ইনসাইড থট

শেখ ফজলুল হক মনি: রাজনৈতিক যুগসন্ধিক্ষণের প্রতিকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/12/2019


Thumbnail

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি ও স্বাধীকার আন্দোলনের নক্ষত্র, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সৃজনশীল যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তথা মুজিব বাহিনীর অন্যতম প্রধান কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম শেখ নূরুল হক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বোন।

শেখ ফজলুল হক মনি ঢাকা নব কুমার ইনিস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ ফজলুল হক মনি কেবল রাজনীতি নয়, সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায়ও অবদান রাখেন। তার লেখা ‘অবাঞ্ছিতা’ উপন্যাস পাঠক সমাদৃত। এছাড়া তিনি দৈনিক বাংলার বাণী, ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বিনোদন ম্যাগাজিন ‘সিনেমা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই মনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর আবদুল মোনেম খানের কাছ থেকে সনদ গ্রহণে তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং সরকারের গণবিরোধী শিক্ষানীতির প্রতিবাদে সমাবর্তন বর্জন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ডিগ্রি প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তী সময়ে তিনি মামলায় জিতে ডিগ্রি ফিরে পান। ১৯৬৫ সালে তিনি পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং দেড় বছর কারাভোগ করেন। তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জে ও কৃতিত্ব ১৯৬৬ সালের ৭ জুনে ৬ দফার পক্ষে হরতাল সফল করে তোলা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকদের তিনি তখন সংগঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। ওই হরতাল সফল না হলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম পিছিয়ে যেত। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে এই অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। এসময় বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সময় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক।

শেখ মনি ছিলেন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের কর্মসূচি প্রণয়নের অন্যতম প্রণেতা। সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী শেখ মনি, সত্তরের নির্বাচনী কর্মসূচিতে অর্ন্তভুক্ত করেন, পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশকে ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন, ব্যাংক-বিমা ও ভারী শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য, পাট ও তুলা ব্যবসা জাতীয়করণ, পূর্ব পাকিস্তানের জায়গিরদারি, জমিদারি ও সর্দারি প্রথার উচ্ছেদ, ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির খাজনা মওকুফ, শ্রমিকদের ভারী শিল্পের শতকরা ২৫ ভাগ শেয়ার ও বাস্তুহারাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি। (স্মরণীয়-বরণীয়, ব্যক্তিত্ব, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়-পৃ:৪৬১)।

কবি আসাদ চৌধুরী শেখ মনি সম্পর্কে যা বলেছেন তাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই। বলেছেন, “ সেই একটা সময় ছিল ত্যাগ-ব্রতের রাজনীতি তাদের ঘিরে যারা জড়ো হতেন তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেম ছিল। রাজনীতি চর্চার জন্য শিক্ষা ও আদর্শ ছিল, চরিত্রে সংহতি ছিল। তারা দেশের মানুষকে ভোটার বা রাজনীতিকে ক্ষমতার সিঁড়িই শুধু ভাবতেন না, বড় করে দেখতেন” । আমাদের মনি সাহেব ছিলেন এই দলের মানুষ। মনি ভাইকে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।

দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের জন্য গোটা বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রাখেন শেখ ফজলুল হক মনি । তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে ১১ নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে যুব রাজনীতির সূচনা করেন। দুই বছরের মাথায় কংগ্রেসে শেখ মনি যুবলীগের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। শেখ ফজলুল হক মনি ব্যক্তি জীবনে ২ পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি শাহাদাৎ বরণ করেন। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ যতকাল টিকে থাকবে; ততদিনই ইতিহাসের পাতায় অম্লান, অক্ষয় থাকবে এই নামও। আজ যদি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ মনি ভাই বেঁচে থাকতেন তাহলে অনেক আগেই দেশ উন্নত হয়ে যেত। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ও অতি বিপ্লবীরা দেশ পরিচালনা করায় আজ ৫০ বছর পিছিয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসায় এবং তার দূরদর্শী নেতৃত্ব আজ বাংলাদেশ কে সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে উপস্থাপন করেছে। তবে এখনও ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সবসময় আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে এবং সংঘবদ্ধভাবে এদের বিষদাঁত ধ্বংস করতে হবে।

লেখকঃ ইকবাল মাহমুদ বাবলু
পিএইচডি গবেষক, বিইউপি

সাবেক প্রচার সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭