নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 30/12/2019
আমাদের রাষ্ট্রপতিরা কেমন হয়? ‘কাঁদতে মানা হাসতে মানা/ কথাটিও কইতে মানা।’ এই প্রজন্ম অবশ্য দেখছেন নতুন এক রাষ্ট্রপতিকে। এই প্রজন্ম তাঁর কথায় হাসে। তার কথায় নতুন করে সাহস পায়।
আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কৌতুকপ্রিয় মানুষ। জনপ্রিয় এই মানুষটি সহজ-সরল জীবনযাপনকারী একজন ভালোমানুষের প্রতিচ্ছবি। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রচুর কথা বলতে পারতেন। স্পিকার হওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে তাকে শ্রোতা হতে হয়েছে। স্পিকারের শাব্দিক অর্থ বক্তা। কিন্তু সংসদের স্পিকার কথা কমই বলেন; শোনেন সর্বক্ষণ। স্পিকার থেকে হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর ভাষায়, রাষ্ট্রপতির কথা বলার সুযোগ খুব কম। কিন্তু তিনি গুরু গাম্ভীর্যের তোয়াক্কা করেন না। বক্তৃতায় রসিকতা করেন, যা শ্রোতাদের আনন্দ দেয়। নিজেও হয়তো এই শক্ত কাটখোট্টা রাজনীতিতে কিছুটা তৃপ্তিলাভ করেন। স্বাধীনতার পর থেকে তিনি যতবার নির্বাচন করেছেন কখনো হারেননি।
তবে নতুনভাবে তিনি আলোচনায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার দেওয়া বক্তব্যে। চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতির সমাবর্তনে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং এ উপলক্ষে তিনি কিছু কথা বলার সুযোগ পান। এ সুযোগটি উপভোগ করতে গিয়ে তাঁর স্বভাবসুলভ আঞ্চলিক ভাষায় (মাটির টানে?) কৌতুকে মোড়া যেসব মূল্যবান ও সাহসী বক্তব্য তিনি রেখেছেন, তা একদিকে যেমন সত্যকথনকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি নৈতিক-সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে।
শুধু তাই নয়, তিনি সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাটাই বলেন রাষ্ট্রপতি হয়েছে। সেই বলায় কোন গাম্ভীর্য রাখেন না। তিনি অকপটে বলেছেন, ‘পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের একতা আছে। দুর্নীতিবাজদের একতা আছে, চোরাকারবারি-মুনাফাখোরদের একতা আছে। একতা নাই শুধু জনগণের মধ্যে।’
সত্যকথন তাঁর মুখেই শোভা পায়। সমাজ তথা রাজনীতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ধোঁকাবাজি আর চাপাবাজির মহোৎসবে আবদুল হামিদ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটি নৈতিকতার আন্দোলনের সূচনা করেছেন। তাঁর সে যোগ্যতা আছে, সৎসাহস আছে, অবস্থান আছে। এতে রাজনীতিকরা খেপে গেলে তাঁর কিছু আসে যায় না। এমনকি ভুয়া অপবাদ দিয়ে তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। কারণ মানুষ সেসব বিশ্বাস করবে না। সারাজীবনে সত্যপ্রিয়তার বিজয় মুকুটে আরেকটি অনন্য পালক তিনি লাগাতে পারেন নৈতিকতার আন্দোলনে পৌরোহিত্য করে।
রাষ্ট্রপতি সত্যই বলেছেন- পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। আমরা এক মাস পেঁয়াজ না কিনলে মজুদদাররা বাজারে দাম কমাতে বাধ্য হবে। তিনি শ্রোতা ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা নবীনরা পেঁয়াজ না খাওয়ার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পার। রাষ্ট্রপতি আরও বলেছেন, চিলে কান নেওয়ার মতো গুজব ছড়িয়ে লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে- অসুরদের এটাই পদ্ধতি। রাষ্ট্রপতি গুজব নস্যাতের আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ছাত্রদের বলেছেন, আমরা খাঁচায় বন্দি। তোমরা, মিডিয়া সবাই মিলে শিক্ষা দাও। রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করে বলেছেন, বড়দিনে ইউরোপ-আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম কমে, ঈদের সময় মধ্যপ্রাচ্যে জিনিসের মূল্য হ্রাস পায়। আর বাংলাদেশের অসুরেরা ঈদ-পার্বণ এলেই সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। বুয়েটের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ইঞ্জিনিয়াররা রাস্তা তৈরি করা সুপারভাইজ করেন। কিন্তু কন্ট্রাক্টরের বিল পরিশোধের ক`দিন পরেই রাস্তার আস্তর উঠে যায়। ব্রিজ তৈরি হয়, অল্পদিনেই ভেঙে যায়। বুয়েটের শিক্ষা কোথায় গেল?
রাষ্ট্রপতি একটা আন্দোলন গড়ে তুলছেন। এ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। বরং জনগণের সরকারকে মুক্ত করার জন্য, চারপাশের অসুরদের বিতাড়নের সামাজিক আন্দোলন। রাষ্ট্রপতির ভাষণে সে ইঙ্গিতই পাই। তাঁকে বেশি করে সামাজিক নৈতিকতার আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় চায় সাধারণ মানুষ। এ বছর তিনিই সর্বমহলে তাই সবচেয়ে আলোচিত মানুষ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭