কালার ইনসাইড

‘ভালো কথা জোর করে শোনাতে হয়না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/11/2019


Thumbnail

তাহসান রহমান খান। ঠিক এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকির ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন। আগামী বছরের শুরুতেই শুটিং শুরু। সমসাময়িক আরো অনেক বিষয় নিয়ে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন বাংলা ইনসাইডারের। 

বাংলা ইনসাইডার: কেমন চলছে জীবন?

তাহসান রহমান খান: জীবনটা আশেপাশের বন্ধুবান্ধবের  সঙ্গেও উপভোগ করা যায়। আবার একাও উপভোগ করা যায়। আমি দ্বিতীয় পক্ষে। একা থাকতেই একটু বেশি পছন্দ করি। শিল্পীদের জীবন কিন্তু অনেকটা যাযাবরের মত। বিশেষ করে যারা কনসার্ট করে বেড়ায় শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে ঘরের বাইরে যায়। তারা ঘরে কতক্ষণই বা থাকেন। আমার জীবনটাও এর ব্যতিক্রম নয়। তার সঙ্গে আছে ঘুরে বেড়ানোর শখ। পৃথিবীর অনেক অনেক সুন্দর শহর ঘুড়েছি। তারপরও বাসায় আসি। সেখানে নিজের মত করে সময়টা কাটাই।

আপনার বাসায় অনেক সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। এটা কি শুধুই শখের বশে?

বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত ও পছন্দের শিল্পীদের আঁকা ছবি আছে আমার দেয়ালে। আমি বসে থাকলে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি সবসময়ই চাই আমার চোখের সামনে যেন শিল্পকর্ম থাকে। আমি নিজেকে শিল্পী ভাবি এবং আমার জীবনের উদ্দেশ্যই শিল্প চর্চা করে জীবনটা পাড় করে দেওয়া। আমার শিল্প যেন আমার মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে। এ কারণে অন্যের শিল্পকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। আর যে শিল্পটার প্রতি আমার কোন দখল নেই সেটার প্রতি আরো বেশি।’

চড়ুই পাখি নাকি আপনার ভীষণ প্রিয়?

চড়ুই পাখিকে ‘লাকি’ পাখি মনে করি। আমি মনে করি চড়ুই পাখি যেদিন দেখি সেদিনটা আমার ভালো যায়। এটা কুসংস্কার হতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি। আর অনেকগুলো পাখির কলতান দেখলেই আমি তৃপ্তি পাই।

একা থাকতে কেন ভালো লাগে?

পৃথিবীতে আমরা সবাই একা। আমি মনে করি কেউ একাকিত্বটাকে উপভোগ করতে পারছে। আমরা যারা লাকি তারা উপভোগ করতে পারছি। আবার অনেকে সেটা পারে না। তবে আমি লাকি যে আমি পারি।

বর্তমানে সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কে?

সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু পিয়ানো। সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো হয় তার সঙ্গে। অনেক বছর ধরে মানুষ কিছু না কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। সেটা যখন পেয়ে যায়। তখন প্রশান্তিটা আসলেই অন্যরকম। এবি ব্রান্ড পিয়ানোটা কেনার জন্য আমার অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। একে তো বেশ ব্যায়বহুল আর দেশে বিক্রীও হয় না। অর্ডার করে আনাতে হয়। সময় লাগে অনেক।  সব বাসায় রাখাও যায় না। ব্লাকের ফার্স্ট অ্যালবাম রিলিজের পরে একটা পিয়ানো কিনেছিলাম ইয়ামাহা। সে সময় থেকে একটা স্বপ্ন ছিল। এখন বাসায় ঢুকে যখন দেখি আমার এ পিয়ানো বেশ ভালোই লাগে।

শিক্ষকতা করার ইচ্ছে আবার?

সর্বশেষ দুই বছর শিক্ষকতা জগত থেকে বিরতীতে আছি। বিনোদন জগতেই এখন ফুলটাইম। তার মানে এই নয় যে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছি। এখনো সময় পেলে বই পড়ি। একদম একােডেমিক বই কিন্তু। ইচ্ছে আছে আবারো শিক্ষকতা করার।

শততম কাজ করে ফেললেন…

আমি দেখতাম, ভক্তরা আমার কাছে গানের সংখ্যা হিসাব করে পাঠাত। কিছুদিন আগে এক ভক্ত নাটকের তালিকা করে পাঠায়। দেখলাম, ৯৭টি নাটকের তালিকা। এরপর বিষয়টি আমাকে ভাবায়। কাছের পরিচালক ও একজন প্রযোজক শততম নাটক নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করলেন। নানা ধাপ পেরিয়ে আমরা এই কাজ করি। তাই তো নাটকের শুটিং শুরুর আগে আমরা কেকও কাটি।

অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে?

একটু পেছনে ফিরে তাকালে ২০০৪ সালে আফসানা মিমি অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। শুরুতে অনাগ্রহী হলেও গল্প পড়ার পর মনে হয়, নাটকটিতে অভিনয় করা যায়। ছোটবেলায় স্কুলে যখন পড়তাম, আজাদ আবুল কালাম ভাইয়ের কাছে অভিনয়ের কর্মশালা করেছিলাম। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টুকটাক অভিনয় করেছি। জয়া আহসানের মতো অভিনয়শিল্পীর বিপরীতে অভিনয় করব, এটা অবশ্য তখনো ভাবিনি। আর এই নাটকে আমার একটি সংলাপ ছিল, “হ্যালো আমি তাহসান, এ পাড়াতে থাকি।” অফবিট নাটকটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল, কয়েক বছর ধরে এই সংলাপ অনেকের মুখে মুখে শুনেছি।’

জীবনের ২৫তম নাটকের কোন স্মৃতিময় গল্প আছে?

২৫তম নাটকের নাম নীলপরী নীলাঞ্জনা, সহশিল্পী মম। শুটিংয়ের সময় একটি লাল শার্ট পরাকে কেন্দ্র করে পরিচালকের সঙ্গে দর-কষাকষি হয়। আমি কখনো লাল শার্ট পরি না। এ নিয়ে আমার একরকম অ্যালার্জি আছে। কিন্তু পরিচালকের ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে লাল শার্ট পরেছি এবং প্রচারের পর টের পেয়েছি কেন লাল শার্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই নাটক প্রচারের পর তাঁর চরিত্রটি নিয়ে কয়েক হাজার ফেসবুক আইডি খোলেন ভক্তরা।

৫০ তম নাটক করার সময়কার কোন স্মৃতি আছে?

শাফায়েত মনসুর রানা পরিচালিত ‘হাতটা বাড়িয়ে দাও না’ আমার অভিনীত ৫০তম নাটক। এই নাটকে অভিনয়ের সময় জনকে অনেক পচাইছিলাম। কারণ, আমার ব্যান্ড ছাড়ার পেছনে অন্যতম একটা কারণ জন। সে আমাকে শর্ত দিয়েছিল, নাটক করতে পারবা না, মডেলিং করতে পারবা না। অথচ পরে সে নিজে নাটকে অভিনয় শুরু করে দিল, ব্যান্ডটাও ছেড়ে দিল।

‘বাড়ি ফেরা’ ৭৫তম নাটক। বিপরীতে অভিনয় করেন তানজিন তিশা…

রোমান্টিক নাটক। নাটকটিরে গল্পটা বেশ ইন্টেরেস্টিং। আর তানজিন তিশার সঙ্গে কয়েকটা কাজ হবে হবে বলেও হয়নি। অবশেষে তার সঙ্গে প্রথম কাজ।

সর্বশেষ কি নাটকে অভিনয় করলেন?

শততম নাটকটি ছাড়াও সাগর জাহানের ‘মেঘ মিলন’, তপু খানের ‘শেষ ভালোবাসা’ প্রচার হয়েছে।

গানের খবর কী?

শততম নাটকে একটি গান পাওয়া যাবে। মালার সঙ্গে ‘আনমনে’ নামে একটি গানের ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। এটা নিয়ে একটু বলতে হবে, আপনারা যদি একটু পাশ্চাত্যের মিউজিক ভিডিও দেখেন, দেখতে পাবেন কোনও স্টোরি থাকে না। শুধু ফিল থাকে, কালারস থাকে, ইমোশন থাকে। আমার মনে হয় আমাদের এই গানটি ঠিক সেরকম কিছুই হয়েছে।

আপনার মিউজিক ভিডিও রিলিজ পেয়েছে সম্প্রতি সেটা নিয়ে বেশ আগ্রহী মনে হচ্ছে আপনাকে?

মিউজিক ভিডিও রিলিজ পেয়েছে বলবো না, আমি বলবো গান রিলিজ পেয়েছে। এখন গান মুক্তি পেলেও তার সঙ্গে ভিডিও থাকলে আর গানের প্রসঙ্গ আসেই না। সংবাদ হয় মিউজিক ভিডিও নিয়ে। বেসিক্যালি প্রকাশ পায় গান, আর সে গানেরই ভিডিও হয়। এটা আমার সে গানেরই ভিডিও। প্রতি বছরই আমার গান বের হয়। এ বছর আরো একটা গান প্রকাশ করবো। ‘আনমনে’ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী কারণ নেই গান দিয়ে অসংখ্য দিন পরিশ্রম করেছি। গানটা লিখেছে মালা। শাকের রাজা আমার প্রিয় কম্পোজার তার সঙ্গে কাজ করেছি এটা ভালো লেগেছে। তানিম রহমান অংশু বানিয়েছেন। সবমিলিয়ে অনেকগুলো প্রিয় মুখ এই গানের সাথে যুক্ত।

আপনার কাছ থেকে একটা ভালো খবর শুনতে চাই...

বছরের শেষটা আমার জন্য স্পেশাল হবে। এটা ভালো খবর। কারণ ওই সময় আমার ১০০ তম নাটক রিলিজ পাবে। আরেকটা খবর তো মানুষ ইতিমধ্যেই জেনে গেছে, আমি মোস্তফা সরয়ার ফারুকি ভাইয়ের সিনেমা করছি। এটা নানা দিক থেকে আমার কাছে স্পেশাল। শেষদিকে আরেকটা গান বেরোচ্ছে সেটা রিলিজ পাবে। গানটা হলো ‘কী হতো ভুলে গেলে।’ এই গানটার মজার একটা গল্প আছে। যেদিন আমি গানটা রেকর্ডিং করি সেদিন আমার ড্রাইভার ছিলেন। উনি পরে বললেন, ভাই এই গানটা আমাকে দেন। এটা আমি শুনি, গাড়িতে রাখি। কিছু গান এমনভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে যায় আমি ঠিক এক্সপেক্ট করি না। এই গানটা মনে হয় সেরকম একটা গান হতে পারে, যেসব গান অনেকদিন বেঁচে থাকতে পারে।

এ বছরটা চলে যাচ্ছে, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিকে গুলোকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

প্রতিটা বছর আমি শুরু করি সেই চিন্তা করে যে আমি আসলে কোন কাজটা করবো। আমি গান করবো, নাকি অভিনয় করবো নাকি লিখবো। কিন্তু ২০১৯ সালটা শুরু হয়েছিল অন্যরকম চিন্তা দিয়ে। আমি ভেবেছিলাম এ বছর আমি বড় পর্দায় ভালো একটা কাজ উপহার দেবো। গত ৭-৮ বছর অনেক ফিল্মের প্রস্তাব পেয়েছি। করার যে আগ্রহ ছিল না তা নয়। কিন্তু আমি যে চরিত্রতে নিজেকে প্রবেশ করতে পারবো, যেটা হৃদয়স্পর্শী গল্প হবে, পরিবার নিয়ে দেখার মতো হবে, তেমন ছবি করবো। আমি খুবই খুশি, যদি একদিনের মতো সিনেমায় আমি কাজ করেছি। স্টার সিনেপ্লেক্সে তিন মাসের মতো সিনেমাটি চলেছে। সারাদেশে অসংখ্য মানুষ ছবিটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই বছরের আর দুটো গল রয়েছে সেটা এখন পূরণের অপেক্ষায় রয়েছি।

‘বেইলি রোড` সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে এই শব্দযুগল, এই সড়কের নাম, আপনার একটি ভিডিও;  এ প্রসঙ্গে কিছু শোনার আগ্রহ আমাদের কিংবা পাঠকদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে, যদি বলতেন...

পৃথিবীটা এমনভাবে বদলে গেছে কখন কোন কথাটা বলি, আর কোন কথাটা কোথায় আকস্মিকভাবে টেনে আনা হচ্ছে তা বলা মুশকিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমার পুরাতন ইন্টারভিউগুলো ভাইরাল হচ্ছে। ট্যাগলাইনগুলো এমনভাবে দেওয়া হচ্ছে মানুষ ভাবছে এটা বুঝি এখনই দেওয়া হচ্ছে। আমি আসলে এমন কিছুই বলতে চাই না যাতে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় বা মিস কমিউনিকেশন তৈরি হয়। এটা ভাইরালের যুগ। অনেকে চেষ্টা করে ভাইরাল হতে, আমি চেষ্টা করি না। যদি ভাইরাল হয় তাহলে হলো, সেটা আমার চিন্তা করার বিষয় নয়। তেমনই সেটাও পুরাতন একটি ভিডিও।

ভাইরাল নিয়ে আপনার কোনো অনুযোগ?

আমি গান লিখি, কবিতা লিখি। আমি একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম। আসলে এই কবিটা মানুষকে শোনানো বা বলার ইচ্ছে ছিল। আমি গত বছরের ১৭ অক্টোবর আমার বার্থডের আগের দিন লিখেছিলাম, ভেবেছি পরেরদিন পোস্ট করবো। কিন্তু বাচ্চু ভাই মারা যাওয়ার পর সেটা প্রকাশ করা হয়নি। এই বছর ১৭ অক্টোবর সেটা যখন টাইমলাইনে আসলো, তখন আমি আবার পোস্ট করলাম। আমার ভালো লেগেছে যে মানুষ ভালো কথাও শোনে। আমরা বলি, নেগেটিভ হলেই ভাইরাল হয়। নেগেটিভ না করলে কাটতি আসে না। নেগেটিভ পাবলিসিটি অলরেডি স্ট্যাব্লিশড। আমার ভালো কথাগুলো তো মানুষ শুনেছে। জোর করে তো শোনাতে হয়নি। ভালো কথা যখন মানুষ শিখতে চায় তখন ভালো লাগে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭