ইনসাইড আর্টিকেল

পাকিস্তান সবক্ষেত্রেই পরাজিত এখন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2019


Thumbnail

‘পাকিস্তানের উন্নয়ন যদি ঘটাতে চান, তাহলে সুইডেনকে না দেখে বাংলাদেশের দিকে তাকান। পাকিস্তানকে এক টুকরো বাংলাদেশ বানিয়ে দিন।’ ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে এই পরামর্শ দেন দেশটির উন্নয়নকর্মী জাইঘাম খান। শুরুতে তার কথা বিতর্কের ঝড় তোলে। কিন্তু দেশটির রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই প্রকাশ্যে বা চুপিসারে তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। খোদ ইমরান খানও এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। অথচ পাকিস্তান আজ কোথায়…’। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সূচক ও প্রতিবেদনের দিকে তাকালে ইমরানের এই আক্ষেপকে আর্তনাদ বলেই মনে হবে। 

ইউএনডিপির (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) ‘মানব উন্নয়ন সূচক-২০১৯’ এ পাকিস্তানের চেয়ে ১৭ ধাপ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর, পাকিস্তানের ৫৪ বছর। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর, পাকিস্তানের সেখানে মাত্র ৬৭ বছর।

শিশুমৃত্যুর হার বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৩২ জন। আর পাকিস্তানে দ্বিগুণেরও বেশি, ৭৪ জন। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। আর পাকিস্তানে মাত্র ৫৭ শতাংশ।

নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বেশি। বাংলাদেশে সংসদে যত আসন আছে, এর মধ্যে ২০ দশমিক ৩ শতাংশই নারী প্রতিনিধি। পাকিস্তানে তা ২০ শতাংশ। বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণ সমান। পাকিস্তানে এখানেও রয়েছে বড় বৈষম্য।

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের এই তুলনাটা যদি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মানদণ্ডে করা হয়, তাহলে পার্থক্যটা হবে আরও বিশাল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১২০ মার্কিন ডলার। আর পাকিস্তানের ছিল ১৮০ ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার, পাকিস্তানের ১ হাজার ৬৪১ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। আর পাকিস্তানের রপ্তানি এর অর্ধেকের কাছাকাছি, ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। অথচ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার এবং পাকিস্তানের রপ্তানি ছিল ৭৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৪৮ বছর আগে আমাদের রপ্তানি ছিল পাকিস্তানের অর্ধেকেরও কম। আর এখন আমাদের রপ্তানি পাকিস্তানের দেড়গুণেরও বেশি।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। একই সময় পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অর্ধেকেরও কম, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি। বর্তমানে ১ ডলারের জন্য গুনতে হয় ৮৪ টাকা। সেখানে ১ ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানী মুদ্রায় দিতে হয় ১৪০ রুপিরও বেশি। অথচ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের চিত্রটা ছিল একেবারেই উল্টো।

বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন এই দেশটাকে বলা হতো বটমলেস বাসকেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই বাংলাদেশ এখন সবকিছুতেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তান এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে যোজন যোজন ব্যাবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তান রুগ্ন মৃতপ্রায় রোগীর মতো ধুঁকছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে এসে বাংলাদেশ এখন আর পাকিস্তানকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে না। ব্যর্থ, মুমূর্ষু এই দেশটাকে বাংলাদেশ কেবলই করুণা করে।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭