ইনসাইড হেলথ

অস্টিওপরোসিস সম্পর্কে কতটুকু জানা আমাদের?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/10/2019


Thumbnail

আমাদের শরীরের জন্য হাড় যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে, হাড় ছাড়া আমাদের দৈহিক কাঠামোটাই তো অসম্ভব। কিন্তু জীবনের বিভিন্ন প্রান্তে এসে এই হাড়ের বিভিন্ন রোগে আমাদের যথেষ্ট ভুগতে হয়। তখন জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। হাড় ভাঙা, হাড় ক্ষয়ের মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই মুশকিল। অস্টিওপরোসিস হাড়ের তেমনই একটি জটিল রোগ।

অস্টিওপরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙা র ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সর্বোচ্চ হাড়ের ভর এর তুলনায় কম ভর, এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী হাড়ের ক্ষয়ের কারণে অস্টিওপরোসিস হতে পারে। অস্টিওপরোসিস রোগের প্রতিরোধ,  নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়তে প্রতিবছর ২০ অক্টোবর ‘বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস’ পালন করা হয়। আজ এই রোগ নিয়ে আমাদের বিশেষ আয়োজন।

কিভাবে জানবেন আপনি অস্টিওপোরোসিস রোগে ভুগছেন

নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো থাকলে ব্যক্তির অস্টিওপোরোসিস রোগে ভোগার সম্ভাবনা থাকে:

  • পিঠে ব্যথা
  • সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা হ্রাস পাওয়া
  • ঝুঁকে পড়া বা নমিত ভঙ্গি
  • নিতম্ব বা মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া

অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ কেন হয়

হাড় গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৪০ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধি বেশি হয় আর ক্ষয় কম হয়। এরপর থেকে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়, বৃদ্ধি কম হয়। হাড়ক্ষয় নির্ভর করে আপনার ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন ফাইবারের উপস্থিতি কেমন। তাই অল্প বয়সে স্বাস্থ্যসম্মত হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন বৃদ্ধ বয়সে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

এছাড়া যেসব কারণে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ হয়-

১. মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি।

২. যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি।

৩. উচ্চতা অনুসারে যাঁদের ওজন কম হয়।

৪. যাঁরা নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খান না।

৫. যারা নিয়মিত ধূমপায়ী ও মদ্যপানকারী।

৬. ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে।

৭. থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি হলে।

৮. এই রোগের পারিবারিক ইতিহাসের ঝুঁকি বেশি।

৯. বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও হাড়ক্ষয় হয়।

১০. ডায়াবেটিক, লিভার, কিডনি রোগে হাড়ের ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

মেয়েদেরও মাসিক বন্ধ হলে হঠাৎ করে তাঁদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়। এ কারণে হাড় হয়ে যায় ভঙ্গুর। অনেক দিন ধরে শয্যাশায়ী হলে হাত-পা নাড়াচড়া হয় না। এটিও অস্টিওপরোসিসের কারণ। মেয়েদের ওভারি অপারেশনের কারণে ফেলে দিলে ঝুঁকি বাড়ে।

প্রতিরোধ

অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক, যার জন্য প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার উত্তম।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড়ক্ষয় কমায়।

নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার খান। হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খান।

ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে।

ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। কারণ, এতে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না।

পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমে পিচ্ছিল ভাব দূর করুন। রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না।

এই রোগের প্রতিরোধে চাই আগে থেকেই সচেতনতা, যত্ন, জীবনের শৃঙ্খলা।

মনে রাখবেন

এ রোগ চিকিৎসা করানোর চেয়ে প্রতিরোধ করাই শ্রেয়। এজন্য যাঁদের এ রোগের ঝুঁকি আছে, তাঁরা আগে থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সচেতন হওয়া ভালো। তবে এ রোগ হয়ে গেলে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এছাড়া হাড়ের ক্ষয়রোধ করে হাড় ঠিক রাখার জন্য বিসফসফোনেট জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। যদি অস্টিওপরোসিসের কোনো কারণ থাকে, তবে তার সঠিক চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময় মেয়েদের ইস্ট্রোজেন থেরাপি দিতে হতে পারে। এ থেরাপি নিয়ে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করে। এ ধরনের হরমোনথেরাপি স্তন ক্যানসার ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি এখনও এতটা প্রতিষ্ঠিত নয়। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যদি হরমোনথেরাপি দিতে হয়, তাহলে মাসে মাসে স্তন পরীক্ষা করালেই হয়। এটা মেয়েরা নিজেরাই করতে পারে।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭