ইনসাইড থট

ক্রসফায়ার; লন্ডনে হালাল, বাংলাদেশে হারাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/12/2019


Thumbnail

গতকাল শনিবার বিবিসিতে একটি অবাক করা খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেটি হচ্ছে মধ্য লন্ডনে শুক্রবার রাতে এক সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত দুইজন নিহত এবং আরো কয়েক জন আহত হয়েছেন। লন্ডন ব্রিজের উত্তরের অংশে একটি হলে চলতে থাকা এক অনুষ্ঠানে হামলার সূত্রপাত হয়। ছুরি নিয়ে কয়েক জন ব্যক্তির ওপর হামলার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই জনগণের সহায়তায় এবং পুলিশের গুলিতে সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হন।

পুলিশ নিশ্চিত করেছে তার নাম উসমান খান এবং তার বয়স ছিল ২৮। হামলাকারী সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে এর আগে কারাদণ্ড ভোগ করেছিলেন। পুলিশ তার গতিবিধির ওপর নজর রাখবে - এমন শর্তে একবছর আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। সে সেই ওয়াদা বা অঙ্গীকার রাখেনি, অপরাধে জড়িয়েছে, তাই উসমান খানকে বিলেতি পুলিশ মত নাটক সাজিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এক উসমান খানকে হত্যা করে বহু মানুষের অর্থাৎ বহু পরিবারকে রক্ষা করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। যেটা আমাদের দেশে হলে বলা হতো ক্রসফায়ার আর ভারতে হলে বলা হতো এনকাউন্টার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ১০ মাসে ৪৩৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। একজন বুদ্ধিজীবী বলেছেন, “একটা সভ্য সমাজে বিচারবহির্ভূত হত্যা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের পুলিশ-র‍্যাব যারা এটা করছে, তারা জেনে শুনেই এটা করছে। তাদেরকে এটা করতে বলা হচ্ছে।” তাহলে কী ব্রিটিশরা অসভ্য সমাজে বাস করেন! তা না হলে সেখানে কেন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো!

দেশের জনগণের জানমাল ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষা সরকারের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনে বা দেশের জনগণের জানমাল ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্রসফায়ারকে নিয়ে হয় তুমুল কথন বাণিজ্য, ছোড়া হয় শব্দ বোমা। সরকার আসলে আমাদের তথাকথিত ‘নন্দ ঘোষে’র অবস্থায় আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। কিন্তু যখন পশ্চিমা কোন দেশে মানে ইংল্যান্ড বা কানাডা কিংবা এমন উন্নত দেশে ক্রসফায়ার হয় তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের নেতার মুখে কুলুপ আঁটেন।

বাংলাদেশের মত অনেক দেশেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় জড়িত পক্ষগুলো মধ্যে থাকে বাদী, বিবাদী, সাক্ষী, আলামত, দেশের সংশ্লিষ্ট আইন, ডাক্তার, মামলার ধরণ বুঝে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, উকিল/ ব্যারিস্টার, জেলখানা, আদালতের নন- জুডিশিয়াল স্টাফ, বিভিন্ন পদমর্যাদার বিচারক। এর পরেও বিচারকগণের মেধা বা জ্ঞান, তাঁদের সততা, সদিচ্ছা, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, ইত্যাদিও বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। পক্ষগুলোর যে কোনো স্তরে একটু বিলম্ব মানে পুরো বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে বাধ্য।

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নৈতিকতা শিক্ষার আর পেশাদারদের জন্য পেশাগত নৈতিকতার শিক্ষা না থাকলেও আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ভালো। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মী খারাপ নন, সেখানেও ভালো মানুষ আছেন; আছেন সৎ, নীতিবান মানুষ। এই নীতি নৈতিকতা আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, কিন্তু নতুন প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেই শিক্ষা আমরা দিচ্ছি না। সব দেশে, সব যুগেই মানুষের মাঝে ভালো মন্দ ছিল, আছে। তবে উন্নত দেশে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নৈতিকতা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং পেশাগত কর্মক্ষেত্রে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে সেখানে মন্দ মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে,কিন্তু আমাদের দেশে বাড়ছে। এমতাবস্থায় প্রজাতন্ত্রের কিছু অসৎ কর্মী মাঝে মাঝে বেপরোয়া ভোগের আশায় মত্ত হয়ে পড়ে। আমরা সবাই জানি কোন ভয়ানক সন্ত্রাসীকে আদালত গ্রেপ্তারের আদেশ দেওয়ার পরেও বিচার প্রক্রিয়ার আদালতের আদেশ তামিল কাজে জড়িত প্রজাতন্ত্রের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মী মোস্ট ওয়ান্টেডকেও পলাতক দেখায়, যদিও তারা সবার সামনে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। ভয়ংকর মাদক কারবারি যখন গোটা জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় তখনো কৌশলে এমনভাবে প্রচার চালানো হয় যে, সব দোষ হয় রাজনীতিকদের। মুষ্টিমেয় কয়েকজন অসৎ মানুষের জন্য জনগণের নূন্যতম মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেও মাঝে মাঝে রাজনীতিকগন ব্যর্থ হন। যখন তাঁরা দেখেন যে, গোটা জাতিকে ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে, তখন প্রজাতন্ত্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কিছু চৌকস, সৎ কর্মীদের সহায়তায় ক্রসফায়ারের মত হাতিয়ার ব্যবহার করে। তবে এটা সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান নয়, কিন্তু এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলা অসম্ভব। ইউরোপ আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকে অন্তত সেই বিশ্বাস জন্ম নেয়।

অনেকে অভিযোগ করেন যে, উন্নত দেশগুলোর, আর দুনিয়াজোড়া সন্ত্রাসী দলগুলোর টাকায় চলে সারা দুনিয়ার মানবাধিকার সংগঠনের কার্যক্রম। তাদের অঙ্গুলি নির্দেশে চলে বিবৃতি বাণিজ্য। তাই জামায়াতে ইসলামীর মত মানবতাবিরোধী অর্থশালী নেতাদের ফাঁসি দিলেই কেবল বিবৃতি আসে, অন্যথায় নয়। মানে আমাদের দেশের প্রচলিত প্রবাদের মত, ‘গুরু তুমি যদি কর প্রেম সেটা হয় লীলা, গরীবে করলে প্রেম নষ্টামি খেলা’।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭