছাড়া রয়েছে কাঠ চোরাচালানীদের দেদার ব্যবসা। অতি সম্প্রতি এই ধ্বংসলীলা রূপ নিয়েছে বহ্ন্যুৎসবে। ইচ্ছাকৃত ও ন্যক্কারজনকভাবে বনের হাজার হাজার স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন পুড়ে ভস্মীভূত হচ্ছে। দাবদাহ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত ব্যবস্থা যেমনি অপ্রতুল তেমনি হাস্যকর ও দুর্ভাগ্যজনক। এখন পর্যন্ত সমন্বিত ও যথোপযুক্ত কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না।  অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর।

বিশ্ব নেতৃত্বে একধরনের বন্ধাত্ব্য, অদূরদর্শিতা ও অবিমৃষ্যকারীতা বিশ্ববাসীকে হতবাক ও হতাশ করছে। বিশ্ববাসী কি কতিপয় নেতার স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি হয়ে এক অবশ্যম্ভাবী ভয়াবহ পরিণতির অপেক্ষায় থাকবে? 

 

লেখকঃ জাকির হোসেন

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার

 

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭