ইনসাইড আর্টিকেল

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ভালো আছি, ভালো থাকবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/10/2019


Thumbnail

‘এক গ্লাস শূন্যতা নিয়ে বসে আছি

শূন্যতার দিকে চোখ, শূন্যতা চোখের ভেতরেও।’

কি এতো শূন্যতা ছিল তার সেটা জানা নেই আমাদের। কথাগুলো প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর। তিনি কি এক গ্লাস শূন্যতা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন শূন্যতার দিকে? রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ‘র কবিতা, লেখনী বার বার ছিন্ন করেছে শূন্যতাকে। বাংলাদেশের সাহিত্যে কবি নিজেকে পরিচিত করেছেন ভালোবাসা ও দ্রোহের কবি হিসেবে। আজ তাঁর ৬৩তম জন্মদিনে প্রাণের বাংলার পক্ষ থেকে জানাই গভীর ভালোবাসা।

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর তার পিতার কর্মস্থল বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে।

কবি রুদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্সসহ এম এ পাশ করেন। ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র থাকা অবস্থায় সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অবৈধ সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন রুদ্র। সেই সময়ে বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁর কবিতায় সেই তুমুল বিদ্রোহী সময়ের ছবি কবিতার পাঠকদের নাড়া দিয়েছিল।

তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকয়টি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণ-আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং `ভালো আছি ভালো থেক`সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।

ব্যক্তিজীবনে বাউন্ডুলে এ কবির জীবনে বন্ধু ছিলো অসংখ্য। অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তসলিমা নাসরিনকে, ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি। তখনো তসলিমা নাসরিন নামে খ্যাতি পাননি। সে বিয়ে টেকেনি। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। অবশ্য ৯০’র শেষদিকে তসলিমার সঙ্গে আবার প্রেম শুরু হয়েছিলো। কিন্তু সেটা ছিলো তসলিমার দ্বিতীয় বিবাহ থেকে তৃতীয় বিবাহে উত্তরণের মধ্য সময়ে। ফলে সে প্রেমও টিকলো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্যামা তরুণী শিমুলের সঙ্গে প্রেম হলো। কিন্তু তার অভিভাবক রাজী না। সে সম্পর্কও চুকে বুকে গেলো। সেই থেকে রুদ্র আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে লাগলেন। ভেতরে ভেতরে একা হয়ে যেতে লাগলেন। ক্ষয়ে যেতে লাগলেন। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা ফলস্বরূপ আলসারে পেয়ে বসেছিল তাঁকে। পায়ের আঙ্গুলে রোগ বাসা বেধেছিল। ডাক্তার বলেছিলো পা বাঁচাতে হলে সিগারেট ছাড়তে হবে। তিনি পা ছেড়ে সিগারেট নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর স্থান হলো হলি ফ্যামিলির ২৩১ নম্বর কেবিনে। ৯১ সালের ২০ জুন ভালো হয়ে পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে ফিরেও গেলেন। কিন্তু ২১ জুন ভোরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, বাংলা ভাষায় অসামান্য কবি রুদ্র।

কবির কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, উপদ্রুত উপকূল(১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম(১৯৮২), মানুষের মানচিত্র(১৯৮৪), ছোবল (১৯৮৬), দিয়েছিলে সকল আকাশ(১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)।

তিনি ১৯৮০ সালে শহীদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন।

এখনো কানে বাজে রুদ্র’র সেই কথাগুলো-

ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো…

তিনি হয়ত একজনকেই বলেছিলেন চিঠি লিখে পাঠাতে। তিনি পাঠিয়েছিলেন কিনা তাও আমরা জানি। কিন্তু এই কথাগুলো সবার মনে গেঁথে আছে। আমাদের ভালোবাসার প্রকাশে এই কথাগুলো এখনো অনুসরণীয়।

থাকুক তোমার একটু স্মৃতি থাকুক, একলা থাকার খুব দুপুরে একটি ঘুঘু ডাকুক… তার স্মৃতি এখনো অম্লান হয়েই রয়ে গেছে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭