ইনসাইড বাংলাদেশ

বাজেট এবং ৭০ অনুচ্ছেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/06/2017


Thumbnail

রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ। নির্বাহী বিভাগ বা সরকার, আইনসভা বা সংসদ এবং বিচার বিভাগ। সংবিধান অনুসারে সংসদের কাছে জবাবদিহি থাকবে সরকার। তবে এসব কথা কেবল আইনেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবতা ভিন্ন।

বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেয়, সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) তাই টেবিল চাপড়ে সাড়া দিয়ে পাস করিয়ে আসেন। সংসদে তাঁদের উপস্থিতিতে কেবল কোরাম সংকটই মোকাবেলা করা হয়। আর সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা দেয়া সংবিধানের কারণেই। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেন অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারবেন না কিন্তু বাজেটে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সদস্য দলের প্রস্তাবিত বাজেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

চলতি বাজেট অধিবেশনে সংবিধানের এ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও করেছেন এমপি ও সাবেক মন্ত্রী। মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। গত সোমবার সংসদকে তিনি বলেন, বাজেট পাসে আমাদের (এমপি) কোনো ভূমিকা নেই। চিফ হুইপ যেদিকে হাত নাড়ান, আমরাও সেদিকে নাড়াই। এভাবে বাজেট পাস হলে বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে কিছুটা সংশোধন এনে বাজেটে যদি এমপিদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে অর্থমন্ত্রী এভাবে অনড় অবস্থানে থাকতে পারতেন না। এমপিদের কথা শুনতে হতো। জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৭০(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে’।

তবে সাংবিধানিক এমন বাধার পরও চলতি বাজেট অধিবেশনে সাধারণ মানুষের কথাই উচ্চারণ করছেন খোদ সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। গত কয়েকদিনে জাতীয় সংসদে একের পর এক নিজ দলের সংসদ সদস্যদের (এমপি) তোপের মুখে পড়ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে জন্য বাজেট উত্থাপনের পর থেকে ব্যাংক হিসাবের ওপর বাড়তি আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণা এবং ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করে আসছেন একাধিক মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

এসব বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম সংসদকে বলেন, আওয়ামী লীগ জনকল্যাণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের কষ্ট হয়, সেটা আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। তাই অর্থমন্ত্রীকে বলব- আবগারি শুল্ক যেটা দিয়েছেন, সেটা প্রত্যাহার করেন। এটা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এই আবগারি শুল্কের জন্য গোটা জাতি আওয়ামী লীগ সম্পর্কে খারাপ ধারণা নেবে এটা আমরা চাই না। সেলিম আরও বলেন, ‘আপনার কিছু কথাবার্তায় আমাদের সরকারকে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এই সংসদেই একদিন বলেছিলাম আপনি কথা কম বলেন। আপনার বয়স হয়ে গেছে, কখন কী বলে ফেলেন, হুঁশ থাকে না।’ অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন- বাজেটে কোনো অসংগতি থাকলে সেটা আমি দেখব। আর আপনি (অর্থমন্ত্রী) সিলেটে গিয়ে বললেন এক লাখ টাকা যার আছে, সে ধনী ও সম্পদশালী! আপনি হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় বলেছিলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না। আর এখন এক লাখ টাকা বেশি টাকা হয়ে গেল? অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব বাজেট পেশ করা। সংসদে ৩৫০ জন সদস্য ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না। এটা আপনি (অর্থমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার এক গুঁয়েমি বন্ধ করেন। কথা কম বলেন। আপনি আইএমএফের কথা শুনে সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদের হার কমিয়েছেন। এই আইএমএফ কোনো দিনই ভালো চায় না। তারা একবার বলেছিল কৃষিতে ভর্তুকি না দিতে। সেটা করলে কী হতো? তাছাড়া ঢালাওভাবে ভ্যাট আরোপেরও কড়া সমালোচনা করেন শেখ সেলিম।

এদিকে ব্যাংকের জন্য হাজার কোটি টাকা মূলধন বরাদ্দের তীব্র সমালোচনা করে মাহবুবউল আলম হানিফ সংসদকে বলেন, অর্থমন্ত্রী এই টাকা কেন দিলেন? কার টাকা দিলেন? যেখানে লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা নয়ছয় হয়েছে। তাতে ব্যাংকের মূলধনে টান পড়েছে। সেটা নিয়ে তদন্ত না করে উনি নতুন করে মূলধনের টাকা দিলেন। এটা হতে পারে না। হানিফ আবগারি শুল্ক কমানোর দাবির পাশাপাশি আরও তিনটি দাবি জানান। সেগুলো হল : অর্থবছর জুলাই-জুনের পরিবর্তে জানুয়ারি-ডিসেম্বর করা, আদালতের পিপি, জিপি, এপিপিদের বেতন বাড়ানো এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ভাতা ১৫ হাজার টাকা ও মেম্বারদের ১০ হাজার টাকা করা।

সাবেক আরেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাজেটে প্রস্তাবিত কর ও ভ্যাটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বাজেট নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। তাই ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত শুল্ক পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। গ্রামে সীমাহীন লোডশেডিং চলছে জানিয়ে সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, কিছু অন্ধকার এখনও আছে। অর্থমন্ত্রী এমন প্রকল্প নিয়েছেন, ইতিহাস এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, পানিতে রাজধানী ডুবে যায়। মানুষ প্রশ্ন তুলেছে- প্রধান দুই নগরীকেই অর্থমন্ত্রী জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারেন না। মেঘা প্রকল্পের চেয়ে এটাই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘দুঃসাহসী বাজেট’ উল্লেখ করার পাশাপাশি সোলার প্যানেল, তেল ও এলপিজির ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না বলেন, ব্যাংকে অনেক গরিব মাও তাদের শেষ সম্বল জমা রাখেন। এক লাখ টাকার ওপর আবগারি শুল্কারোপ উচিত হয়নি। গণহারে ভ্যাট আরোপ আগামী নির্বাচনে মাঠে প্রভাব পড়বে। দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এদের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না।

বাংলা ইনসাইডার/এমএএম




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭