নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 17/09/2019
তার একটি দ্বিতীয় পরিচয় রয়েছে, তিনি ভারতের ‘পাবলো পিকাসো’ বলে অনেক বেশি পরিচিত। তিনি দুনিয়াখ্যাত আধুনিক শিল্পকলার সেরা শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী শিল্প-সংস্কৃতির জগতের অগ্রপথিক মকবুল ফিদা হোসেন সাধারণ্যে যিনি এম এফ হুসেন নামে বেশি পরিচিত। সমকালীন শিল্পীদের থেকে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র, কারণ তিনি রঙ-তুলি-ক্যানভাসের ভেতরে নিজেকে আটকে রাখেননি। তার প্রতিভার বর্ণচ্ছটায় আলোকিত হয়ে উঠেছিল শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যম। মকবুল ফিদা হুসেন ছিলেন একাধারে কবি, ভাস্কর, বাড়ির নকশাকার এবং চিত্রনির্মাতা। কালজয়ী চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন ১৯১৫ সালের আজকের দিনে পরাধীন ভারতের পান্ধারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার জন্মদিন। জন্মদিনে তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করছি আমরা।
স্পেনের শিল্পী পাবলো পিকাসোর মতো মকবুল ফিদা হুসেনও ভারতীয় চিত্রকলায় বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন। আর এজন্য তিনি আবহমান ভারতীয় শিল্প ঐতিহ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় শিল্পশৈলী ‘কিউবিজম’-এর মিলন ঘটান। এর মাধ্যমেই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলা ও মকবুল ফিদা হুসেন সমার্থক হয়ে ওঠেন যেন।
শিল্পের যাদুকর মকবুল ফিদা হুসেন ভারতের তৎকালীন বোম্বে প্রেসিডেন্সি এলাকার পান্ধারপুরের খুব সাধারণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন তদানীনত্মন ইন্দর রাজ্যের (বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ) কাপড়ের কলের কর্মচারি। ছেলেবেলা থেকেই ফিদা যা দেখতেন, তা-ই এঁকে ফেলতেন। ছেলের আগ্রহ দেখে বাবা তাকে ভর্তি করলেন এক আর্ট স্কুলে। তবে সেখানে মকবুল ফিদা হুসেনের মন টিকলো না। ১৯৩৭ সালে বাবা চলে এলেন মুম্বাইয়ে, শুরু করলেন ঘিয়ের ব্যবসা। তিনি চাইলেন ছেলেও ব্যবসা দেখুক। কিন্তু ফিদা রাজি হলেন না। ভর্তি হলেন জে জে আর্ট স্কুলে। এ স্কুল থেকেই শুরু হলো তার শিল্পীজীবন। তবে তার জন্য ছবি আঁকার সরঞ্জাম সহজলভ্য ছিল না। এগুলো জোগাড়ের জন্য তিনি সিনেমার পোস্টার এঁকেছেন, লিখেছেন সাইনবোর্ড পর্যন্ত। অনেকদিন পর্যন্ত শহরের গ্রান্ট রোডের একটি গ্যারেজ ছিল তার স্টুডিও। শত প্রতিকূলতাতেও থেমে থাকেননি ফিদা। থামিয়ে দেননি ছবি আঁকা। মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলেন ফিদা। হয়ত এ কারণেই তার চিত্রকর্মে খুঁজে পাওয়া যায় মাতৃরূপ। অসংখ্য নারীর চিত্রকর্মের মাধ্যমে মাতৃরূপের কল্পিত মুখখানি খুঁজে দেখার ছাপ পাওয়া যায়। মকবুল ফিদা হুসেনের অসংখ্য চিত্রকলার ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো- ‘বিটুইন দ্য স্পাইডার এ্যান্ড দ্য ল্যাম্প’, ‘বীণা পেস্নয়ার’, ‘গণেশ’, ‘মাদার তেরেসা’, ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘দ্য ওরামা’ ইত্যাদি।
১৯৬৭ সালে Through the Eyes of a Painter নামে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। যা বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয় এবং গোল্ডেন বিয়ার অর্জন করে। তিনি বলিউডের নায়িকাদের কাছ থেকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা পান। তার প্রিয় নায়িকার তালিকায় ছিলেন আনুশকা শর্মা, অমৃতা রাও, মাধুরী দীক্ষিত, টাবু, বিদ্যা বালান ও উর্মিলা মাতন্ডাকার। মাধুরী দীক্ষিতকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘গজগামিনী’। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ দেখার পর বলিউডের এ শীর্ষ নায়িকার অন্ধ ভক্ত হয়ে যান তিনি। এছাড়া টাবুকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘মিনাক্ষী’।
শিল্পী হিসেবে মকবুল ফিদা হুসেন স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক। ১৯৫৫ সালে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ পদক লাভ করেন । ১৯৭১ সালে পাবলো পিকাসোর সঙ্গে সাওপাওলো সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে লাভ করেন ‘পদ্মভূষণ’ আর ১৯৯১ সালে তাকে সম্মানিত করা হয় ‘পদ্মবিভূষণ’ দিয়ে।
মকবুল ফিদা হুসেনের শিল্পকর্ম সময়কে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১১ সালের ৯ জুন তিনি লন্ডনে ৯৫ বছরে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭