ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

চাঞ্চল্যকর উন্নাও ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত বিজেপি নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/12/2019


Thumbnail

ভারতে চাঞ্চল্যকর উন্নাও ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির সাবেক বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। আজ সোমবার দিল্লির তিস হাজারি আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

সেঙ্গার উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার সাবেক বিধায়ক। বছর দুয়েক আগে প্রথম তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকারীর দাবি, ২০১৭ সালের ৪ জুন একটি চাকরির জন্য স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে উন্নাওয়ে সেঙ্গারের বাড়িতে গেলে ধর্ষিত হন তিনি। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। এরপর ১১ জুন সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠরা আবারও তাকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করে। ২০ জুন এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। কিশোরীর জবানবন্দির ভিত্তিতে শুভম সিং, নরেশ তিওয়ারি এবং ব্রিজেশ যাদব নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানা যায়, অভিযুক্ত শুভম সিংয়ের মা শশী সিং সব জেনেশুনেই কিশোরীকে সেঙ্গারের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

এরপর বহুবার কিশোরীর পরিবার বহুবার সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ সে অভিযোগ নেয়নি। শেষমেশ অভিযোগ নিলেও, অগ্রগতি হয়নি তদন্তের। এক পর্যায়ে কুলদীপ সেঙ্গারের দায়ের করা মিথ্যে মামলায় কিশোরীর বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অস্ত্র আইনে ভুয়ো অভিযোগ আনা হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশ হেফাজতে তার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হতো। বিচার পাওয়া দূরের কথা, বিচার চাওয়ার অপরাধেই মার খাচ্ছিল ধর্ষিতার বাবা।

কোনও ভাবেই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল ধর্ষিতা কিশোরী ও তার মা উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর বাড়িতে গিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তখনই বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে। কিন্তু এর পরের দিনই খবর মেলে যে, উন্নাও জেলের মধ্যেই মারা গেছেন ধর্ষিতার বাবা। ময়নাতদন্তে তার শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও, মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় সেপ্টিসেমিয়া অথবা রক্তে বিষক্রিয়া।

এরপর বিনীত, বাউয়া, শৈলু এবং সোনু নামের চার জনের বিরুদ্ধে ধর্ষিতার বাবাকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করা হয়। এই ৪ জনই সেঙ্গারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে এ মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপহরণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অস্ত্র আইন লঙ্ঘন-সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে চার্জ গঠন করা হয়।

শেষমেশ ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার চার সহকারীকেও।

এখানেই শেষ নয়। ধর্ষিতার পরিবার অভিযোগ তোলে, জেলে থেকেও নানা ভাবে তাদের গতিবিধির খবর পাচ্ছে সেঙ্গার। দেওয়া হচ্ছে হুমকিও। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয় পরিবারটিকে। এরমধ্যেই ঘটে যায় আরেকটি ঘটনা। ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই রায়বরেলি যাওয়ার পথে, গুরুবক্সগঞ্জের সড়কের উপর দুর্ঘটনার মুখে পড়েন ধর্ষিতা। সঙ্গে ছিলেন তার কাকিমা, বোন ও আইনজীবী। ধর্ষিতা এবং তার আইনজীবী আশঙ্কাজনক অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি হলেও, ঘটনাস্থলেই মারা যান তার কাকিমা এবং বোন।

পরে জানা যায়, এই দুর্ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগেই, ১২ জুলাই উন্নাওয়ের ধর্ষিতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সে চিঠি সে সময়ে পাননি বিচারপতি। দুর্ঘটনার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে চিঠির বিষয়ে জেনে পদক্ষেপ নেন তিনি। মামলাটি উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। 

তবে ধর্ষিতার আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তা প্রমাণ হয় এই পথ দুর্ঘটনার তদন্তের শুরুতেই। জানা যায়, যে ট্রাকটি ধর্ষিতার গাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল, সেটি রাস্তার উল্টো দিক থেকে আসছিল এবং ট্রাকের নম্বর প্লেটের ওপরে কালো রং লাগানো ছিল। ধর্ষিতা ও তার পরিবারের জন্য যে রক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল, তারাও সেদিন ছিলেন না।

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ধর্ষিতার অবস্থার অবনতি হলে তাকে উত্তরপ্রদেশ থেকে তাকে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে সে। কিন্তু মামলার বিচার যেন এগোচ্ছিলই না। অভিযুক্ত কুলদীপ সেঙ্গারের মামলা উঠছিলই না আদালতে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেল সেই নাবালিকা ধর্ষিতা। দোষী সাব্যস্ত হলেন বিজেপি নেতা কুলদীপ সেঙ্গার।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭