ইনসাইড বাংলাদেশ

ভর্তি পরীক্ষা; রাজধানীর অভিজাত স্কুলগুলোতে এবার যে পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/11/2019


Thumbnail

সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তির আবেদন অনলাইনে পূরণ করতে হবে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর হবে খুবই সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে।

মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। সে যে শ্রেণীতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে শ্রেণীর উপযোগী কি না- তাই যাচাই করা হবে। সৃজনশীল বা বড় প্রশ্ন দিয়ে উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়নের সুযোগ থাকে না। সে জন্য এবার থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে সুস্পষ্ট আর উত্তর দিতে হবে আরো সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট এবং বস্তুনিষ্ঠ।

এমসিকিউয়ের মতো বা টিকচিহ্নের উত্তর হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক মান্নান বলেন, এমসিকিউ বা টিকচিহ্নের মতো নয়। তবে, ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত উত্তরে কিছু লিখতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষা শুধুমাত্র দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণীর জন্য। প্রথম শ্রেণিতে থাকছেনা ভর্তি পরীক্ষা। সেক্ষেত্রে সরকারী স্কুলগুলোর জন্য নির্দেশনা হলো, লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার। এমতাবস্তায় রাজধানীর বেসরকারী স্বনামধন্য মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে তাদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করবে? কোন প্রতিষ্ঠানে কতটি সিট? এ নিয়ে জানতে আমরা গিয়েছিলাম রাজধানীর কিছু স্বনামধন্য স্কুলে। 

হলিক্রস স্কুল-        

হলিক্রস স্কুলের অধ্যক্ষ সিস্টার রানী ক্যাথরিন গোমেজ বলেন, ‘প্রথম শ্রেণিতে সব মিলিয়ে আমাদের ১০০ সিট রয়েছে। বরাবরের মতোই আমরা লটারির মাধ্যমে ভর্তি করি, এবারও তাই করছি। তবে সকল আবেদনকারীরা লটারির সুযোগ পাবেনা। লটারির আগে একটি বেসিক টেস্ট, যেমন বাচ্চা নাম লিখতে পারে কিনা! এরকম কিছু টেস্ট নিয়ে যারা ক্যাপাবল হবে তারাই লটারির সুযোগ পাবে’।

তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নেইয়া একরকম নির্যাতনের সমান। তাছাড়া কোচিং বানিজ্য খানিকটা কমবে বলে আমি মনে করি।

ভিকারুননিসা স্কুল-

‘ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ফরম বিক্রি গত ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলেছে। ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ১২ নভেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করতে পেরেছে ভর্তীচ্ছুকরা। ভর্তি ফরমের জন্য ২০০ টাকা ও অনলাইন চার্জের জন্য পাঁচ টাকা মোট ২০৫ টাকা অনলাইন ব্যাংকিং রকেটের মাধ্যমে পাঠিয়ে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করেন’।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়া বলেন, ‘শিক্ষাজীবন শুরুর আগে মেধা যাচাইয়ের প্রশ্ন আসতে পারে না। ভর্তির পর লেখাপড়ার মধ্য দিয়েই একজন ছাত্র বা ছাত্রী মেধাবী হয়ে ওঠে। তাই লটারি সিস্টেমটায় ভালো’।

তিনি জানান, গতবারের মতো এবারও ভিকারুননিসা নূন স্কুলের চারটি শাখায় প্রায় ২ হাজার শূন্য আসন রয়েছে। শিগগিরই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভায় শূন্য আসন ঘোষণা করা হবে।

লটারি পদ্ধতিটি ভারত এবং ইংল্যান্ডের কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে চালু আছে। বাংলাদেশে রাজধানীর এসওএস হারমেন মেইনার এবং ওয়াইডব্লিউসিসহ কয়েকটি স্কুলে চালু আছে।

প্রথম থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা

নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবশ্যিকভাবে লটারির মাধমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি শূন্য আসনের সমান সংখ্যক অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রস্তুত রাখতে হবে। যমজ সন্তানের একজন আগে থেকে অধ্যায়নরত থাকলে ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।

দ্বিতীয়-অষ্টম শ্রেণির শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

নবম শ্রেণির ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের প্রস্তুত করা মেধাক্রম অনুসারে নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পর অবশিষ্ট শূন্য আসনে অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্ধারিত ভর্তি কমিটি বাছাই করতে হবে। গ্রুপ গঠন করবে প্রতিষ্ঠান।

কোটা সংরক্ষণ
ঢাকা মহানগরীতে সরকারি বিদ্যালয় এলাকায় ওই এলাকার ৪০ শতাংশ কোটা রেখে অবশিষ্ট ৬০ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসনের ১০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা সন্তানদের ছেলেমেয়ের জন্য ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধীদের জন্য ২ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আরও ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান, শিক্ষার্থীদের সুবিধা/অসুবিধা বিবেচনা করে পরীক্ষা কমিটি বিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন ক্লাস্টারে বিভক্ত করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা আবেদন ফরমে পছন্দক্রম উল্লেখ করে দেবে।

ভর্তি ফরম
ভর্তির ফরম বিদ্যালয়ের অফিসে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, ডিসি অফিস, বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। এবার ভর্তির আবেদন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭০ টাকা। সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত থেকে বেশি হবে না।

ভর্তিপরীক্ষার সময় ও মান বণ্টন
দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পূর্ণমান-৫০, এরমধ্যে বাংলা-১৫, ইংরেজি-১৫, গণিত-২০ নম্বর। ভর্তিপরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা। চতুর্থ-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পূর্ণমাণ-১০০। এরমধ্যে বাংলা-৩০, ইংরেজি-৩০, গণিত-৪০ এবং ভর্তিপরীক্ষার সময় ২ ঘণ্টা। নীতিমালায় ভর্তি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি স্কুলে আগামী ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা (দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী) ও ২৪ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণীর লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন বিকেলেই লটারির ফল প্রকাশ করতে হবে। ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ১৭টি সরকারি বিদ্যালয়ে (প্রথম শ্রেণী রয়েছে) ভর্তি লটারি আয়োজন করা হবে। তার মধ্যে প্রভাতি শাখায় সকাল ১০টায় ও দিবায় বেলা ২টায় লটারি অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এবার ঢাকা মহানগরের ৪১টি সরকারি বিদ্যালয়কে বরাবরের মতো ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ১৪টি বিদ্যালয়ে ১৮ ডিসেম্বর, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১৪টি ১৯ ডিসেম্বর ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৩টি ২০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭