ইনসাইড গ্রাউন্ড

রোড টু সেমিফাইনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/06/2017


Thumbnail


এ যেন ১৬ কোটি প্রাণের স্বপ্নপূরণ। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। আর এই সুবাদে প্রথম কোনো আইসিসি’র টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে খেলবে টাইগাররা।

১১ বছর পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে দুর্দান্তভাবে। গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় করেছে ২০১৫ বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ `এ` রানার্সআপ হিসেবে সেমিতে উঠেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির `এ` গ্রুপের লড়াই। টানা তিন জয়ে ইংল্যান্ড পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে। সেমিফাইনালে পৌঁছানো বাংলাদেশের অর্জন ৩ পয়েন্ট। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। আর বাংলাদেশের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া নিউজিল্যান্ডের অর্জন ১ পয়েন্ট।

শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ। এরপর অপেক্ষা ছিল ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফলাফলকে ঘিরে। শনিবার ইংল্যান্ড বৃষ্টি আইনে ৪০ রানে হারিয়েছে অজিদের। তাতে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর বাংলাদেশ অর্জন করেছে শেষ চারে খেলার যোগ্যতা।

প্রথমবারের মতো আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে ওঠার সাফল্য নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। তবে শুরুটা খুব ভালো হয়নি টাইগারদের। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে হেরে যায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ১ পয়েন্ট জমা হয় বাংলাদেশের ঝুলিতে। টিকে থাকে সেমিতে খেলার আশা। এরপর তো কিউইদের ৫ উইকেটে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ
আসরের প্রথম ম্যাচেই টাইগাররা মুখোমুখি হয় স্বাগতিকদের বিপক্ষে। সেটা ছিল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল টাইগারদের। তামিম-মুশফিকের জুটির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ৩০৫ রান করতে সক্ষম হয়। যদিও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে খেলেছে, রান হওয়ার কথা ছিল ৩৪০ এর বেশি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে, টাইগারদের বাজে বোলিংয়ে খুব সহজেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় ইংলিশরা। বাংলাদেশ ম্যাচটা হারে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফির কন্ঠেও শোনা যায় ব্যাটিংয়ে ২০-৩০ রানের আক্ষেপের কথা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ:
 ৫০ ওভারে ৩০৫/৬ (তামিম ১২৮, সৌম্য ২৮, ইমরুল ১৯, মুশফিক ৭৯, সাকিব ১০, সাব্বির ২৪, মাহমুদউল্লাহ ৬*, মোসাদ্দেক ২*; ওকস ০/৪, উড ০/৫৮, বল ১/৮২, স্টোকস ১/৪২, প্লানকেট ৪/৫৯, মইন ০/৪০, রুট ০/১৮)

ইংল্যান্ড: ৪৭.২ ওভারে ৩০৮/২ (রয় ১, হেলস ৯৫, রুট ১৩৩*, মর্গ্যান ৭৫*; মাশরাফি ১/৫৬, সাকিব ০/৯২, মুস্তাফিজ ০/৫১, সৌম্য ০/১৩, মোসাদ্দেক ০/৪৭, রুবেল ০/৬৪, সাব্বির ১/১৩।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এই ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই ম্যাচেই হারলেই বিদায় নিতে হতো টুর্নামেন্ট থেকে। সেই সমীকরণ নিয়েই টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু এদিনের শুরুটা মনে হয় বাংলাদেশে নামে লেখা ছিল না। ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ১৮২ রানে অলআউট হয়ে টিম বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে জয়ের বন্দরের দিকেই যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ১৬ ওভার শেষে বাদ সাধে বৃষ্টি। পরিশেষে বৃষ্টির আশীর্বাদেই ম্যাচটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচ থেকে পায় ১ পয়েন্ট। আর সেই সঙ্গে সেমিতে যাওয়ার আশাও টিকে থাকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:বাংলাদেশ: ৪৪.৩ ওভারে ১৮২ (তামিম ৯৫, সৌম্য ৩, ইমরুল ৬, মুশফিক ৯, সাকিব ২৯, সাব্বির ৮, মাহমুদউল্লাহ ৮, মিরাজ ১৪, মাশরাফি ০, রুবেল ০, মুস্তাফিজ ১*; স্টার্ক ৪/২৯, হেইজেলউড ১/৪০, কামিন্স ১/২২, হেড /৩৩, হেনরিকেস ১/৩০, জ্যাম্পা ২/১৩, ম্যাক্সওয়েল ০/৯)

অস্ট্রেলিয়া: ১৬ ওভারে ৮৩/১ (ওয়ার্নার ৪০*, ফিঞ্চ ১৯, স্মিথ ২২*; মুস্তাফিজ ০/২৭, মাশরাফি ০/৩০, রুবেল ১/২১, মিরাজ ০/৪)


বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
সেমিফাইনালে যেতে হলে এই ম্যাচটাতে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। টসে হেরে ফ্লিন্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। বোলারদের নৈপুন্যে নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানের মধ্যে বেধে রাখতে সক্ষম হয় টাইগাররা। জবাবে ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৩৩ রানের মাঝে পরে যায় ৪ উইকেট। কিন্তু সেখান থেকেই ম্যাচটাকে নতুনভাবে শুরু করলেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহ। এক রেকর্ড পার্টনারশিপে ধুকতে থাকা দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতে নেয় ৫ উইকেটে।   

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড:
৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (গাপটিল ৩৩, রনকি ১৬, উইলিয়ামসন ৫৭, টেইলর ৬৩, ব্রুম ৩৬, নিশাম ২৩, অ্যান্ডারসন ০, স্যান্টনার, মিলন ৭, সাউদি; মাশরাফি ০/৪৫, মুস্তাফিজ ১/৫২, তাসকিন ২/৪৩, রুবেল ১/৬০, সাকিব ০/৫২, মোসাদ্দেক ৩/১৩)

বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৬৮/৫ (তামিম ০, সৌম্য ৩, সাব্বির ৮, মুশফিক ১৪, সাকিব ১১৪, মাহমুদউল্লাহ ১০২*, মোসাদ্দেক ৭*; সাউদি ৩/৪৫, বোল্ট ১/৪৮, মিলন ১/৫৮, নিশাম ০/৩০, স্যান্টনার ০/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/১৯, উইলিয়ামসন ০/১৯)।


ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশের সেমিতে যাওয়ার কথা উঠলে, এই ম্যাচের কথা আসবেই। বাংলাদেশ তাদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেমিতে যাওয়া নিশ্চিত ছিল না। সেমিতে যাওয়ার ভাগ্য নির্ভর করছিল এই একটি ম্যাচের ওপর। ইংল্যান্ড জিতলে বা ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যাক্ত হলে বাংলাদেশই চলে যাবে সেমিফাইনালে। তবে ইংল্যান্ড হারলে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে সেমিতে।

ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে ইংল্যান্ড অসিদের ব্যাটিংয়ে পাঠায়। ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ভালো সূচনার পরও, ইংলিশ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ২৭৭ রান করতে সক্ষম হয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু বেন স্টোকস ও অধিনায়ক মরগ্যানের অসাধারণ এক জুটিতে ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের সংগ্রহ যখন ৪০.২ ওভারে ২৪০ রান তখন বাধা দেয় বৃষ্টি।  আর থ্রি-লায়ন্সদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৮ বলে ৩৮ রান। পরে বৃষ্টির কারণে আর খেলা মাঠে না গড়ালে ইংল্যান্ড বৃষ্টি আইনে ৪০ রানে জয় লাভ করে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চলে যায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। বাদ পড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।

কে হতে পারে সেমির প্রতিপক্ষ?
সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কে হতে পারে, তা আজই জানা যাবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বা ভারতের মধ্যে কোনো এক দল হবে তা নিশ্চিত। কারণ গ্রুপ `বি`তে চারদলের পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে এগিয়ে প্রথম স্থানে ভারত আর দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৩০ মিনিটে মুখোমুখী হবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলা ইন্সাইডার/ডিআর   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭