ইনসাইড বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার পর কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/06/2017


Thumbnail

তাঁকে ঘিরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি। তাঁকে ঘিরেই আজ বাংলাদেশের ভবিষ্যত। তিনি একাই যেন বয়ে বেড়াচ্ছেন সব ভার। তিনি ছাড়া দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটাও যেন ছন্নছাড়া। তিনি ছাড়া এদেশের উন্নয়নের স্রোতেও ভাটার টান। তিনি ছাড়া ‘বাংলাদেশ’ই যেন এক সংকট সন্ধিক্ষনে। অক্লান্ত পরিশ্রমী এক মাঝি। একাই হাল ধরে আছেন দেশের, দলের। কিন্তু তিনিই ইদানিং অবসরের কথা বলেন। বলেন আর পারছি না। তার নাম শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গত এক বছরে তিনি ৫টি গুরুত্বপূর্ন বক্তৃতায় দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। জাতীয় কাউন্সিলে, মহিলা যুবলীগের সম্মেলনে, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে, ছাত্রলীগের সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন ‘অনেক তো হলো। ৩৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছি, এখন নতুন নেতা নির্বাচন করুন। তরুনদের সুযোগ করে দিতে হবে।’ যদিও কর্মীদের না ধ্বনি আর আবেগের কাছে তার এই ইচ্ছা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনা তো চিরদিন আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকবেন না। এ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ৭০ বছর পূর্ণ করবেন। ঘনিষ্টদের তিনি বলেছেন, ২০২১ সালের পর আর কোনো দায়িত্বে থাকতে চান না। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ করবেন। এর এক বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে দেশ। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। শেখ হাসিনা এই জাতির এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষন পেরিয়ে অবসরে যেতে চান। ঘনিষ্টদের কাছে এরকম আকাঙ্খার কথাই তিনি বলেছেন। তাই যদি হয় তাহলে ২০১৮ এর সংসদ নির্বাচনই হতে পারে শেখ হাসিনার শেষ নির্বাচন। তাহলে, শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের নেতা কে হবেন, তা এখনই নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে এসেছিলেন তৃণমূল থেকে। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী। শুধু মাত্র নিজের যোগ্যতা, নেতৃত্বের অসাধারণ গুন, মানুষের প্রতি ভালবাসার জোরেই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতার অভিসিক্ত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কোনো উত্তরাধিকার মনোনয়ন দেননি। জাতির পিতার ছেলে শেখ কামাল, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার হিসেবে ভাবা হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কাউকেই তারপর দলের নেতার স্বীকৃতি দেননি। দেননি একারণে যে তিনি উত্তরাধিকারজাত ছিলেন না। আমৃত্য গণতন্ত্রকামী এই নেতা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই পরবর্তী নেতৃত্ব হোক এটাই চেয়েছিলেন। এই দায়িত্ব তিনি দলের কর্মীদের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

৭৫ এর ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা না ঘটলে শেখ হাসিনাও আওয়ামী লীগের নেতা হয়তো হতেন না।

শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে নেতা হলেও, তাকে আজকের জায়গায় আসতে অনেক প্রতিক‚ল পরিস্তিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। দলের মধ্যেও তাকে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। জাতির পিতা যেমন জনগণের শক্তিতেই অবিসংবিদিত নেতা হয়েছেন, তে¤িœ শেখ হাসিনাও জনগণের শক্তিতেই আজকের অবস্থানে এসেছেন।

বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ হাসিনাও তার উত্তরাধিকার মনোনয়ন দিতে চান না। তিনি চান সময়ে তৃনমূলের কর্মীরাই এই সিদ্ধান্ত নিক। উত্তরাধিকার নির্বাচনে একটি বড় বিপদ সম্পর্ক প্রায়ই শেখ হাসিনা বলেন। রাহুল গান্ধীকে উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনয়নের পরই দেখা গেলো তীব্র সমালোচনা আর তার অযোগ্যতার বিশ্লেষণ। এজন্যই শেখ হাসিনা চান নেতৃত্ব আসুক সহজাত প্রক্রিয়ায়।

কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতার হলো, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বাইরে কেউ নেতা হয়ে আওয়ামী লীগকে অটুট ঐক্যের বন্ধনে রাখতে পারবেন না। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ র ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের সময় ও আওয়ামী লীগের জন্মছাড়া চেহারা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগে অটুট ঐক্যের বন্ধনে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধুর রক্তের বিকল্প নেই। তাই শেখ হাসিনার পর আওয়ামী লীগের অস্তীত্বের জন্যই বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেই নেতৃত্ব আনতে হবে এটা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে প্রথম নাম আসে, শেখ রেহানার। নিভৃতচারী শেখ রেহানার ভ‚মিকা রাজনীতিতে অনেকটাই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুননেছা মুজিবের মতো। বেগম মুজিব যেমন সংকট দল সামলেছেন। নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছেন। অনেক দূরদর্শী সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেখ রেহানাও তেমনি ভ‚মিকা পালন করেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনে শেখ রেহানা আর আগরতলা মামলার সময় বেগম মুজিব যেন কার্বন কপি। তবে, শেখ রেহানা প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসবেন না তা স্পষ্ট। তিনি প্রায়ই স্পষ্ট করেই এব্যাপারে তার অনীহার কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর আরেক উত্তরাধিকার সজীব ওয়াজেদ জয়। আইটি বিশেষজ্ঞ, উচ্চ শিক্ষিত জয় আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগ ছাড়াও তরুণদের মধ্যে তার আলাদা অবস্থান আছে। কিন্তু সরাসরি রাজনীতিতে এখনও জয় অনুপস্থিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের তরুনরা জয়কেই নেতা মনে করেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ। তিনি দলের নেতা কর্মীদের কাছে প্রচন্ড জনপ্রিয়। দলের সব স্তরের নেতারা তাকে নিয়ে গর্ব করে। নেতা হবার সব যোগ্যতার পরও তিনি তার পেশাগত বিষয়ের বাইরে কোন বক্তব্য রাখেন না।

তাই, শেখ হাসিনা হয়তো উত্তরাধিকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার শক্তির উপরই নির্ভর করেন। যে শক্তির বিপুল সমর্থনে তিনি আজ বাংলাদেশের অবিসংবিদিত নেতা। সেই শক্তির নাম জনগণ।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭