ইনসাইড পলিটিক্স

এরশাদের চেয়ে কম যান না জিএম কাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/09/2019


Thumbnail

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের সবচেয়ে বড় অনুযোগ ছিল তিনি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেন। জিএম কাদের পার্টির হাল ধরে কথা দিয়েছিলেন, ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা আশান্বিত হয়েছিলেন, উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের সেই আশা অল্প দিনের মধ্যেই ফিকে হতে শুরু করেছে। জিএম কাদের যে কথা দিয়েছিলেন তার ধারের কাছ দিয়েও যাচ্ছেন না, কেউ কেউ মনে করেন যেতে পারছেন না।

ক্ষেত্র বিশেষে এরই মধ্যে প্রয়াত এরশাদকেই ছাড়িয়ে গেছেন। একদিনে একই কমিটি দু’বার পরিবর্তন করেছেন। একই কমিটিতে চারবার রদবদল করার ঘটনায় চরম হতাশ নেতাকর্মীরা। আর সেই কমিটিটি হচ্ছে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি।

২০ আগস্ট দুপুরে ওই বিভাগীয় টিম গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপাকে। সদস্য সচিব করা হয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে। সদস্য ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ দিদার বখত, উপদেষ্টা হাসান সিরাজ সুজা, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল ইসলাম মিলন।

কমিটি গণমাধ্যমে প্রকাশের ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই বদলে যায়। এবার সদস্য সচিব সুনীল শুভরায়কে সরিয়ে এক নম্বর সদস্য সৈয়দ দিদার বখতকে পদায়ন করা হয়। এখানেই যদি ক্ষান্ত হতো তবুও হয়তো খুব একটা কিছু বলার ছিল না। কয়েকদিন পরে আবার সেই কমিটি রদবদল করে সুনীল শুভরায়কে সদস্য সচিব করা হয়।

পঁচিশ দিনের মধ্যে চতুর্থ দফায় খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম পুনর্গঠন করেন জিএম কাদের। এবারে আহ্বায়ক সদস্য সচিব ঠিক থাকলেও কলেবর বাড়ানো হয়। এই কমিটি কমিটি খেলা নিয়ে পার্টির মধ্যে বেশ হাস্যরস চলছে। অনেকে বলাবলি করছেন সিদ্ধান্ত বদলাতে এরশাদকে ছাড়িয়ে গেছেন জিএম কাদের। আর যাই থাকুক একই কমিটি ২৫ দিনের মধ্যে চার বার রদবদলের রেকর্ড নেই এরশাদের।

খুলনা বিভাগীয় কমিটির পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমেও রদবদল করার খবর পাওয়া গেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ সাংগঠনিক টিম ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রওশন এরশাদ পন্থী নেতাদের মাইনাস করে করা এই কমিটির আবার পরিবর্তন করার আভাস পাওয়া গেছে। ওই টিমের আহ্বায়ক করা হয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এম.এ. সাত্তারকে, সদস্য সচিব করা হয় মোস্তফা আল মাহমুদকে।

কমিটি রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন মোস্তফা আল মাহমুদ। তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, কিছুটা রদবদল হতে পারে।

সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমেও রদবদল করা হয়েছে। ওই টিমের সদস্য সচিব করা হয়েছিল প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে। পরে তাকে সরিয়ে পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ এমপিকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। যদিও প্রচার করা হয়েছে মামুনুর রশীদ অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ডে এসএম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওই সাক্ষাৎকার বোর্ডে হাজির না হয়েও মনোনয়ন পান রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। অনেক নেতাকর্মীই প্রশ্ন তুলেছেন পার্টির গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা নিয়ে।

আবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে জিএম কাদেরকে। প্রথমে নিজে হওয়ার জন্য চিঠি দিলেও, পরে রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতার চেয়ারে আসীন হয়েছেন।

জিএম কাদেরের আরেকটি প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি হঠাৎ হঠাৎ প্রমোশন দেবেন না। আবার নেতাও হায়ার করবেন না। কিন্তু এখানেও কথা পালন করতে পারেননি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী সাফিন আহমেদকে হায়ার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে মেয়র মনোনয়ন দিয়েছিলেন। যিনি আগের নির্বাচনে অন্য দলের প্রার্থী হয়েছিলেন।

আবার গণপদোন্নতিরও রেকর্ড তার সময়েই ভেঙেছেন। প্রেসিডিয়ামে পদ না থাকলেও এরশাদ অসুস্থ থাকা অবস্থায় দু’দফায় ১৪ জনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছেন। সর্বশেষ রওশন গ্রুপের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে ২-১ গোলে পরাজিত হওয়ায় অনেকটা হাতাশা বিরাজ করছে কাদের শিবিরে।

যদিও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে জিএম কাদেরের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। নেতাকর্মীরা চাইলেই কাদেরের সাক্ষাৎ পেতে পারেন। কিন্তু রওশনের দরজা অনেকটা আটকানো। আবার রওশনের সঙ্গে যেসব সিনিয়র নেতা রয়েছেন তারাও ততটা কর্মীবান্ধব নন।

নেতাকর্মীরা মনে করেন, জিএম কাদেরের গ্রুপই টিকে থাকবে। অন্যরা কালের সঙ্গে মিলিয়ে যাবেন। কিন্তু জিএম কাদেরকে সংশোধন হতে হবে। আশপাশে থাকা কিছু সুযোগ সন্ধানী নেতার পরামর্শে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলে বিড়ম্বনা ডেকে আনতে পারে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবে চিন্তে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭