ইনসাইড থট

দুর্গাপূজার আনন্দ সবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/10/2019


Thumbnail

যখন হাইস্কুলে পড়ি তখন উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় ব্যাতিক্রমী হার্ডবোর্ডের দূর্গা প্রতিমা তৈরী করেছিল নান্দনিক পূজা কমিটি। এখনো শহরের প্রধান আর্কষণ নান্দনিকের এই পূজা। সেই হার্ডবোর্ডের ব্যাতিক্রমী আয়োজন থেকে এখনো একটু ভিন্ন আয়োজনেই চলে কৈশোর আর তারুণ্যের শহরের পূজার সঙ্গে যুক্ত হতে শারদীয় উৎসবে চলে যাই গাইবান্ধায়। এখন দূর্গা পূজার জৌলুষ বেড়েছে। গ্রাম জেলা থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত র্দূগা পূজা মানেই ব্যাপক আলোকসজ্জা, তুমুল আয়োজন। এবারতো মহালয়াতেই ধুমধাম আয়োজন, তাই বেশ কয়েকটি টেলিভিশনে সকালেই তার সরাসরি সম্প্রচার দেখা গেলো। কোটি টাকার আয়োজনেও আছে দেবী র্দূগাকে সন্তুষ্ট করার প্রতিযোগিতা। রাজধানী ঢাকায় বনানীর পূজমন্ডপের আলোকসজ্জা পৌছে গেছে গুলশান দুই নম্বর গোলচক্কর পর্যন্ত। আর ফার্মগেটে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ ভারতের অজন্তা-ইলোরার গুহার আদলে তৈরী করেছে নিজেদের র্দূগাপূজার মন্ডপ। কলাবাগান মাঠে ধানমন্ডি পূজা উদযাপন কমিটিও দারুণ আয়োজন করেছে। জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীতে আছে ঐতিহ্যের বাহার, রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজা এখনো পাঁচদিনের পূজো আয়োজনের অন্যতম আর্কষণ।

সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার মন্ডপে মা র্দূগার আরাধনায় মেতেছে দেশের সনাতন ধর্মের মানুষেরা । এখন শারদীয় দূগোর্ৎসবের ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে আয়োজনে আর আনন্দ উপভোগে যুক্ত হয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষরাও। ‘ধর্ম যার যার , উৎসব সবার’ এই আপ্তবাক্যটি বাস্তব রূপ পায় শারদোৎসবেই। সেদিন কয়েকজন সাংবাদিক রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আয়োজিত সনাতন সমাজ কল্যান সংঘের সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দের কাছে জানতে চেয়েছিল এবারের পূজোর খরচ সম্পর্কে। কৃষিবিদ সমীর চন্দ জানালেন নগদ টাকার চেয়ে বিশাল পূজামন্ডপ নির্মাণের সামগ্রীই নেয়া হচ্ছে সবার থেকে। আর এক্ষেত্রে সনাতন ধর্মের বাইরে মুসলিম ও খ্রীস্টান র্ধমাম্বলম্বীও অনেক আগ্রহী মানুষ তাদের নানান সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেন। এর মধ্যে সিমেন্ট, প্লাইউড থেকে শুরু করে ইট, কাঠ এমনকি শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও আছে। গতবার এই পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। আর এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে।

পাচদিন ধরে সন্ধ্যায় রাতে যে হাজার হাজার মানুষ র্দূগামন্ডপগুলোতে ভীড় জমায় তাতে শুধু সনাতন ধর্মের নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আসে পূজোর আনন্দের ভাগ নিতে। আগে ঢাকায় সবাই বিজয়া দশমীতে যেত পুরোনো ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনে । এখন নতুন ভেনু হয়েছে আশুলিয়া। বনানী,বারিধারা,বসুন্ধরা আর উত্তরার পূজারী মাকে সেখানেই বিসর্জন দেন। এখানেও দর্শনাথীদের ভীড় থাকে আর বিজয়ার শোভাযাত্রায়ও যোগ দেন হাজানো মানুষ। গাইবান্ধার নান্দনিক পূজা কমিটির প্রতিমা ঘাঘট নদীর ঘাটে নিয়ে যেতে প্রতিবারই দেরী হয়ে যায়। জেলা প্রশাসন নদীর পাড়ে বিশেষ আয়োজন রাখে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত শেষ করতে চান সবকিছু। নিরাপত্তার কথা ভেবেই। কিন্তু পাড়ার হিন্দু-মুসলমান কিশোর তরুনরা বাধা দেয় কারন তারা বেশী সময় নাচতে চান ঢাক-ঢোল-কাসরের শব্দতালে। মূল মঞ্চ থেকে প্রতিমা নীচে নামিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নারীদের সিদুর খেলা , এরপরেই তারুন্যের উদ্বাহু নৃত্য।

ঢাকায় যে ইলোরা-অজন্তার গুহার আদলে পূজা মন্ডপ,তেমন ব্যাতিক্রমের খবর পাই জেলা থেকেও। মৌলভীবাজারে নাকি এবার প্রথমবারের মত কাচের দূর্গা প্রতিমা তৈরী হয়েছে। সেখানকার সাংবাদিকরা সেই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করতে চান। আবার পদ্মাপড়ের জেলা রাজবাড়িতেই পূজা হচ্ছে ৪২৬টি। জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১১টি স্পটে ৪৫০টি বিগ্রহ তৈরী করে ,সব মিলিয়ে ব্যাপক আয়োজন। আর এসব প্রতিমাই নাকি তৈরী হয়েছে বাশ দিয়ে। আর রাজধানীতে কারওয়ান বাজারে এবারই শুরু হলো মিডিয়া পাড়ার দূর্গেৎসব। তারকা সাংবাদিক মুন্নী সাহা এর উদ্যোক্তা। এাটিএন নিউজের সবাই সেই আয়োজনে যুক্ত হয়েছেন। অন্যান্য গনমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সবাইকে মুন্নী সাহা পূজার নিমন্ত্রণ দিয়েছেন, চাইছেন সর্বাত্মক সহযোগিতাও।

বাংলার হিন্দু,বাংলার বৌদ্ধ,বাংলার খ্রীস্টান,বাংলার মুসলমান ,আমরা সবাই বাঙালী। আর বাঙালীর ঈদ আর দূর্গাপূজাও এখন সকলের উৎসব। ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল বাহাত্তরের সংবিধানে। দেশের বেশিরভাগ মানুষই তাই। তাইতো সকল ধর্মের উৎসবের আনন্দের এখন সবার অধিকার। র্দূগাপূজার সূচনা দিবস ষষ্ঠীর দিনই দেশের রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ আব্দুল হামিদ গিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিমন এবং ঢাকেশ্বরীতে। পূজারী খুব খুশী মহামান্যকে পেয়ে। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এসেছিলেন বনানী পূজা মন্ডপে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটের পূজায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে এসে নিশ্চয় যাবেন কোনো না কোনো মন্দিরে। শঙ্খধ্বনীতে তাকে স্বাগত জানাবেন ভক্তরা। সেই কথাই উচ্চারিত হবে জোরেশোরে ‘ধর্ম যার যার , আনন্দ সবার ‘।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭