নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 22/10/2019
সেদিন অফিসে বসে বেশ কান্নাকাটি করে ফেলেছিল রুবাইয়া। বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছু কথাকাটাকাটি হলো, তারপর থেকেই মন খারাপ। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কেঁদেই ফেললো অফিসে। কিছু কিছু সহকর্মী এসে তাকে শান্তনা দিলো, কান্না থামানোর অনেক চেষ্টা করলো। কেউ আবার হাসাহাসি করলো, মেসেজ দিয়ে টিপ্পনিও কাটলো কেউ কেউ। পরে সে বুঝলো যে, না, এভাবে কান্নাটা উচিৎ না। ফরমঅর পরিবেশে কান্নাকাটি ভালো দেখায় না। কিন্তু কান্না পেয়ে গেলে তখন উপায়!
অফিসে কাজের চাপ, বসের খারাপ ব্যবহার বা সহকর্মীর বাজে আচরণ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করতে না পেরে অনেকেই অফিসে কান্নাকাটি করেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই সময় ব্যক্তির ধারণশক্তি নিয়ে সহকর্মী বা বসের মনে প্রশ্ন উঠে। একে দুর্বলতা ও পেশাদারত্বের অভাব হিসেবে চিন্তা করা হয়।
অফিসে কান্নাকাটি কি ঠিক, না কি এটি মানুষের একটি স্বভাবজাত প্রক্রিয়া- এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়েবসাইট মনস্টার।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অসংখ্য মানুষ অফিসে কান্নাকাটি করে। গবেষণায় এও বলা হয় যে, অফিসে যারা কাঁদেন তাদের আবেগপ্রবণ, কম যোগ্য হিসেবে চিন্তা করা হয়। এই বিষয়টি কখনো কখনো প্রমোশনের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানুষের আবেগ অনুভূতি তো থাকবেই। সেটা যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো স্থানে প্রকাশ পয়ে যেতেই পারে। আমরা যা-ই করি, তার সবকিছুর মধ্যে আবেগ জড়িত থাকে। অফিসে আমাদের অনকেটা সময়ে কাঁদতে হয়, ফলে সেখানে আবেগপ্রবণ হয়ে যেতে হতেই পারে। এই আবেগ কান্না হিসেবে প্রকাশ পায়।
তবে অফিসে সবাই যেহেতু সবাইকে ফরমাল থাকতে হয়, তাই সেখানে কেউ কেঁদেকেটে বুক ভাসাতে চায় না। তবে অনেক সময় এটি হয়ে যায়। এতে লজ্জিত হবেন না এবং অবস্থানটি থেকে পালাবেন না। তবে নিজেকে সামলে নিতে হবে অবশ্যই। অফিসে কান্নাকাটিকে অভ্যাস বানানো যাবে না। একে একটি মানবিক মুর্হূত হিসেবে চিন্তা করুন। এটি কোনো অভ্যাস নয়।
বিভিন্ন সমীক্ষা মতে, অনেকক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে অফিসই কিছুটা দুর্বল করে ফেলে। দিনের অনেকটা সময় অফিসে অনেক চাপ নিয়ে থাকা, ভালোভাবে কাজ করতে না পারা, কর্তৃপক্ষের বকাবকি, নির্দিষ্ট সময়ে আশানরূপ কাজ করতে না পারা, উৎকণ্ঠা আর বিষণ্নতায় মন একেবারেই ভেঙে পড়ে। তখন সেই চাপ নিতে না পেরেও দুর্বলচিত্তের মানুষগুলোও কান্নাকাটি করতে পারে।
আর ব্যক্তিগত জীবন তো রয়েছেই। সেখানে কত চড়াই উতরাই থাকে। মন খারাপ, কোনোকিছু হারিয়ে ফেলা, মন ভাঙার মতো কাহিনীর কারণে তো কান্নাকাটি করেই মানুষ। সেক্ষেত্রে আপনি ভাবুন আপনার সঙ্গে কেন এমনটা হচ্ছে। কারণ খুঁজে বের করে সমাধান আনুন। সবার উচিত নিজেদের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা। তবে এই নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করতে মানসিক স্থিতি এবং প্রশিক্ষণ।
কর্মক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারী বেশি কান্নাকাটি করেন। নারীদের এই কান্নার কারণ হিসেবে দেখা গেছে হতাশা ও রাগ। এগুলো প্রকাশ করতে না পেরে বা অবদমন করার কারণে তাঁরা কাঁদতে থাকেন। রাগের জন্য দায়ী হরমোন তখন কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আর এটি থামানো মুশকিল। কাজের ফাঁকে বা পুরনো কথা মনে করে কান্না পায়, মন খুব খারাপ হয়ে থাকে।
তবে এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার পথও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরাই কিছু সমাধান দিয়েছেন, সেগুলো হলো-
অফিসে কান্না আসার মতো পরিস্থিতি হলে উঠে দাঁড়ান এবং পানি পান করুন।
একটু রিফ্রেশ হতে রেস্টরুমে বা ডাইনিং এ যান বা অফিসের বাইরে চলে যান। মোট কথা আপনার টেবিল বা স্থান পরিবর্তন জরুরি।
আপনি কিছু একটা লিখতে বা কিছু কম্পোজ করতে শুরু করুন। নিজের হাতে কিছু লিখুন, আঁকুন বা কিছু একটা নাটক বা কার্টুন দেখে ফেলুন।
অতিরিক্ত কাজের চাপ নেবেন না। যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব ততটুকুই করুন।
কোন বিষয়গুলো বা কোন ধরনের কথাগুলো আপনাকে আহত করে, সেগুলো আপনি জানেন। তাই, না কেঁদে প্রস্তুত হোন কীভাবে কৌশলে এগুলো ব্যবস্থাপনা করবেন এই বিষয়ে।
ছুটির দিনগুলোতে নিজের পছন্দের কাজ করুন। এটি আপনাকে আনন্দ দেবে। অফিস নিয়ে সারাক্ষণ ভাববেন না।
কোনো সহকর্মী যদি কান্নাকাটি করে নিয়মিত
তাকে সমবেদনা না দেখিয়ে ভালোভাবে বোঝান। এভাবে কাঁদলে মন আরও খারাপ হবে বা অন্যেরা কি মনে করবে, সেগুলো বোঝান। আপনার প্রতিক্রিয়া সহজ রাখুন।
সে কেন কাঁদছে বা কী হয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে তখনই প্রশ্ন করতে যাবেন না। তাকে একটু সময় দিন। কিছুক্ষণ পর বা পরেরদিন এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলুন। সমস্যা বা বিষয়টি নিয়ে তাকে দোষী বা দায়ী করে কথা না বলে ইতিবাচকভাবে কথা বলুন।
অবস্থাটিকে বিচার করতে শুরু করে দেবেন না। পরবর্তী সময় এগুলো নিয়ে সমালোচনা থেকেও বিরত থাকুন।
সম্ভব হলে তাকে অফিসের শেষে বাইরে নিয়ে যান, কোথাও ঘুরুন ফিরুন, সিনেমা দেখুন, একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করুন। তাকে আলাদা সময় দিলে সে হয়ত কিছুটা ভরসা পাবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭