ইনসাইড হেলথ

রক্তদানে কোনো ভয় নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/11/2019


Thumbnail

কোনো এক বন্ধুকে দেখলেন তার খুব কাছের কোনো মানুষের জন্য রক্ত চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলো। মানুষটি মুমূর্ষু, সময়মতো রক্ত না পেলে কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। বিস্তারিত পড়ে দেখলেন রোগীটির সঙ্গে আপনার রক্তের গ্রুপটা মিলে গেছে। ভাবতে শুরু করলেন, অবস্থা যখন এতোটাই জটিল, তখন তো কিছু একটা করাই দরকার। কিন্তু আপনি কখনো রক্ত দেননি। সূঁচ দেখলেও আপনার ভয় করে। আর রক্ত দিলে অজ্ঞান হয়ে যাবো, শরীর ভেঙে পড়বে, অসুখ করবে- মনের মধ্যে এসব ধারণা তো রয়েছেই।

আসলে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। রক্ত দিলে আপনার আদতে কোনো ক্ষতি তো হয়ই না, বরং উপকারই হয়। খোঁজ নিয়েই দেখুন, দেশের তরুণ সমাজ নিয়মিত নিজের চেষ্টায় বা কোনো সংগঠনের মাধ্যমে রক্তদান করছে। এটাই স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে রক্তদান। এতে তার কোনো উদ্দেশ্য নেই। উদ্দেশ্য একটাই, আরেকটি মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো। আজ জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস উপলক্ষ্যে আপনাদের জন্য থাকছে রক্তদান নিয়ে বিশেষ কিছু আলোচনা-

রক্ত দিলে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় কি?

রক্ত দিলে কোনো শারীরিক অসুবিধা হয় না, কারণ যেই রক্তটুকু ৪ মাস পর নষ্ট হবার কথা ছিল, তার অল্প অংশ (৩৮০মিলিলিলিটার) বের করে নেওয়া হয়। তবে যেই প্রক্রিয়া সাধারণভাবে হওয়ার কথা ছিল তা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিয়ে নেওয়া হয় রক্তদানের সময়। আর এ কারণেই মাথা ঘুরতে পারে। তবে সেটি অল্প বিশ্রাম আর পানি খেলেই ১০-১৫ মিনিটে ঠিক হয়ে যায়।

কারা কখন দিতে পারবে রক্ত

স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে সমাজে যেসব ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তার একটি নিরামিষাশীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারেন না। কিন্তু এই তথ্যটি পুরোপুরি সত্য নয়। মূলত নিরামিষাশীদের রক্তে আয়রনের মাত্রা কম থাকে বলেই অনেক সময় চিকিত্সকরা তাদের রক্তদানের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেন। সাধারণত মনে করা হয়, নিরামিষাশীদের খাদ্যে আয়রন কম থাকে। কিন্তু যদি ওই ব্যক্তি নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে তার রক্তে আয়রন কম থাকার কোনো ঝুঁকি থাকে না। রক্তদাতার রক্তে আয়রন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকলে রক্তদানে কোনো বাধা নেই। এই কারণে অনেক দেশে রক্তদানের আগে রক্তদাতার রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করে দেখা হয়। যদি দেখা যায় রক্তদাতার রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকে অর্থাত্ অ্যানিমিয়ায় ভুগে তাহলে তাকে রক্তদান থেকে বিরত রাখা হয়। এসব সমস্যা না থাকলে অন্য আট দশজনের মতো তিনিও রক্ত দিতে পারেন।

অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বা, শিশু বা বয়োবৃদ্ধ হলে রক্তদানে নিরুত্সাহিত করা হয়। যারা এইচআইভি পজিটিভ (এইডস আক্রান্ত), হেপাটাইটিস, সিফিলিস, টিবি এবং রক্তবাহিত আরও কিছু রোগে আক্রান্ত তারা রক্তদান করতে পারেন না। ঠাণ্ডা, সর্দিজ্বর, খুশখুশে কাশি, পেট খারাপ থাকলেও রক্তদান করতে পারেন না। যে কোনো অসুখ থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার ১৪ দিন পর সাধারণত রক্তদান করতে দেওয়া হয়। কেউ যদি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন তাহলে কোর্স শেষ হওয়ার সাত দিন পর রক্ত দেওয়া যায়। অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে একেক দেশে একেক রকম নিয়ম রয়েছে।

অন্তঃসত্ত্বা কিংবা প্রসূতি হলে, শিশুকে স্তন্যদান করলে কিংবা অ্যাবোরশন হলে, রক্তে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রক্তদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিয়মিত রক্তদানকারীদের কোনো সর্বোচ্চ বয়সসীমা নেই। কোনো কোনো দেশে এটি ৬০-৭০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সাধারণত ১৮ বছরের কম, ওজন ৪৫ কেজির নিচে, শরীরে রক্তশূন্যতা এর উপস্থিতি থাকলে রক্ত দেওয়া সম্ভব হয় না।

রক্তদানের ৬ মাস আগে বড় ধরনের কোনো অপারেশন, ম্যলেরিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড হয়ে থাকলেও রক্তদান করা সম্ভব হয় না। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগীরাও রক্ত দিতে পারে না। এছাড়া কোনো ভ্যাক্সিন চলাকালেও রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হয়।

কেন দেবেন রক্ত

১. রক্তদানে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। কেননা একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তের মূল উপাদান পানি, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়ে একেবারে স্বাভাবিকভাবেই।

২. রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়, ঘাটতি পূরণ হয়।

৩. বছরে তিনবার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়ায়।

৪. নিয়মিত রক্তদানকারীর হার্ট ও লিভার ভালো থাকে।

৫. স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় শরীরে অন্য বড় কোনো রোগ আছে কি না। যেমন—হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।

৬. রক্তদান অনেকক্ষেত্রে ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

৭. রক্তে কোলস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে।

৮. শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে বলে Hemochromatosis। নিয়মিত রক্তদান এই রোগ প্রতিরোধ করে।

৯. স্থূলদেহী মানুষের ওজন কমাতে রক্তদান সহায়ক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭