ইনসাইড থট

এই ছাত্রলীগ আর সেই ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/09/2019


Thumbnail

মুক্তিযুদ্ধদারিদ্রইত্যাদি নানা কারণে আমরা স্বাধীনতার পর থেকে ব্যক্তিগতপারিবারিকসামাজিক মূল্যবোধ হারাতে হারাতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি যে এখন অনেক কিছুই আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। আজ থেকে ২০ বছর পরে ৮০ বছর বয়সী কেউ যদি বলেন যেতাঁদের শৈশবে ইন্টারনেটমোবাইল ফোনইত্যাদি ছিল না। তখন অনেকেই অবিশ্বাস করবেহয়তো বা পাগল ঠাওরাতেও পারে। এই অবস্থায় পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে জারিত আমাদের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এটি ক্ষমতাসীন দলের জন্য আপাত সুখকর না হলেও দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এটা থেকে একটা আশার আলো দেখেন আশাবাদী মানুষেরা।           

একটু নেট ঘাঁটলেই জানা যাবে যে১৯৬১ সালে যা ছিল ১৭% আর ১৯৯১ সালে ২৪.৯%। সেই নিরিখে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ২০% এর কাছাকাছি মোট সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে। এই সাক্ষরতা মানে যারা সাক্ষর করতে পারতেন। বাস্তবে ছাত্র আর শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অনেক কম ছিল। তাই তখন আমাদের সমাজে ছাত্রদের খুব সম্মানের চোখে দেখা হতো। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে তো কথাই নেই। ১৯৭১ বা তৎকালীন সময়ে থানা মানে বর্তমান উপজেলা পর্যায়ে খবরের কাগজ পৌছতে ২/৩ দিন লাগতো কোন কোন থানায়। রেডিও ছিল খবরের অন্যতম বাহন। কিন্তু সব গ্রামে রেডিও ছিল এমন না। তবে যে গ্রামে এক বা একাধিক রেডিও ছিল সেখানে মানুষ এসে গাননাটকখবর  শুনতো দল বেঁধে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর শুনতে অনেকেই ভয় পেতেন বা ঐ খবরের চ্যানেল বা সেন্টার ধরতেও পারতেন না। কিন্তু বিবিসি আর ভয়েস অব আমেরিকা সবাই শুনতেন খুব মনোযোগ দিয়ে।

৭ই মার্চ ১৯৭১ সালের পরে সব এলোমেলো হয়ে গেল। বাজল যুদ্ধের আগাম দামামা। ঢাকারাজশাহী আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দল বেঁধে গ্রামে চলে গেলেন যেন একেক জন বঙ্গবন্ধুর একেকটা প্রতিনিধি। মূলত ছাত্ররাই গ্রামে গ্রামে গিয়ে ছাত্র জনতা আর গ্রামের অশিক্ষিত (!) দেশপ্রেমিক যুবকদের কাছে বঙ্গবন্ধুর বার্তা পৌঁছে দিলেন। কারণ গ্রামের মানুষ এমন বার্তার জন্য যে উন্মুখ হয়ে ছিল তা ১৯৬৯ আর ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর জনসভায় মানুষের সমাগম দেখেই অনুমান করা যায়। মাইলের পর মাইল হেটে মানুষছোট বড়নারী (সংখ্যায় যদিও কম) পুরুষ নির্বিশেষে,  বঙ্গবন্ধুর জনসভায় যোগ দিতেন। 

গ্রামের মানুষ ছাত্রদের ভিন্ন চোখে দেখতেন। তাদের খুব বিশ্বাস করতেন। তাঁরা ছিল সততার প্রতীক। এমন কী ১৯৭৫ পরবর্তী সময় যারা ছাত্রলীগ করতো তাঁদের ভিন্ন চোখে খুব সম্মানের আসনে রাখতো অধিকাংশ এলাকায়। তাদেরকে গোপনে সবাই সাহায্য করতেন। জিয়ার আমলে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার সব কয়টি আসনে বিএনপি জিতলেও সব কয়টি কলেজে ছিল ছাত্রলীগের সংসদ। এটা ছিল ছাত্রলীগের ছেলে মেয়েদের উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে। তারা না খেয়ে ছাত্রদের সেবা করেবিপদে পাশে থেকেসততা আর নিষ্ঠা দিয়েই ছাত্র তথা যুব সমাজের মন জয় করে। সেই ছাত্রলীগ যখন চাঁদাবাজি আর অন্যায় অত্যাচারের দায়ে দোষী হয় তখন পঁচাত্তর পরবর্তী ছাত্রলীগের নেতাদের ঘরের মধ্যে লুকিয়ে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক ছাত্রলীগ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন,  ‘নিজেদের উপর আক্রমণ না হলে অধিকাংশ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসার বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতেন না। যশোরে মেজর হাফিজকে ঘেরাও করেছিল বলে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। কুষ্টিয়াতে আবু ওসমান চৌধুরীকেও জনতা ঘেরাও করেছিলেন বলে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। পাবনায় জনতার টেটা খাবার চাপে ঐক্যবদ্ধ হয় সেখানকার বাঙালী পুলিশ ইপিআর ও কিছু সৈন্য। ধ্বংস করে পাকিদের। চিটাগাং ক্রেক ডাউন হওয়ার পরও সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামানোর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছিল মেজর জিয়া। যখন তাকে ফিরতে হলো জনতার বাধায় এবং ক্যান্টনমেন্টে ফিরে বুঝলেন নিহত হতে পারেন তখন ছুটলেন বিদ্রোহ করতে। এরকম অনেক ঘটনা। তারা অনেকে ভয়ে ছিল যদি সেনাবাহিনীর নিয়ম ভাঙ্গার জন্য দায়ী হন তবে তো মৃত্যুদণ্ড বা জেল। কেবল খালেদ মোশাররফ ইপিআর মেজর রফিক এরা ছিল আলাদা। জয়দেবপুরেও জনতার চাপে ও অংশ গ্রহণে আগেই বিদ্রোহ দেখা দেয়। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার পুরো সময়টা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। পালা‌নোর সু‌যোগ পান‌নি?  

সুতরাং আসল যোদ্ধা এদেশের ছাত্রশ্রমিককৃষক জনতাযারা চাকরীর বাধনে ছিল নামুক্তির নেশায় ছিল উতলা। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ মেশিনগান সজ্জিত ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করতে বললে তাও করতো সেই জনতা। এত বিশাল ইতিহাসকে সামরিক অফিসাররা দেখছে চোখে চুঙ্গা দিয়ে”। 

দুর্নীতি বা অপকর্মের দায়ে সেই ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দিতে হয় এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে!

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭