লিভিং ইনসাইড

বার্ধক্যে মানসিক সমস্যা, সমাধান জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/09/2019


Thumbnail

বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিটি আজকাল একটু বেশিই খিটখিটে হয়ে গেছে। কথায় কথায় ভুল ধরছে। খাওয়াদাওয়াও ঠিকমতো করছে না, মাঝেমধ্যে সবার সঙ্গে কথাবার্তাও বন্ধ করে দিচ্ছে। কি সমস্যা জিজ্ঞেস করলেও খেপে যাচ্ছে। অন্য সদস্যদের সঙ্গে কিছুতেই বনিবনা হতে চাচ্ছে না। সবাই একটা কথাই ভাবছে, এতো শারীরিক সমস্যার মধ্যে আবার মাননিক কোনো অসুখ করলো নাতো?

বার্ধক্যে মানসিক রোগ খুব সাধারণ একটি বিষয়। এটা আমরা খেয়াল না করে অগ্রাহ্য করে যাই সাধারণত। কিন্তু এই সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামানো দরকার।

বার্ধক্যে মানসিক রোগের কারণ

বার্ধক্যজনিত মানসিক রোগের মাঝে বিষণ্ণতা রোগ, উদ্বেগজনিত রোগ, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ, দেরিতে শুরু হওয়া সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার বা দ্বি-প্রান্তিক আবেগীয় রোগ, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সার্বিক কর্মক্ষমতা লোপ পেতে থাকে; চুলে পাক ধরে, দাঁত পড়ে, ত্বকে ভাঁজ পড়ে, হাড় ক্ষয় হতে থাকে, প্রজনন ক্ষমতা থাকে না বা কমতে থাকে।

এসময় মানুষ কর্মজীবন আর সংসার থেকে অবসরে যেতে থাকে। সন্তানরা বড় হয়, তাদের নিজস্ব জগৎ তৈরি হয়, অনেক সময় জীবিকা অর্জনের জন্য দূরে চলে যায় বা কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ে ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বৃদ্ধ হলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়। একাকীত্বের অনুভূতি খুব দম বন্ধ করে ফেলে।

এই বয়সটা থেকেই মানুষ জীবনের হিসাব নিকাশের খাতা খুলে বসে। কি পেলাম, কি পেলাম না এসব ভেবে অস্থির হয়ে যায়। ফলে মানসিক চাপ, দৈন্যতা তৈরি হয়।

বার্ধক্যের বয়স হলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বিভিন্ন প্রকার দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক রোগবালাই যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ ও হাড়ের ক্ষয়রোগ ইত্যাদি দেখা দিতে থাকে। মন আর শরীর তো একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, তাই একটি খারাপ থাকলে অন্যটিও খারাপ হয়ে যায়। এই ধরুন, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে বিষণ্ণতার হার শারীরিকভাবে সুস্থদের চেয়ে বেশি। এই বিষণ্নতাই হৃদরোগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। আবার শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা সহ্য করতে করতে মানসিকতাও খিটমিটে হয়ে যেতে থাকে।

শহর নগর আগের চেয়ে পাল্টে যাচ্ছে। ভৌগোলিক পরিবর্তন, শিল্পায়ন, সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্যের প্রভাব, যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গঠন ইত্যাদি বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

 

বার্ধক্যে মানসিক রোগের সতর্কতামূলক লক্ষণ

১. একটানা হতাশা, বিষণ্ণতায় ভোগা

২. ইতিবাচক আবেগ অনুভব না করা

৩. অতিরিক্ত ঘুমানোর অথবা ঘুম না হওয়ার সমস্যা থাকা

৪. আত্মঘাতী চিন্তা করা

৫. ক্ষুধা, শক্তি এবং মেজাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন

৬. মনোযোগে সমস্যা হওয়া, অস্থির থাকা

৭. অতিরিক্ত চাপ বা উদ্বেগ অনুভূতি তৈরি হওয়া

৮. স্বল্পমেয়াদি-সাম্প্রতিক স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা লোপ পাওয়া

৯. রাগ, আন্দোলন বা আগ্রাসী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়া। অবাধ্যতামূলক আচরণ প্রবণতা বা করা, অস্বাভাবিক আচরণ বা চিন্তা করা।

প্রবীণরা যেভাবে ভালো থাকবেন

১. প্রবীণদের সবচেয়ে বেশি যেই জিনিসটি দরকার সেটি হলো যত্ন। নবীন যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রবীণদের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। প্রবীণদের সঙ্গ দিতে হবে, যত্ন দিতে হবে। আন্তরিকভাবে কাজগুলো করতে হবে।

২. রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিনোদনের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। প্রবীণদের সবচেয়ে বড় বিনোদন হলো পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সবাই মিলে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে বা আড্ডা দেওয়া যেতে পারে।

৩. প্রবীণদের জন্য বিনোদনের জায়গা করতে হবে। সেখানে মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪. আমাদের দেশে প্রবীণদের তেমন হাসপাতাল নেই। প্রবীণদের জন্য আরো হাসপাতাল তৈরি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রবীণদের জন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালে আলাদা বিভাগ থাকা প্রয়োজন।

৫. প্রবীণদের অনেক বেশি সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ থেকে যেন সুরক্ষিত থাকেন এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।

৬. প্রবীণদের খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। ব্য়স হওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে বিভিন্ন সমস্যা হয়। তাই গুরুপাক খাবার খওয়া যাবে না। ফল, শাকসবজি ও আঁশজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। লাল মাংস এড়িয়ে যেতে হবে। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

৭. যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খাবার খেতে হবে।

৮. প্রবীণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কিছু নিয়মনীতি বা গাইডলাইন রয়েছে। সেটি মেনে চলতে হবে। বছরে দুবার হার্ট পরীক্ষা, কিডনির কার্যক্রম পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের চেকআপে থাকতে হবে। এগুলো করলে ভালো থাকা সম্ভব।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭