ইনসাইড গ্রাউন্ড

আমাদের ক্যাপ্টেন `ম্যাশ`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/06/2017


Thumbnail


মাঠে কারও কাছে তিনি নেতা, বড় ভাই, পরামর্শক। আবার মাঠের বাইরে তিনি একজন বাবা, স্বামী, আবেগপূর্ণ মানুষ। সত্যিকারের ভালো মানুষ। একজন খ্যাতিমান খেলোয়াড় সঙ্গে ভালো মানুষের রসায়ন, তিনি তো জীবন্ত কিংবদন্তীই।

ক্যারিয়ারে আছে সফলতা, ব্যর্থতা, চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করার অপরিসীম সাহস। বারবার পড়ে গেছেন, আবার নতুন উদ্যেমে উঠে দাঁড়িয়েছেন। মচকাবেন, তবু ভাঙবেন না, চোয়ালবদ্ধ প্রত্যয়ে মাশরাফি সবার কাছে যেন অনুকরণীয়। এক হাঁটুতেই কত অস্ত্রোপচার, তারপরও মাশরাফি, মাশরাফিই। হাঁটুতে ব্যান্ডেজ পরে এখনও উত্তাল, উদ্যমী। হারতে জানার মন্ত্র জানা নেই তাঁর, জেতাটাই আসল।

মাশরাফির মূল পরিচয় একজন পেসার, সময়ের পালাবদলে ব্যাট হাতেও ঝড় তোলায় অলরাউন্ডারের তকমা লেগেছে গায়ে। দল পরিচলানার মন্ত্রটা ভেতরে থাকায় তারপর দলনেতা, লিডিং ফ্রম দি ফ্রন্ট। একজন ক্রিকেটারের চেয়ে মাশরাফির বড় পরিচয় তিনি ক্যাপ্টেন, সাহসী যোদ্ধা।

তৃতীয় মেয়াদে মাশরাফির ক্যাপ্টেনসির বয়স প্রায় আড়াই বছর। কিন্তু এই অল্প সময়ে তার হাত ধরেই মূলত বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশ্ব ক্রিকেটে, বিশেষ করে ওয়ানডেতে টাইগাররা এখন যেকোনো দলের কাছে সমীহ জাগানো দল। গত তিন বছরে এই মাশরাফির নেতৃত্বেই খোলনলচে পাল্টে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। দুই হাত ভরে এসেছে অনেক সাফল্য।

বিশ্বকাপের মঞ্চে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া, পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জয়, সবই তো মাশরাফির নেতৃত্বেই। আর তাতে সর্বশেষ সংযোজন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে জায়গা করে নেওয়া, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন। ওয়ানডেতে বেশি জয়ের ক্যাপ্টেন অবশ্য হাবিবুল বাশার সুমন। ৬৯ ওয়ানডেতে তার জয় ৪০টি। তবে মাশরাফির জয়ের হার সর্বোচ্চ ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বাশারের সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ০২ শতাংশ। এগিয়ে তো মাশরাফিই।

মাশরাফি আসলেই বস। এই যে আমারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে খেলছি। সেটা কিন্তু মাশরাফির দ্রুত সিদ্ধান্তগুলোর প্রতিফলন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরা যাক, বাংলাদেশ ম্যাচটি হারতে বসেছে। লড়াইয়ের পুঁজিও অল্প। ১৬ ওভার শেষে হঠাতই নামল বৃষ্টি। আর এই ১৬ ওভারের মধ্যে ১৫ ওভার করেছে পেসাররা। ১ ওভার মিরাজ করেছে দলীয় দশম ওভারের সময়। তাহলে রহস্য কী? কেন পেসাদের দিয়ে বোলিং করালেন মাশরাফি সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বলেন, ‘আমি জানতাম ৬ কিংবা ৭ টার সময়ের (ইংল্যান্ডের সময়) মধ্যে বৃষ্টি নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমি প্রথম ২০ ওভার পেসারদের দিয়ে বোলিং করাই। যাতে সময়টা বেশি পাওয়া যায়।

এটাকে হোমওয়ার্ক ছাড়া আর কী বলা যায়। প্রতিপক্ষ এবং কন্ডিশন নিয়ে তাঁর হোমওয়ার্ক সত্যিই অসাধারণ। আরেকটি ম্যাচের কথা বলা যাক। সেটা হল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ যখন ব্যাকফুটে ঠিক তখনই সবচেয়ে বড় চমক ছিল ডেথ ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের দারুণ বোলিং। ৩ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন এই অফ স্পিনার। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিন উইকেট পেয়েছেন এই তরুণ। আর সেই সুবাদে শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ শেষে ম্যাশ বলেছিলেন, তিনি অপেক্ষা করছিলেন কখন বোলিং করাবেন মোসাদ্দেককে দিয়ে। কারণ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাহাতি ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছিলেন তিনি। সেই সিরিজে নিল ব্রুম ও জিমি নিশামের উইকেটও নিয়েছিলেন সৈকত। আর তাই মাশরাফি তুরুপের তাস করলেন মোসাদ্দেককে। এই যে দ্রুত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা তা কেবল ম্যাশেরই আছে।

২০১৪ সালে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন মাশরাফি। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃতেই বাংলাদেশ এখন ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে কখনোই প্রশ্ন তোলা হয়নি। ড্রেসিং রুম থেকে খেলার মাঠ সব জায়গাতেই মাশরাফি শুধু নেতাই নন, তিনি একই সঙ্গে বড় ভাই, বন্ধু ও অভিভাবক। তাই তো তাসকিনের নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি। এসব কারণেই তিনি সবার কাছেই প্রিয়পাত্র ও শ্রদ্ধাভাজন।

টেন্ডুলকার, লারা, ওয়াহ, গাভাস্কার ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকা, বড় আদর্শ। তাঁদের চেয়ে বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মুর্তজা কম কিসের! বাংলাদেশের উজ্জ্বল এ নক্ষত্র বহু মানুষের আদর্শ। তার আত্মবিশ্বাস, অনুপ্রেরণায় এখনো বহু ক্রিকেটার জাতীয় দলকে ‘সেবা’ দিয়ে যাচ্ছেন।

দুই পায়ে সাতটি অস্ত্রোপচারের পরও মাশরাফি দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন। নি:সন্দেহে ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম বোলার মাশরাফি, যিনি তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই হাজারো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও বল হাতে এখনো ২২ গজ মাতাচ্ছেন। এই থেকেই খেলার প্রতি, দেশের প্রতি তার টান এবং আবেগ অনুভব করা যায়। 


বাংলা ইনসাইডার/ডিআর

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭