ইনসাইড আর্টিকেল

স্মরণে নীলিমা ইব্রাহিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/10/2019


Thumbnail

আমার পরিচয়? না, দেবার মতো আমার কোনও পরিচয় আজ আর অবশিষ্ট নেই। পাড়ার ছেলেমেয়েরা আদর করে ডাকে ফতি পাগলী। সত্যি কথা বলতে কি আমি কিন্তু পাগল নই। যারা আমাকে পাগল বলে আসলে তারাই পাগল। এ সত্যি কথাটা ওরা জানে না।

কথাগুলো ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ প্রামাণ্য গ্রন্থের। বীরাঙ্গনাদের কঠিন সময়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে কালজয়ী প্রামাণ্য গ্রন্থটি আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় নীলিমা ইব্রাহিমকে। দুঃসাহসী এই লেখিকার ৯৯তম জন্মদিন আজ।

নীলিমা ইব্রাহিমের জন্ম ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। পিতা প্রফুল্লকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী।

নীলিমা ইব্রাহিম উঁচুমাপের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতার লরেটো হাউসে লেকচারার (১৯৪৩-৪৪) হিসেবে চাকরি করেন। তারপর দু’বছর (১৯৪৪-৪৫) তিনি ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের লেকচারার ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭২ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক ছিলেন।

তিনি রোকেয়া হলের প্রভোস্ট এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব খুব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি পালন করেন। তা হলো- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দালাল রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি কর্তৃক অপহৃত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিতা হতভাগা অসংখ্য বাঙালি মা-বোন এবং যুদ্ধশিশুদের পুনর্বাসনের জটিল কাজে হাত দেন।

নীলিমা ইব্রাহিম লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ ও নারী-উন্নয়সংস্থা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি ও বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির জীবন সদস্য ছিলেন।

এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী এবং কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর বোর্ড অব গভর্নেসের চেয়ারপার্সন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব উইমেন-এর সভানেত্রী এবং অ্যাসোসিয়েটেড কান্ট্রি উইমেন অব দি ওয়ার্ল্ড-এর সাউথ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার এরিয়া প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বার্লিন, মিউনিক ও ফ্রাংফুর্টে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বসমবায় সম্মেলন’-এ পূর্বপাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৭৩-এ নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক ওয়ান এশীয় সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪-এ তিনি মস্কোয় অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বশান্তি কংগ্রেস’, হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বনারী বর্ষ’ এবং ১৯৭৫-এ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বনারী সম্মেলন’-এ যোগ দেন।

‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র পাশাপাশি নীলিমা ইব্রাহিমের গ্রন্থের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গবেষণা- শরৎ-প্রতিভা (১৯৬০), বাংলার কবি মধুসূদন (১৯৬১), ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ও বাংলা নাটক (১৯৬৪), বাংলা নাটক : উৎস ও ধারা (১৯৭২), বেগম রোকেয়া (১৯৭৪), বাঙ্গালীমানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৮৭), সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ (১৯৯১); ছোটগল্প রমনা পার্কে (১৯৬৪); উপন্যাস বিশ শতকের মেয়ে (১৯৫৮), এক পথ দুই বাঁক (১৯৫৮), কেয়াবন সঞ্চারিণী (১৯৬২), বহ্নিবলয় (১৯৮৫); নাটক দুয়ে দুয়ে চার (১৯৬৪), যে অরণ্যে আলো নেই (১৯৭৪), রোদ জ্বলা বিকেল (১৯৭৪), সূর্যাস্তের পর (১৯৭৪); কথানাট্য আমি বীরাঙ্গনা বলছি (২ খন্ড ১৯৯৬-৯৭); অনুবাদ এলিনর রুজভেল্ট (১৯৫৫), কথাশিল্পী জেমস ফেনিমোর কুপার (১৯৬৮), বস্টনের পথে (১৯৬৯); ভ্রমণকাহিনী শাহী এলাকার পথে পথে (১৯৬৩), আত্মজীবনী বিন্দু-বিসর্গ (১৯৯১) ইত্যাদি।

পুরস্কার প্রাপ্তিও কম ঘটেনি তার জীবনে। পেয়েছেন- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৭), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৯), বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতি পদক (১৯৯০), অনন্য সাহিত্য পদক (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৯৭), শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯৭), থিয়েটার সম্মাননা পদক (১৯৯৮), একুশে পদক (২০০০)।

তার জন্মদিনে অসংখ্য শ্রদ্ধাভরে আমরা স্মরণ করছি তাকে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭