ইনসাইড গ্রাউন্ড

টাইগারদের জ্বলে উঠার মঞ্চ আইসিসি টুর্নামেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 12/06/2017


Thumbnail

চার, দুই, এক যাই হোক ব্যাটে-বলে সংযোগ হলেই করতালি আর সাবাস টাইগার সাবাস বলে গ্যালারিতে আনন্দ-উল্লাস। এভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উৎসাহ যোগায় ১৬ কোটি টাইগার সমর্থকরা। আর সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের এই সমর্থনের প্রতিদান খুব ভালোভাবেই দিয়ে যাচ্ছে। যার বড় প্রমাণ ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে টিম টাইগার।

অথচ সেরা আটের জায়গা না হওয়ায় এই টুর্নামেন্টের গত দুই আসরে খেলারই সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। কিন্ত এবার র‌্যাংকিংয়ের সেরা আট দলের এই টুর্নামেন্টে সেই বাংলাদেশ সেরা চার দলের একটি। সেমির ম্যাচটি দিচ্ছে চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ হওয়ার হাতছানিও! তিন দশকের ওয়ানডে-যাত্রায় বড় কোনো শিরোপার এতটা কাছাকাছি এই প্রথম বাংলাদেশ। তবে আইসিসির টুর্নামেন্টে এটিই সর্বোচ্চ হলেও এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল ফাইনালও খেলেছে। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাদ দিলে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেও সাফল্য আছে বাংলাদেশের। সেই সাফল্যের স্মৃতি রোমন্থন হোক এই আনন্দক্ষণে। 

আইসিসি ট্রফি-১৯৯৭
আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে এটিই বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য, এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। `আইসিসি ট্রফি` নামের এ টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হতো শুধু সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে। ফাইনালে কেনিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। ওই ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটযাত্রা বড় ধরনের গতি পায়। যার ধারাবাহিকতায় আসে টেস্ট স্ট্যাটাস এবং আজকের বাংলাদেশ  হয়ে ওঠা।



আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ-১৯৯৯
তিনটি আসর পর বিশ্বকাপ আবারও ফিরে আসলো ইংল্যান্ডে। তবে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপকে মনে রাখে অন্য একটা কারণে। সেবারই যে প্রথম বিশ্বকাপের মত বড় আসরে অনশগ্রহন করে টাইগাররা।

প্রথম অংশগ্রহণে কিন্তু হতাশ করেনি বাংলাদেশ। প্রথম দুই খেলায় নিউ জিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল। তবে তৃতীয় ম্যাচে আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে তখনকার সতীর্থ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পায় প্রত্যাশিত জয়। আগে ব্যাটিং করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৫ রান তোলে বাংলাদেশ। মিনহাজুল আবেদীনের অপরাজিত ৬৮ রান বাংলাদেশের ইনিংসটি টেনে নেয় অতদূর। এরপর স্কটল্যান্ডকে ১৬৩ রানে অলআউট করে ২২ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের প্রথম জয়।

দ্বিতীয় জয়টি আরো বিখ্যাত। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তখনও পর্যন্ত অপরাজিত পাকিস্তানকে যে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ! নিজেরা ৯ উইকেট ২২৩ রান তোলার পর পাকিস্তানকে ১৬১ রানে অলআউট করে ৬২ রানের সেই ঐতিহাসিক জয়। ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে তিন উইকেট নেওয়ায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ খালেদ মাহমুদ সুজন।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০০৭
২০০৭ বিশ্বকাপে ক্রিকেটের বিস্ময় হয়ে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দেয় হাবিবুল বাশার সুমনের দল। ভারতের ১৯১ রান তাড়া করার পথে তিনটি ফিফটি করেন তিন তরুণ। সে তিনজনই এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় ভরসা- সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম।



গ্রুপের পর্বে ভারতের পাশাপাশি বারমুডাকে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় সুপার এইট পর্বে। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ আবারও ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয়। শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস আর গ্রায়েম স্মিথদের দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যায় ৬৭ রানে। বাংলাদেশের ২৫১ রানের জবাবে প্রোটিয়ারা অলআউট হয় ১৮৪ রানে।



আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১
বিশ্বকাপ নিয়ে এবার অনেক আগে থেকেই আলোচনা শুরু হয়। লাহোরে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের উপর বোমা হামলার জের ধরে পাকিস্তান হারায় তাদের আয়োজক হওয়া যোগ্যতা। তাদের যে ১৪ টি ম্যাচ আয়োজনের কথা ছিল সেসব পরে ভাগাভাগি হয়ে যায় বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। মনোরম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পর্দা উঠে বিশ্বকাপে।

বাংলাদেশের জন্য টুর্নামেন্টটা হয়ে আছে হতাশার এক ইতিহাস হয়ে। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতেছিল সাকিব আল হাসানের দল। সমান ম্যাচ জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজও।



কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যথাক্রমে ৫৮ ও ৭৮ রানে অল আউট হওয়ার স্মৃতি। নেট রান রেটে এগিয়ে থেকে শেষ আটে চলে যায় ক্যারিবিয়রা।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫
শুধু ঘরের মাটিতে নয়, ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ যে বিদেশের প্রতিকূল কন্ডিশনেও যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে তা প্রমাণের বড় মঞ্চ ছিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ২০১৫ বিশ্বকাপ। সেই আসরে বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান আর স্কটল্যান্ড। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল কিউইদের বিপক্ষে। মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরিতে ম্যাচে বেশ ভালোমতোই ছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে হেরে যেতে হয়। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি।



কিউইদের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় মাশরাফির দল। মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি আর শেষদিকে রুবেল হোসেনের পেসে ভর করে বাংলাদেশ জয় পায় ১৫ রানে, নিশ্চিত করে ফেলে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল। এ পর্যন্ত খেলা পাঁচ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মধ্যে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। বাংলাদেশ যেভাবে খেলছিল, সেমিফাইনালও সম্ভব ছিল। কিন্তু কোয়ার্টারে ভারতের বিপক্ষে বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়ে ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষটা মনমতো না হলেও মাথা উঁচু করেই বিশ্বকাপ শেষ করেছিল মাশরাফির দল।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০১৭
এবারের আসরে বাংলাদেশ দল র‌্যাংকিংয়ের ছয় নম্বর দল হয়ে খেলতে নেমেছে ঠিকই; কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডের গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে যাবে- এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেনি। কিন্তু সেমিফাইনালে খেলাটা অসম্ভবও ছিল না। এই গ্রুপকে বলা হচ্ছিল `গ্রুপ অব ডেথ`।



এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিল অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েই সেমির পথে এগিয়েছে বাংলাদেশ। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টিতে। তবে বৃষ্টি নয়, বাংলাদেশ সেমিতে জায়গা করেছে নিজের কৃতিত্বেই। `এ` গ্রুপে ইংল্যান্ডের ৬ পয়েন্টের পর বাংলাদেশের পয়েন্ট। অজি আর কিউইদের অর্জন ছিল মোটে ২ আর ১ পয়েন্ট।

এই হচ্ছে আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোতে আমাদের ক্রিকেটের সাফল্যগাথা। আমরা পরাজয়ে মুষড়ে পড়ি না, তা থেকে সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করি, ফিরে আসি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে।

আমরা কোটি সমর্থক বাংলাদেশের কাছে থেকে ভালো খেলাটা পেতে চাই। জয়টা আমাদের উপরি পাওনা। আর জয় কি সত্যিই কি আমাদের সমর্থনে ভাটা দেয়। বাংলাদেশ হারুক কিংবা জিতুক, এটা তো আমার বাংলাদেশ। জিতলে উল্লাসে ফেটে পড়ি আমরা। আর হেরে গেলে মন খারাপ হয়ে যায় আমাদের। কিন্তু তারপরেও আমরা টাইগারদের সাপোর্ট করা বন্ধ করি না, বরং আমরা পরাজয়ে ভুলে সামনে এগুবে টাইগাররা। কারণ এইটা তো আমার দেশ, আমার দেশের ছেলেরাই খেলছে। আর নিজের দেশকে না ভালবেসে কোথায় যাব আমারা। এ যে আমার প্রিয় জন্মভূমি, আমার প্রাণের বাংলা। ক্রিকেট-ফুটবল কিংবা অন্য যে কোন পর্যায়ে, যেখানেই বাংলাদেশ সেখানেই লাল-সবুজ পতাকা হাতে আমরা। খেলায় জয় যেমন প্রত্যাশিত, তেমনি পরাজয়কেও মেনে নেওয়াটাও প্রকৃত সমর্থকের কাজ।


বাংলা ইন্সাইডার/ডিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭