লিভিং ইনসাইড

সাপের কামড় থেকে বাঁচতে হলে...

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/09/2019


Thumbnail

সাপের নাম শুনলে খুব সাহসী মানুষও ভয়ে ভড়কে যেতে পারে। কখন কোথায় কোন পরিবেশে সাপের কবলে পড়ে জীবনটা খোয়াতে হয়, তা কেউ জানে না। এমনকি আমাদের দেশের মানুষ এখনো সব সাপের পরিচয় জানে না, কোনটা বিষাক্ত, কোনটা বিষাক্ত নয় সেটাও জানে না। দুর্ভাগ্যবশত যদি সাপ কামড়েই ফেলে তাহলে মূল সমস্যা হলো আমরা ঘাবড়ে যাই। সাপে কামড়ালে যে মৃত্যু হবেই, এটা না ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আর কিছু মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেশি থাকে, তাই সাবধান হতে হবে।

সাপে কাটলে করণীয়

১. আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে হবে। বেশিরভাগ কবলিত মনে করেন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাই জরুরিভিত্তিতে তাকে সাহস দেয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যথাযথ স্থানে/হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠালে রোগী বিশ্বাস ও সাহস ফিরে পাবে। আর রোগীকে একপাশে কাত করে রাখুন।

২. দংশিত স্থান কিছুতেই কাটাছেড়া করা উচিত নয়। কেবল ভেজা কাপড় দিয়ে কিংবা জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে ক্ষতস্থান মুছে দিতে হবে।

৩. দংশিত স্থান থেকে ভিতরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে গামছা বা কাপড় দিয়ে কেবল একটি গিঁট (পায়ে দংশন করলে রানে, হাতে দংশন করলে কনুইয়ের উপরে) এমনভাবে দিতে হবে যেন খুব আটসাঁট বা ঢিলে কোনোটাই না হয়।

৪. সাপে কাটার স্থান বেশি নড়াচড়া করা যাবে না। কারণ মাংসপেশী সংকোচন করলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দংশিত অঙ্গ থেকে আংটি, চুড়ি, তাবিজ, তাগা খুলে ফেলুন। দংশিত অঙ্গ ফুলে গেলে এগুলো খুলতে অসুবিধা হবে।

৫. রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে। স্থানান্তরের সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাঁটতে দেওয়া যাবে না। রোগীকে কাঁধে, খাটিয়ায় বা দোলনায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

৬. বিচলিত না হয়ে যে সাপ কামড়েছে, সে সাপের প্রজাতি ও বিষধর কিনা তা নিরূপণের জন্য সঙ্গে নিয়ে যান। সাপ পরিবহনের সময়েও খেয়াল রাখুন যে সেটা জীবিত নাকি মৃত। সাপ সঙ্গে নিলে চিকিৎসা বা বিষ নষ্টকারী ওষুধ দিতে সুবিধা হয়।

৭. জরুরি কোনো উপসর্গ না থাকলে বিষদাতের চিহ্ন পরীক্ষার জন্য দংশিত স্থান পরীক্ষা করতে হবে। বিষ দাঁতের দাগ প্রায় আধা ইঞ্চি ফাকে দুটি খোচা দেওয়ার চিহ্ন হিসাবে অথবা কেবল আচড়ের দাগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। দুটো বিষদাঁতের চিহ্ন পরিষ্কারভাবে থাকলে খুব সম্ভবত সাপটি বিষধর, তবু বিষদাঁতের চিহ্ন না থাকলে যে সাপটি বিষধর নয় তা বলা যাবে না।

৮. কামড়ানো স্থানে চামড়ার রঙের পরিবর্তন, কালচে হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফোসকা পড়া, পচন ধরা ইত্যাদি হতে পারে। আবার কোনো পরিবর্তন নাও থাকতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার ফলেও স্থানীয় পরিবর্তন হতে পারে।

সাপে কাটলে যা করবেন না

আমাদের দেশে অনেক ক্ষতিকর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রচলিত যা ওঝা ও সর্প-চিকিৎসকরা দিয়ে থাকেন। এ থেকে অনেক সময় রক্তপাত, ধনুষ্টংকার ও পঁচনসহ অন্যান্য অসুবিধা হয়। তাই এই কাজগুলো কখনোই নয়-

১. দংশিত স্থান ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে রক্তক্ষরণ করানো।

২. একাধিক স্থানে খুব শক্ত করে গিঁট দেওয়া।

৩. কার্বলিক এসিডজাতীয় রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে দংশিত জায়গা পোড়ানো।

৪. গাছ-গাছড়ার রস দিয়ে প্রলেপ দেওয়া।

৫. বমি করানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার।

৬. কানের ভেতর বা চোখের ভেতর কিছু ঢেলে দেওয়া।

প্রতিরোধ করবেন কীভাবে

সাপ বেশিরভাগই পায়ে কামড়ায়। কাজেই সাপ থাকতে পারে এমন জায়গায় হাটার সময় বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। জুতা, লাইট ইত্যাদি সঙ্গে রাখতে হবে।

ঘরে সাপ থাকার সম্ভাবনা থাকলে বিশেষ করে ইদুরের গর্ত থাকলে সেটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করবেন। তাছাড়া বাজারে কার্বলিক এসিড আছে, এগুলি বাড়িতে এনে বোতলসহ ঘরের মধ্যে রাখুন, সাপ চলে যাবে।

সাপ সামনে পড়ে গেলে ধীর-স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকা উচিত। সাপ প্ররোচনা ছাড়া কামড়াতে চেষ্টা করে না।

দুর্ভাগ্যবশত যদি সাপ কামড় দিয়ে থাকে, নিজে নিজে কিছু করতে যাবেন না। কারো সাহায্য নিন। সর্পদংশনের পর কখনো দৌড়ানো উচিত নয়। এতে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭