ইনসাইড হেলথ

ঠাণ্ডায় শিশুদের রোগ- বালাই ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/12/2019


Thumbnail

পৌষের শুরু থেকেই এ বছর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই হঠাৎ করে জেঁকে বসেছে শীত। শুষ্ক ও দমকা বাতাসে এর প্রকোপ আরও বাড়ছে। সাধারণত শীতের এই সময়ে প্রায় সব বয়সের মানুষেরাই নানান সব রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মারাত্নক আকার ধারণ করে শিশুদের জন্য। কারণ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তুলনামূলকভাবে।

ডায়রিয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে তিন মাসের তানহাকে নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মা ফজিলা বেগম। তিনি বলেন, ‘এ সময় একটু আকটু রোগ বাচ্চাদের হয়ই। তাই বাসার কাছে ফার্মেসি দোকানদারের সাথে কথা বলে দুদিন ওষুধ খাওয়াইছিলাম। কিন্তু তিনদিনের দিন থেকে মেয়ের অবস্থা ভালোনা। তখন এখানে এনে ভর্তি করছি। ডাক্তার বলতেছে কি জানি একটা ভাইরাল ডায়রিয়া এটা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক ডা মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘নবজাতকদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া এবং জ্বর দেখা দিতে পারে। শীতকালে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ভাইরাল ডায়রিয়া হয় যাকে রোটা ডায়রিয়া বলে।’

তিনি বলেন, শীতের সময় বাতাস শুষ্ক থাকে সাথে ধুলোর পরিমাণও বেশি থাকে, যাতে করে অনেক বেশি জীবাণু থাকে। বিশেষ করে বাতাসে ভাইরাস বেশি থাকে যা শ্বাস নালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে ইনফুয়েঞ্জা ও মামসের মতো রোগের সৃষ্টি করে। তাছাড়া শিশুরা এ সময় ঠাণ্ডা পানি ও ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা।

এর কারণ হিসেবে অধ্যাপক বলেন, শিশুরা শীতের পোশাক ঠিক মতো পড়তে চায়না, কানটা হয়তো বাইরে থাকে, ঠাণ্ডা পানি খায়, যার ফলে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

শীতের মৌসুমে শিশুদের সাধারণত সর্দি, ঠাণ্ডা, কানের সমস্যা, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাচি-কাশি এবং ভাইরাস জনিত রোগ বেশি হয়।

এছাড়া যেসব রোগ সাধারণত হয়-

নিউমোনিয়া, গ্যাস্ট্রো এনটারাইটিস, অ্যাজমা, টনসিলাইটিস, প্যারোটাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি।

শীতের সময়েই বাচ্চাদের রোগের মাত্রা বেশি কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শীতের সময় এই রোগ গুলো বেশি হয় কারণ কিছু কিছু ভাইরাস আছে যা শুধু শীতের সময়েই মাল্টিপাই হয় বা আক্রমণ করে।

এর প্রতিকার হিসেবে বাবা-মায়ের সচেতনতাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন অধ্যাপক সহিদুল্লা। তিনি বলেন, বাবা-মাকে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার যেন কোনো রকম ভাবে ঠাণ্ডা না লাগে। প্রতিদিন গোসল না করিয়ে দু-তিনদিন পরপর গোসল করাতে হবে। বাসায় বড়দের কেউ অসুস্থ হলে বাচ্চার সামনে আসার আগে মাস্ক পড়তে হবে। বাচ্চাকে উষ্ণ গরম পানি খাওয়াতে হবে। ৬ মাসের বেশি হলে এজমার প্রতিষেধক দিতে হবে। বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বিশেষ করে বাচ্চার নাক-কান ভালো করে পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে করে শ্বাস নিতে বাচ্চার কষ্ট না হয়।

‘আমার বাচ্চা হঠাত করেই বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিছে। খাইনা কিন্তু সারাক্ষণ বমি করতে থাকে। আর একদম দুর্বল হয়ে যায়। সবসময় খেয়ালের উপর রাখি। তাও কিভাবে জানি কি হলো। পরে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসছি’ বললেন আফসারা হক।

শিশুদের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরণের কিছু লক্ষণ দেখলেই তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেন্টার ফর ওমেন এন্ড চাইল্ড হেলথ মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুন জানান, শিশুরা যদি খাওয়া কমিয়ে দেয়, প্রস্রাব কমে যায়, চর্মরোগ দেখা দেয়, ডায়রিয়া হলে যদি পানি শূণ্যতা দেখা দেয়, উচ্চমাত্রার জ্বর, আর সেটা যদি না কমে, শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে, অতিরিক্ত বমি করলে, যেকোনো কারণে খিচুনি হলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

প্রফেসর একইসাথে আরও একটি বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, ঠাণ্ডার সমস্যা হলে আগে মানুষ তেল ও রসুন দিয়ে গরম করে বাচ্চার শরীরে দিতো। এখন সেটি না দেয়ার জন্যই পরামর্শ দিব। সরিষার তেল ব্যবহার করলে শিশুদের ত্বকে ডার্মাটাইটিস বা বিভিন্ন ধরণের সংক্রমক দেখা দেয়। তাই এটা ব্যবহার না করাই বরং ভালো।

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭