ইনসাইড থট

প্লিজ প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/11/2019


Thumbnail

প্রায় এক মাস হতে চললো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বিজয়ের মাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকতে পারেনা বঙ্গবন্ধু কন্যা! দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করবার জন্য কেন বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ থাকবে? বুয়েট খোলা, কিন্তু ছাত্ররা ক্লাস করছে না।  আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্লাস করতে চায়, কিন্তু সেটিকে বন্ধ করে রেখেছেন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত উপাচার্য? কিন্তু কেন? 

নিজের গদি হারানোর ভয়ে ? নিজের দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ? নাকি আন্দোলনকারীদের দমন করবার জন্য ? নাকি অন্য কিছু? এসব প্রশ্নর উত্তর দেয়া কঠিন। কারণ এখানে কোনো একটি বিশেষ পক্ষ জড়িত নন।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়াতে সব চেয়ে আনন্দিত কে? চোখ বুঁজে উত্তর দেয়া যায়। আনন্দিত হলো দুর্নীতিবাজরা! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন যখন চলছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে তখন দেশে চলছিল দুর্নীতিবাজদেরকে পাকড়াও। দুর্নীতিবাজরা অনুমান করছিলো সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে যেতে পারে। আর পরিণামে একটি অলিখিত সামরিক শাসন এসে যেতে পারে দেশে। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন , তীর কোথা থেকে এলো , কেন এলো , এসব না ভেবে রোগীর সেবা আমাদের ব্রত।  কারণ রক্তক্ষরণে আহত তীরবিদ্ধ মানুষটির সেবা না দিলে মারা যাবে।  বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ হবে না, বরং, ভালো কাজ করবার মানসিকতা মানুষ হারিয়ে ফেলবে।  আর এবার হারলে হারবে বাংলাদেশ।  

কতদিন মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে? অনেকের আশংকা সরকারের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা একটি মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুর্নীতির দায় থেকে মুক্তি পেতে পারেন!  কিন্তু ৫ নভেম্বর ২০১৯ তারিখ সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত যে ন্যাক্কার জনক ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন তাঁর দায় থেকে তিনি মুক্তি পাবেন কি ? ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই একই ভাবে ছাত্রদলের নেতারা আক্রমণ করেছিল শিক্ষকদের উপর।  এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে ১১০ দিন অতিক্রম করেছিল।  এবং উপাচার্যকে সে সময়ে সরে যেতে হয়েছে। কারণ তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নায়ক হওয়ার জন্য।

এবার সেই একই অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে।  তিনি এর দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছেন কি ?

এখন মিডিয়ার যুগ। ঘটনার তথ্য প্রমান যেমন আছে তেমনি আক্রমণকারীদের বক্তব্য এবং বেনিফিশিয়ারি উপাচার্যের বক্তব্য রেকর্ড করা আছে। জনতার আদালতে যে বিচার, সে বিচারে রায় একটা হয়ে আছে।  তিনি বার বার ছাত্রদেরকে ব্যবহার করছেন নিজের স্বার্থেই সেটা প্রমাণিত। সে প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন ৫ নভেম্বরের ঘটনাকে নিন্দা না জানিয়ে প্রশংসা করে। তিনি দিনটিকে আনন্দের দিন বলেছেন।  তিনি দিনটিকে গণঅভ্যুর্থানের দিন বলেছেন। একটি টিভি চ্যানেল একাত্তরের সংযোগ অনুষ্ঠানে যা বলেছেন তা কি ভাবে অস্বীকার করবেন ?

তিনি একটি দুর্নীতির মহা পরিকল্পনা করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যান কে ঘিরে। জনগণের টাকায়  সারা ক্যাম্পাস জুড়ে তার নাম লিখিত থাকবে! তাই দ্বিতীয়বার উপাচার্য নিয়োগ পেয়ে প্রথমে ৫টি একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের সূচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন উজাড় করে! এরপর আর কোনো খবর নেই।  কিছুদিন যেতে না যেতে আমরা শুনলাম ৫টি হল হবে! সেজন্য জায়গা নির্বাচন।  সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জানলো একটি মহাপরিকল্পনা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগলো মনে।  আমাদের জন্য, আমাদের আগামী প্রজন্মর জন্য পরিকল্পনা অথচ আমরা জানিনা! টেকসই উন্নয়নের মূল সূত্র হলো সকল অংশীজন সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।  শুরু হলো আন্দোলন।  আন্দোলনে বিজয় অর্জিত হতে না হতে এলো চাঁদাবাজির অভিযোগ।  পুরো প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে জানা গেলো অনেক কথা। পত্রিকাগুলো নানা খবর দিতে শুরু করলো।  যেখানে যাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির প্রশ্ন সকলের কাছে যার কিছুই আমি জানিনা তখন।  যোগাযোগ করলাম সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের কাছে।  তাঁরা নিশ্চয়তা দিলেন সত্যতার। আন্দোলনে মিশে গেলাম।  কারণ তিনি এবার উপাচার্য হয়েছেন দুর্নীতির পথে।  তিনি উপর থেকে তদবির করে ২০১২ সালে প্যানেলে থাকতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু সিনেটররা রাজি হননি। ২০১৪ সালেও সিনেটররা রাজি ছিলেন না প্রথমে।  সাবেক উপাচার্যের জোরালো আবেদনে তিনি উপাচার্য হয়ে আসলেন। আর এসেই ৫ জন কর্মকর্তা এডহক এ নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাঁপিয়ে দিলেন! এর পর তিনি বেপরোয়া ! যা ইচ্ছা তাই করেন। গাছ কাটেন, চাকরি দেন, চাকরি খান, ঝুলিয়ে দেন! এবারকার আন্দোলনটা কেবল ওই হল নির্মাণের দুর্নীতি নয় সকল অনাচার , অবিচার এর বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র হীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন। 

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে যদি হয়ে থাকে তবে সেটা আর সম্ভব হবে না বলে আমার কাছে প্রতীয়মান।  কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতিবাজদেরকে তিনি স্বমূলে উৎখাত করবেন। 

দুর্নীতিবাজরা ষড়যন্ত্রে নেমেছে।  তারা বাজার ও দেশ অস্থিতিশীল করতে চাইছে। কিন্তু এবার জনতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে নেতা মান্য করেছে।  এবারের সংগ্রাম তাই দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়বার সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের সৈনিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা, শিক্ষকরা আন্দোলনকারী।বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে কিছুদিন দুর্নীতির মহাপরিকল্পনা করতে চাইলেও জনগণ রুখে দেবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম আপনি শুরু করেছেন তাকে সফল করতে , বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে  জিডিপি ১০% এ উন্নত করতে ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’’ ব্যানারে আমরা আপনার পাশে আছি এবং থাকবো। বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়েছেন রাজনৈতিক স্বাধীনতা।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে আমরা অর্জন করবো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাগ্রত জনতার কণ্ঠস্বর বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। ২০১৮ সালে তারাই আপনাকে নির্বাচিত করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার আশায়। আপনি তরুণদের আশার প্রতীক , তাঁদের সাহস ও শক্তি। আপনার কাছে তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র -শিক্ষক এর দাবি বিশ্ববিদ্যায়ের দ্বার খুলে দিয়ে আলোকিত বাংলাদেশ গড়বার জন্য জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হবার সুযোগ দিন। 

বিজয়ের মাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকতে পারেনা যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী।  যাঁরা ৫ নভেম্বর সন্ত্রাস করেছে তাঁদের ও তাঁদের সহযোগী উপাচার্যের বিচার করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের ডাক আপনি দিয়েছেন সেই আন্দোলন সফল করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকা প্রয়োজন। ১৯৭৫ সালে অসচেনতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ হয় নি। আমরা আপনার জাগ্রত সৈনিক।  আপনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সূচিত আন্দোলন ব্যর্থ করে দিতে পেঁয়াজ ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দুর্নীতিবাজরা সিন্ডিকেট গড়ছে। সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক আপনার পাশে দাঁড়াতে চায়।  তাই দ্রুত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে আপনি অবিলম্বে নির্দেশ দিবেন আশা করি। জাতির পিতার সোনারবাংলা গড়তে জাহাঙ্গীরনগর আপনাকে সোনার ছেলে উপহার দেবে ইনশাল্লাহ।

অধ্যাপক ডঃ ফরিদ আহমেদ , দর্শন বিভাগ , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭