ইনসাইড গ্রাউন্ড

একজন পার্শ্বনায়ক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/06/2017


Thumbnail

 

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশে ক্রিকেটের এক উজ্জল নক্ষত্র। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে আবার আলোচনায় তিনি। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্য রিয়াদ। তবে তাঁকে নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা সম্ভবত বেশি হয়। বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ নায়কদেরকে পছন্দ করে। আর লাইমলাইটে নায়করাই থাকেন। পার্শ্বনায়করা সবসময়ই পর্দার আড়ালেই থেকে যান। তেমনি বাংলাদেশ দলের যদি কোনো পার্শ্বনায়কের নাম বলতে হয় তাহলে সবার আগে আসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ক্রিকেটে যদি পার্শ্বনায়কের কোনো পুরস্কার থাকতো তাহলে মাহমুদুল্লাহই সবচেয়ে বেশি বার পেতেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

মাত্র চার বছর ক্রিকেট খেলে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে, তাঁরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১০ বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন নিরবে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জয়ে তাঁর অবদান অসামান্য। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে দলের ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা যখন একে একে আউট হয়ে গেলেন ঠাণ্ডা মাথায় টেলেন্ডারদের নিয়ে এই মাহমুদুল্লাহই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। ২০১৫ সালের তো অনেক অভিজ্ঞ এবং দলের অন্যতম সিনিয়র হিসেবে গেলেন বিশ্বকাপ খেলতে। আর সেখানে তিনি সুযোগ পেয়েছিলেন নিজের পছন্দের চার নম্বর পজিশনে। খেলেছিলেনও দুর্দান্ত। ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে খেলেছিলেন মহাকাব্যিক এক ইনিংস। তাঁর ১০৩ রানের সেই ইনিংসে ভর করেই জয়ের ভিত পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবং একই সঙ্গে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। পরের ম্যাচেই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন রিয়াদ। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সেই ম্যাচেও করেছিলেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের মত বড় আসরে করেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। কিন্তু এই কৃতিত্ব খুব বেশি দিন মনে রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। কয়েকটা ম্যাচ না যেতেই অবনমন হলো ব্যাটিং অর্ডারে। হয়তো ফর্মটা একটু খারাপ যাচ্ছিল কিন্তু প্রিয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ২২৪ রানের যে এক অবিস্মরণীয় পার্টনারশিপ গড়লেন তাতে সব সমালোচনার জবাবতো  দিলেনই এবং বুঝিয়ে দিলেন ফর্ম ইজ টেম্পোরারি বাট ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। এদিন কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে যে কীর্তি গড়লেন তা হয়তো ছাড়িয়ে গেছে আগের সব কীর্তিকে। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল বাংলাদেশ ঠিক তখনই সাকিব এবং রিয়াদ গড়লেন এই অমর কীর্তি। সাকিব ১১৪ রানে  আউট হলেও রিয়াদ ১০২ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর থেকেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সাকিব- রিয়াদরা। সেঞ্চুরি করেও বরাবরের মত পার্শ্বনায়ক রিয়াদ। তবে এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তার। দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেই খুশি তিনি।

 

বর্তমান বাংলাদেশ দলে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রিয়াদ। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যথাযথ মূল্যায়ন কী পেয়েছেন তিনি? কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের মনে এই প্রশ্ন। এখনো ব্যাটিং করতে হয় ছয় বা সাত নম্বরে। দলের তিন নম্বর পজিশনে কেউই নিজের জায়গা পাকা করতে পারছেন না। ইমরুল, সাব্বির বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তারপরও কেন রিয়াদকে ওই পজিশনে খেলানো হচ্ছেনা এই ব্যাখ্যা মনে হয় টিম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া আর কারও কাছে নেই। বল হাতেও রিয়াদ যথেষ্ট কার্যকরী সেটা প্রমাণিত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অনেক দিন তাঁকে বল হাতে দেখা যায় না। দলের সংকটকালীন সময়ে নিজের সেরাটা দিয়ে যাচ্ছেন সবসময়। তারপরও ঠিক প্রাপ্য সম্মান টা কি তিনি পাচ্ছেন? হয়তো না। তবে রিয়াদকে যদি উপরের দিকে ব্যাটিং করানো হয় তাহলে হয়তো লাভবান হবে পুরো দল। এই মহাকাব্য রচনার পরও যদি টিম ম্যানেজমেন্টের বোধোদয় না হয় তাহলে আর কবে?

বাংলা ইনসাইডার/আরএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭