ইনসাইড পলিটিক্স

পুশইন নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/12/2019


Thumbnail

বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে নাগরিকত্ব বিল এবং আসামে নাগরিকপঞ্চির পেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। যশোর ঝিনাইদহ অঞ্চল দিয়ে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। সীমান্তে বিজেপি যা প্রতিহত করছে।

নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২০ জন অনুপ্রবেশকারীকে বিজিবি আটক করেছে বলে সরকার সূত্রপ্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল বলছে, নাগরিকত্ব বিল এবং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আওয়ামী লীগ খুব ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে এবং মনে করছে যে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার চেয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করাটাই জরুরী। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তিন ধরণের কৌশল নিচ্ছে

প্রথমত, আওয়ামী লীগ কোনো অনুপ্রবেশকারীকে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেবে না। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন সুষ্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নাগরিক ছাড়া সীমান্ত দিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ রকম বক্তব্য দেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এই অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য নিদের্শনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ভারতের নাগরিকত্ব বিল এবং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেই ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে কথা বলবে। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই আশ্বস্থ করেছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এটা নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। যাতে বাংলাদেশের উপর অনুপ্রবেশের চাপ সৃষ্টি করা না হয়।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশ সরকার এই অনুপ্রবেশ এবং নাগরিকপঞ্জি নিয়ে মন্ত্রী এমপিদের দায়িত্বশীল কথাবার্তা, পারতপক্ষে এনিয়ে কথাবার্তা না বলার নির্দেশনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন ইস্যুতে মন্ত্রীরা এক একজন এক এক রকম কথা বলেন। এর ফলে অনেক সময়ই সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে শুধুমাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে কথা না বলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোন মন্ত্রী এমপি ভারতের নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে কোন বক্তব্য রাখছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছে ভারতের নাগরিকত্ব বিল এবং নাগরিকপঞ্জি বাংলাদেশের ওপর একাধিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।

প্রথমত, এরফলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা যেতে পারে তা হলো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে পারে। ভারত থেকে মুসলমানরা অনুপ্রবেশ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যে সম্প্রীতি ছিল সেই অবস্থায় বিগ্ন ঘটতে পারে। ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠী যারা বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা এটির সুযোগ নিতে পারে।

তৃতীয়ত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ ভারতের নাগরিকত্ব বিলের সুযোগ নিজেদেরকে নির্যাতিত বা নিপীড়িত আখ্যা দিয়ে ভারতের সহানুভূতি আদায়ের জন্য নাগরিকত্ব চাইতে পারে।

এরফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অবনতি হতে পারে। কারণ ভারতে নাগরিকত্ব পেতে হলে তাদের নির্যাতিত হতে হবে। সেজন্য তাদের মিথ্যে তথ্য দিতে হবে। কাজেই কেউ কেউ এরকম সুযোগ নিয়ে সরকারের সুনামহানির চেষ্টা করতে পারেন বলে সরকারের একটি নীতিনির্ধারক মহল মনে করছেন। এজন্য সরকার বুঝেশুনে ধীরস্থিরভাবে এই ব্যাপারটি মোকাবিলার পরিকল্পনা নিচ্ছে। কোন হটকারী পদক্ষেপ না নিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করতে চাচ্ছে যেখানে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কোন রকম বিরোধে না জড়ায় সেটা যেন নিশ্চিত হওয়া যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭