ইনসাইড থট

ড. ইউনূসের জালিয়াতি ল্যাবরেটরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/09/2019


Thumbnail

১৯৬৫ সালের কথা। কুমিল্লার বার্ড তখন দেশের পল্লী উন্নয়নের কাজ করে। পল্লীউন্নয়নের কাজের অংশ হিসেবে সংগঠনটি কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিতেও কাজ করে দেশের বিভিন্ন এগ্রোইকোলজিক্যাল জোনে। জাইকার নাম তখন ওটিসিএ (OTCA) নামে পরিচিত। জাইকার কৃষি বিষয়ক একাধিক এক্সপার্ট কুমিল্লার বার্ডের সাথে মিশে ফিলিপাইন থেকে বীজ এনে অনেক কষ্টে ইরি ধানের চাষ শুরু করলো। শুরু করলো কিছু সবজি চাষ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে জাইকা মানে ওটিসিএর মাধ্যমে লাইন দিয়ে ধান লাগানো, কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, মানে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়। সারাদেশের প্রদর্শনী খামারে ধানের ব্যাপক উৎপাদন হলেও, খুব গরীব মানুষ ছাড়া কেউ ইরি ধানের ভাত পছন্দ করতো না। কৃষিতে বার্ডের অবদানের পরে দেশ স্বাধীন হলে খামারবাড়ি মানে ডিএই, বারি, ব্রী প্রতিষ্ঠা হয়। বিএডিসি, বীনা ছাড়াও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ফসল, চাষ পদ্ধতি, বীজ, সেচ, ইত্যাদি নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। মাটির স্বাস্থ্য, বীজ, সার, সেচ, ইত্যাদি সব নিয়েই নিরলস প্রচেষ্টা শুরু হয়। কৃষির অন্যান্য শাখাতেও যেমন, পশুপালন, মৎস্য চাষ, ইত্যাদি নিয়েও ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। এদের কাজের সমন্বয় করতে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, যার অফিস ফার্মগেটে। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থার পরে কৃষির উপর সরকারের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। যার ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে এখন বাংলাদেশ তার প্রধান খাদ্যে স্বয়ম্ভর। মানে চালের উৎপাদন আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশী, কিন্তু অন্য ফসলে যেমন, গম, মশলা, ইত্যাদিতে আমরা এখনো ঘাটতিতে আছি।

অদূর ভবিষ্যতে তাও থাকবে না কারণ বগুড়ার মশলা গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও, পাহাড়ি এলাকায় আর অনেক কর্মসূচী/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যে এগুচ্ছি। ময়মনসিংহতে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের অবদানে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমাদের সাফল্য ঈর্ষা করার মত। এমন অনেক কথা আছে, যা গল্প নয় সত্যি। বাংলাদেশের কৃষিবিদগণ এডাপ্টেশন রিসার্চসহ অনেক বেসিক রিসার্চ শুরু করে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে, যার সাফল্য আমরা পাচ্ছি। আমরা এখন গ্রীষ্মকালীন সবজিও চাষ করি। কিন্তু অবাক ব্যাপার হ’লো দেশের সাধারণ মানুষ আর বিদেশীরা তা ঠিকমত জানেন না যে এর পিছনে কার অবদান বেশী। 

আমি নিজে কৃষিবিদ না কিন্তু কৃষি খাত নিয়ে প্রায় ত্রিশ (৩০) বছর কাজ করছি। হয়তো ৬০++ এমন কোনো নামকরা কৃষিবিদ এবং কৃষি প্রতিষ্ঠান নেই যার সাথে আমি, সামান্য সময় হলেও কাজ করিনি। একদিন জাইকার চীফ আর ঢাকায় নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূতের সাথে কৃষি বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে গেলাম। সাথে জাইকার ডেপুটি চীফ। উনি অনুষ্ঠানের ছবি তুলছেন। আমি বললাম আমাকে দাও আমি ছবি তুলি। ক্যামেরা নিয়ে ৩/৪টা ছবি তুলে ডেপুটি চীফের পাশে এসে বসলাম। একটু পরে উনি বললেন, ‘কি হলো ছবি তুললে না’? আমি বললাম, ‘তুলেছি’। ডেপুটি চীফ বললেন, ‘ওয়ার্কিং ইজ নট এনাফ, সাম টাইমস ইউ নিড টু শো দ্যাট ইউ আর ওয়ার্কিং’। আমি হতবাক হলাম। বলে কী! কাজ করা যথেষ্ট নয়, কোনো কোনো সময় দেখাতে হয় যে তুমি কাজ করছো। মানে কাজ করার প্রচারটাও জরুরী! আমি বুঝে গেলাম, এবার নানা ঢঙয়ে অনেক ছবি তুললাম। ডেপুটি চীফ হেসে বললেন, ‘গুড’।

২০১৫ সালে, ব্রাক কৃষির নোবেল নামে খ্যাত বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কৃষি পুরস্কার পেয়েছে এই খবর দেখে। সঙ্গে সঙ্গে আমার জাইকার ডেপুটি চীফ ঐ কথা মনে পড়লো, ‘ওয়ার্কিং ইজ নট এনাফ, সাম টাইমস ইউ নিড টু শো দ্যাট ইউ আর ওয়ার্কিং’। ব্রাক কৃষিতে কতটুকই কী করেছে দেশে বিদেশে আমরা তা জানি কিন্তু ঐ যে, ‘ওয়ার্কিং ইজ নট এনাফ, সাম টাইমস ইউ নিড টু শো দ্যাট ইউ আর ওয়ার্কিং’। অমনি ব্রাক পেয়ে গেলেন পুরস্কার। কারণ তারা যাই করেছে তার চেয়ে তার প্রচার ১০ হাজার গুণ বেশী।

আরেকটা কথা বলি, ২০১২ সালের ঘটনা সেটা। জাপানের এক অধ্যাপক এলেন, চট্টগ্রামের একটা প্রকল্প দেখতে। প্রকল্প দেখা শেষে বললেন তিনি চট্টগ্রামের যোবরা গ্রামে যাবেন ক্ষুদ্র ঋণের ল্যাবরেটরিতে, ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য দেখতে। অধ্যাপককে নিয়ে গেলাম যোবরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণের ল্যাবরেটরিতে। যোবরা রেলস্টেশনের পাশের স্কুলেও জাইকা ফাণ্ডের ব্যবহার আছে। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে সেখানেই গেলাম, গাইড ছাড়া। জাপানিজ অধ্যাপক সাহেব উনি জানেন না যে, ঐ গ্রামেই ডক্টর ইউনূসের মাতুলালয়, যার অধিকাংশ না হলেও অনেকেই বাঙালি মুসলিম নন, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ডক্টর ইউনূসের মাতুলরা যোবরা গ্রামের মাথা। যা হোক, ওখানে গিয়ে জাপানী অধ্যাপক থ’ হয়ে গেলেন, আমিও। ছবি দেখুন যোবরা গ্রামের রেলস্টেশনের পাশের। আমার আবার সেই কথা মনে পড়লো, ‘ওয়ার্কিং ইজ নট এনাফ, সাম টাইমস ইউ নিড টু শো দ্যাট ইউ আর ওয়ার্কিং’। জাপানী অধ্যাপক ঐ গ্রামের মুরুব্বী একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এখানে মানুষের অবস্থার কেমন উন্নতি হয়েছে আগের তুলনায়’? ঐ লোক বললেন, ‘আমাদের এখানে তেমন একটা উন্নতি না হলেও, দেশের অন্য এলাকায় অনেক উন্নতি হয়েছে তাই তো নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন উনি’। 

হায়রে বেচারা বাংলার কৃষিবিদ, সারা জীবন ভালো ছাত্র, ক্লাসে ফার্স্ট, কিন্তু সবশেষে লাস্ট। তাঁরা ব্রাক হতে পারে না, ডক্টর ইউনূসের মতো বহুভাষায় দক্ষদের নিয়ে প্রোপাগান্ডাতে অত্যন্ত সফল ইউনূস সেন্টার খুলতে পারেন না। তাঁরা জানেনই না যে, ‘ওয়ার্কিং ইজ নট এনাফ, সাম টাইমস ইউ নিড টু শো দ্যাট ইউ আর ওয়ার্কিং’। কাগজের জালিয়াতি কাকে বলে!

বাংলা ইনসাইডার

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭